০৮ মার্চ ২০১৯, ১৪:১০

৬ ঘণ্টায় সাড়ে ১৬ লাখ ভোট, সম্ভব?

  © টিডিসি ফটো

দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১১ মার্চ। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে এ নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। বিশেষ করে হলে ভোটকেন্দ্র এবং মাত্র ছয় ঘন্টা ভোটদানের সময় নিয়ে উৎকন্ঠা বেশি। এই ছয় ঘণ্টায় প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী ৩৮টি পদের বিপরীতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের সবাই যাতে ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন প্রার্থীরা।

তবে এত অল্প সময়ে শিক্ষার্থীরা কিভাবে ভোট দেবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এজন্য একাধিক প্যানেল থেকে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেসব দাবি মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়ায় এ নিয়ে উৎকন্ঠা আরো বেড়েছে। তবে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে এ ধরণের দাবি জানানো হয়নি।

গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছিলেন, ‘ভোট গ্রহণের সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।’ অবশ্য ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে যতক্ষণ ভোটার থাকবে, ততক্ষণই ভোট গ্রহণ চলবে বলে জানিয়েছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এসএম মাহফুজুর রহমান।

জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটারকে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি এবং হল সংসদে ১৩টিসহ মোট ৩৮টি ভোট দিতে হবে। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২২৯ জন প্রার্থী রয়েছে। হল সংসদেও ২৫ থেকে ৩০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মাত্র ছয় ঘন্টায় শেষ করতে হবে। এসময়ের মধ্যে ৪৩ হাজার ২৫৬ শিক্ষার্থীর ৩৮টি করে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৮টি ভোট গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

প্রার্থীদের অভিযোগ, প্রতি ভোটারের গড়ে ৭-৮ মিনিট করে দেওয়া হলেও সব শিক্ষার্থী ভোট দিতে পারবেন না। এছাড়া অধিকাংশ হলের প্রয়োজন অনুযায়ী বুথ করার সক্ষমতা নেই। তবে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় দিলে সবার ভোট দেওয়ার সুযোগ হবে বলে তারা মনে করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ডাকসুর কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৭৩৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫ পদের বিপরীতে ২২৯ জন এবং হল সংসদে ২৩৪ পদের বিপরীতে ৫০৯ জন প্রার্থী হয়েছেন।

ডাকসু নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি শাহজাহান আলী সাজু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিবেশ পরিষদের অধিভূক্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে কয়েক দফা সভা করলেও এখনো পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও হলগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানও শুরু থেকেই ভোটের সময় বাড়ানোর দাবি করছেন। একটি বিশেষ সংগঠনকে সুবিধা পাইয়ে দিতে প্রাশসন এমন অবস্থানে রয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। বাম একাধিক ছাত্র সংগঠন ও কোটা আন্দোলনকারীদের প্যানেল থেকেও একই ধরণের অভিযোগ এসেছে।

স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এআরএম আসিফুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই ভোটের সময় বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। তবে প্রশাসন এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন দুইটা পর্যন্ত যারা লাইনে দাড়াবে তাদের সবার ভোট দেওয়া নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’ অন্তত সব শিক্ষার্থী ভোট দিতে পাবে সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, কাউকে সুবিধা দেওয়া নয়, সমগ্র প্রক্রিয়াকে কাঠামোর মধ্যে আনতেই বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এখন সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই, তবে কেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা থাকবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে উপস্থিত হলে ভোটার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে বলেও জানান তিনি।