ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের কোন্দল প্রকাশ্যে!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:৪০ PM , আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:২৪ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগের কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। গতকাল রবিবার প্যানেল ঘোষণার আগের দিনই নারী নেত্রীদের তোপের মুখে পড়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। আর আজ বিদ্রোহী প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। এছাড়া খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের নেতারা প্যানেলে স্থান না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল রবিবার ছাত্রলীগের ঘোষিত প্যানেল অনুযায়ী ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।
এর একদিন পর আজ সোমবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে বিদ্রোহী প্যানেলে ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগের আগের কমিটির কয়েকজন নেতা। ঘোষিত বিদ্রোহী প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন সোহান খান। তিনি আগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে (এজিএস) মো: রনি প্রার্থী হচ্ছেন। এরমধ্যে আমিনুল শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানা গেছে। প্যানেলের অন্যরাও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
বিদ্রোহী প্যানেল ঘোষণার সময় জিএস প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বুলবুল প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘যারা গত নয় মাসের মধ্যে ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি, তারা ডাকসুতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কী দেবে?’
আর বিদ্রোহী প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী আল মামুন বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্যানেলে যোগ্যদের মূল্যায়ন হয়নি। তাই আমরা মনে করছি, আমাদেরও নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। তাই আমরা প্যানেল ঘোষণা করছি। আমরাও নির্বাচন করবো।’
এদিকে ছাত্রলীগের ঘোষিত ডাকসুর মূল প্যানেলে খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের নেতাকর্মীদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে খুলনার কোন নেতাকর্মী প্যানেলে স্থান পায়নি বলে ওই অঞ্চলের নেতাকর্মীদের দাবি। এছাড়া সিলেট অঞ্চলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও এ ধরণের দাবি করেছেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশী ছাত্র খুলনা বিভাগের। অথচ ডাকসুর পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে খুলনা বিভাগের একটি নামও নাই।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা সম্পাদক মো: হাফিজুল ইসলাম হাফিজ লিখেছেন, ‘#দুঃখ_আমাদের_এই_ক্যাম্পাসে_আমরা_এতিম। আজ তুলনামূলকভাবে ক্যাম্পাসে খুলনা বিভাগের শিক্ষার্থী বেশি। রাজনৈতিক কামলার সংখ্যা খুলনা বিভাগের বেশি। মাঠে পরিশ্রমেও অন্য এলাকার থেকে কোনো অংশে কম নয়। পরিশ্রম, ক্লিন ইমেজ, সততার প্রশ্নে তুলনা করে দেখতে পারেন। এমনভাবে আমরাও একদিন বঞ্চিত হয়েছিলাম কিন্তু কাঁদতে পারিনি। কারণ সেদিন ছোট ভাইদের কন্না এবং চোখের জল দেখে নিজের চোখটা তার জল লুকিয়ে রেখেছিলো, মুখের কোনে এক ফালি কৃত্রিম হাসি ছিলো। রাতের গভীরে সবকিছু ভেবে চোখের কোনা গড়িয়ে হয়তবা দুফোটা জল বালিশ ভিজিয়ে ছিলো, যেটা কেউ দেখিনি। কিন্তু আজ কাছের ছোট ভাইগুলোর চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা। কষ্ট হয়, প্রচুর বেদনার কষ্ট যেটা কাওকে বুঝাতে পারিনা। হ্যাঁ আমাদের অনেক আছে, কিন্তু কিছুই নাই। খুলনা বিভাগের সাবেকদের বলছি, এই চোখের জল হবে আপনাদের জন্য অভিশাপ। কারণ সকলে বিশ্বাস করে আপনারা একসাথে সবাই চাইলে অনেক কিছু সম্ভব ছিলো। মনে রাখবেন, একসময় এই ক্যাম্পাসে আপনাদের প্রোটোকলে কুত্তা, বিড়ালও পিছে ভিড়বেনা।’
সিলেট অঞ্চলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বঞ্চিত হয়েছেন বলে মনে করছেন। তাদের দাবি, এ অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। কিন্তু হল সংসদে মাত্র একজন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
ছাত্রলীগের আগের কমিটির স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সিলেটের এত শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও ডাকসুতে কেউ প্রার্থী হতে পারছে না এটা দুঃখজনক। অন্তত একজন হলেও ডাকসুতে এ অঞ্চলের প্রার্থী থাকতে পারতো।’ ভবিষ্যতে সিলেট অঞ্চলের নেতাকর্মীদের ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এর আগে গত শনিবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল নির্ধারণ নিয়ে নেত্রীদের তোপের মুখে পড়েন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। সেসময় ডাকসু ও হল সংসদের নেত্রীদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। নেত্রীরা স্ব-স্ব হল সংসদের প্যানেলের শীর্ষ দুই পদে জায়গা পেতেও আশ্বাস চান ৷
মধুর ক্যান্টিন ও গোলঘরে এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হলেও বাইরে থেকে শোভনের অনুসারীরা পাল্টা স্লোগান দেন। এমনকি পরে নেত্রীদের সঙ্গে অন্য নেতা-কর্মীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ ওঠে। তবে এসব বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।