‘আমি এখন স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পাওয়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘প্রায় ১৪ বছর পর আমি আজ ছাড়া পেলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। আল্লাহ যদি তৌফিক দেন, অবশ্যই বাকি জীবন আপনাদের সাথেই থাকব ইনশাআল্লাহ।’
বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। হাসপাতাল গেটেই তাকে অভ্যর্থনা জানান দলের নেতাকর্মীরা। এরপর শাহবাগ মোড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দিয়ে তিনি আবেগঘন এসব কথা বলেন।
দীর্ঘদিন পর জনসমক্ষে এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘একটি অন্যায় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সত্য চিরকাল চাপা থাকে না। আজ সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই মুক্তি শুধু আমার নয়, এটি একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল।’
আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমি দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় আদালতকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তবে এটা সত্য যে দেশে এত দিন ন্যায়বিচার ছিল না। বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের অনেক ভাইকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন : রাবিতে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’র সংবাদ সম্মেলন, আন্দোলনের ঘোষণা
আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা সঠিক তথ্য-উপাত্ত, দলিল ও যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন, এই মামলায় কোনো ভিত্তি ছিল না। আল্লাহর রহমতে আমি আজ মুক্ত, কিন্তু যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, তাদের আর ফেরানো যাবে না।’
৫ আগস্টের পতন প্রসঙ্গে এ টিএম আজহার বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই ৩৬ জুলাইয়ের মহাবিপ্লবীদের। যাদের রক্ত, ঘাম আর আন্দোলনের ফসল আজকের এই মুক্তি। তাদের কারণেই ৫ আগস্ট দেশের জনগণ একটি অত্যাচারী স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে। ১৫ বছর ধরে যারা রাজপথে নিজেদের রক্ত ঢেলে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, তাদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করি। এই রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। এই আত্মত্যাগই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আলোর পথ দেখাবে।’
ভবিষ্যতে জনগণের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, এই মুক্তির দায়িত্ব আমার ওপর আরও অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। আমি কথা দিচ্ছি, আল্লাহ যদি আমাকে তৌফিক দেন, তবে জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত জনগণের অধিকার, ন্যায়বিচার ও ইসলামি মূল্যবোধের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব। আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকব ইনশাআল্লাহ।’
নতুনভাবে পথচলা শুরু জানিয়ে এ টি এম আজহার বলেন, ‘আমরা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, করবও না। আমাদের আন্দোলন থেমে নেই, থামবেও না। আজ থেকে আবার নতুনভাবে পথচলা শুরু হলো।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা।