৩১ মে ২০২৫, ১০:৩১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুপ্ত রাজনীতি চর্চা ছাত্ররাজনীতির জন্য হুমকি: গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের লোগো  © ফাইল ফটো

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুপ্ত রাজনীতি চর্চা, গুপ্ত এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রবণতা ছাত্ররাজনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। সংগঠনটি বলেছে, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রশিবিরের বর্বর উপস্থিতি এবং ছদ্মবেশী সংগঠনের মাধ্যমে দায় এড়ানোর প্রবণতা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি ও ছাত্রসমাজের জন্য হুমিকি স্বরূপ। শুক্রবার (৩০ মে) বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম কিংবা ছদ্মনামে পরিচালিত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা, উসকানি ও নারী ঘৃণার মতো বর্বর আচরণ বারবার সামনে আসছে। ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণের যে আকাঙ্ক্ষা ছাত্রসমাজ ধারণ করেছিল, সেই চেতনার সাথে শিবিরের বর্তমান অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের আদলে এই দায় এড়ানোর রাজনীতিকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ প্রত্যাখ্যান করে।

সংগঠনটি বলছে, আমরা দেখেছি পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ তাদের বিরোধী মতাদর্শের কোনো কর্মসূচি বা আন্দোলনের বিপরীতে নিজেদের কর্মসূচি দিয়ে সেখানে সংঘর্ষে জড়ানোসহ ভিন্নমত দমনে সহিংসতা ও উগ্র পন্থার আশ্রয় নিত। অনুরূপ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বর্তমান ছাত্রলীগের কায়দায় নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি প্রণয়ন তাদের নতুন করে ফ্যাসিবাদী ছাত্র রাজনীতির দিকের যাত্রার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিগত স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শাসনের আমলে ইসলামী ছাত্রশিবির নিজেই রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। সেই ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা বলি— মজলুম থেকে জালিমে পরিণত হওয়ার এই বিবর্তন শুধু দুঃখজনকই নয়, ছাত্রসমাজের প্রতি এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। 

আরও পড়ুন: ক্ষমতায় না আসতেই তারা নব্য ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছে’—শুক্রবারের তিন ঘটনা নিয়ে সাদিকের হুঁশিয়ারি

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিবির আজ ভিন্নমত গ্রহণে অক্ষম, তারা ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান দেখলেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে ক্যাম্পাসে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও গুপ্তচর-রাজনীতির চর্চা করছে, যা গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিপন্থি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের মিছিলের সাথে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা সৃষ্টিতে তাদের ভূমিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরোধী মতের কর্মসূচিতে ধারাবাহিক উসকানি ও বাধা প্রদান এবং চট্টগ্রামে এক ছাত্রীকে পা দিয়ে আঘাত করে ফেলে দেওয়ার ঘটনাটি— এসব কিছুই আদর্শগত বিচ্যুতি ও রাজনৈতিক বিপজ্জনক রূপান্তরকে স্পষ্ট করে তুলেছে।

সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই— গুপ্ত রাজনীতি চর্চা, গুপ্ত অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রবণতা ছাত্ররাজনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি। আমরা মনে করি, ছাত্ররাজনীতি হবে উন্মুক্ত, মতপ্রকাশ থাকবে মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক ভিন্নতা হবে সম্মানিত। ইসলামী ছাত্রশিবির কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তি যদি এসব মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে তাদের সেই অবস্থানের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে রুখে দাঁড়াতেই হবে।

এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে সংগঠনটি বলছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং শিক্ষাঙ্গনকে উগ্রবাদ ও সহিংসতা থেকে মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করতে হবে। সেইসাথে ছাত্রশিবিরকে তাদের এই গুপ্ত রাজনৈতিক চর্চা থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানাই। আমরা ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- এখনই সময়, ঐক্যবদ্ধভাবে ক্যাম্পাসজুড়ে সকল প্রকার উগ্রতা, গুপ্তচর রাজনীতি এবং গণতন্ত্রবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার।