১৩ মে ২০২৫, ২২:৪০

আদর্শিকভাবে লড়াই করতে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রোপাগান্ডার পথকে বেছে নিয়েছেন: শিবির সভাপতি

কুরআন বিতরণ কর্মসূচির আলোচনা সভা  © টিডিসি ফটো

আমাদের সাথে আদর্শিকভাবে লড়াই করতে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রোপাগান্ডার পথকে বেছে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজকে ছাত্রশিবিরকে বিভিন্নভাবে গালি দেওয়া হয়। আমাদের সাথে আদর্শিকভাবে লড়াই করতে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রোপাগান্ডার পথকে বেছে নিয়েছেন। আমরা তো বলেছি আসুন আমাদের সাথে আদর্শিক প্রতিযোগিতা হোক। বাংলাদেশে ৫ই আগস্টের পরে যে পরিবেশ পেয়েছেন, আপনার আদর্শ দিয়ে আপনি আমাদের সাথে প্রতিযোগিতা করুন। ছাত্রসমাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তারা কার আদর্শ গ্রহণ করবে। 

আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকালে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস উপলক্ষে ঢাকা কলেজ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত কুরআন বিতরণ কর্মসূচির আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। 

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে সেই অতীত ইতিহাস রাজাকার ট্যাগিং, যে ট্যাগিং দিয়ে  আবু লাহাব,আবু জেহেলরা ধ্বংস হয়েছিল, যেটা দিয়ে ৫ আগস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন  হয়েছে, সে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এ প্রজন্মের যারা আমাদেরকে আদর্শিক জায়গা থেকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা ঠিক আগের ধারার রাজনীতি আবার শুরু করছে। আমরা বিনয়ের সাথে বলতে চাই, পৃথিবী কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে সব মিথ্যার জবাব একদিন আখিরাতে দিতে হবে।

ছাত্রশিবির নানা বাধার মধ্য দিয়ে পথ পরিক্রমা অতিক্রম করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বারবার থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে প্রোপাগান্ডা দিয়ে ছাত্রশিবিরকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রোপাগান্ডা শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হচ্ছেনা, এটা অতীতে ও হয়েছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (সঃ) তিনি যখন ওহী প্রাপ্ত হন নাই, যখন তিনি সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রচারণা চালান নাই তখন উনাকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ, ভালো মানুষ উপাধি দিয়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষটি যখন কুরআনের দাওয়াত দিয়েছেন , যখন সমাজ থেকে অন্যায় জুলুম উৎখাতের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তখন সেই শ্রেষ্ঠ মানুষকে তারা পাগল, জাদুকর বলে আখ্যায়িত করেছেন করতে দ্বিধাবোধ করেন নাই। পরিশেষে আল্লাহ রাসূল (সঃ) সাহায্য করেছেন , সেই ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করেছেন।

ব্রিটিশ ইতিহাস থেকে শুরু করে আজ অবধি ভারত বারবার মুসলিম বিদ্বেষ এবং কুরআন বিদ্বেষের নজির স্থাপন করে এসেছে। ভারতকে উদ্দেশ্যে করে জাহিদুল ইসলাম  বলেন,আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র আমাদের কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বয়ান হাজির করে। অথচ ব্রিটিশ আমলে তারা জমিদারি প্রথার নামে এই ভূখণ্ডের (বাংলাদেশ) মুসলিম কৃষকদের উপর শোষণ নিপীড়ন চালিয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি কর্ণাটকে হিজাবের উপর তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিভিন্ন সময়ে গুজরাট থেকে শুরু করে অনেকগুলো প্রদেশে মুসলিম এবং হিন্দুদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে মুসলিম নিধন ও মুসলিম হত্যা করেছে । তারা বাবরি মসজিদকে ভেঙ্গে সেখানে মন্দির তৈরি করেছে। সর্বশেষ তারা মুসলিম শরিয়ার ওয়াক্ফ আইনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন পাশ করেছে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র কুরআন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে বারবার অবস্থান নিয়ে বিদ্বেষ ছড়িয়ে এই ভূখণ্ডে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের সকল জাতি ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠীর মধ্যে অসাধারণ সম্প্রীতি বিরাজমান। এই সম্প্রীতিকে তারা বিভিন্ন সময়ে প্রোপাগান্ডা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্র করেছে । আমরা বলতে চায় নবি আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আজকের সময় পর্যন্ত যারাই কুরআন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তাদের পরিণতি ভয়াবহ হয়েছে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিবির সভাপতি বলেন, যদি আমরা এই সমাজ, রাষ্ট্র ও আল্লাহর এই জমিন থেকে জুলুম এবং নির্যাতনের মূলচ্ছেদ করতে চায় তাহলে আমাদের কুরআনকে উপলব্ধি করতে হবে। কুরআনের ধারণ করতে হবে, এবং কুরআনের মাধ্যমে সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে। গতবছর জুলাই-আগস্টে যারা জীবন দিলেন, শহীদ  হলেন এই জুলাই স্পিরিটের মূল তত্ত্বই হল কোনো বৈষম্য থাকবে না,কোনো জুলুম থাকবে না, কোনো অন্যায় থাকবে না, কেউ কারো উপরে কোনোকিছু জোর করে চাপিয়ে দিতে পারবে না সবাই মুক্তভাবে তার চিন্তার স্বাধীনতা, আদর্শের স্বাধীনতা সব কিছুর ভোগ করার সুযোগ থাকবে । কিন্তু আমরা দেখেছি ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরও ফ্যাসিবাদের শিকড় গুলো এ জমিনে রয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন ভাবে আবার ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা ছাত্রসমাজের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, জুলাইয়ে যারা জীবন দিয়েছে তাদের প্রতি, শহীদ পরিবারের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। শহীদ ভাইদের জীবন ও রক্তের দায় থেকে আমরা সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করবো ইনশাল্লাহ।

কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার কথা উল্লেখ করে শিবির সভাপতি আরও বলেন, যারা কুরআনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তাদের অবস্থা ভয়াবহ হয়েছে। এ কোরআন শুধু সওয়াবের জন্য আসে নি, আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করার জন্য এসেছে। রাসুল (সা.) এর সময় জাহেলি যুগে যারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিল তারাও এই কুরআনের ছোঁয়া পেয়ে তারা তাদের জীবনকে পরিবর্তন করেছে। আজকেও যদি আমরা চিন্তা করি এই সমাজে যত অপকর্ম হয় এসব জীবন পরিবর্তন কুরআনের আলোকেই সম্ভব। কুরআন পুরো মানবজাতির জন্য হেদায়েত। প্রথমত কুরআন  আমাদের পড়তে হবে। যে চিন্তার গভীরতায় যেতে পারবেন তিনি তার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারবেন। আজকে যারা পৃথিবীতে শান্তি, মানবতার কথা বলে তারাই। ফিলিস্তিনে নারী-শিশু সকলের ওপর হত্যা চালনো হচ্ছে। সমাজ থেকে রাষ্ট্র থেকে জুলুমের জুলাই আগস্টের পরও দেখছি তাদের শিকড় এখনো জমিনে রয়ে গেছে।

ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আব্দুর রহমান আফনানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজ শাখা সভাপতি মোস্তাকিম আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খ জামাল উদ্দিন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।