০৫ মে ২০২৫, ০১:২১

ছেলের চুরির অভিযোগে মাকে নাকে খত —বিএনপির সেই নেতাকে অব্যাহতি

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু  © সংগৃহীত

ফেনীতে ছেলের বিরুদ্ধে হাঁস ও কবুতর চুরির অভিযোগে দুই মাকে প্রকাশ্যে নাকেঃ খত দেওয়ানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সালিসে নেতৃত্ব দেওয়া ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (৪ মে) রাতে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে একইদিন সন্ধ্যায় সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুর রহমান বকুল ও সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দেলুর সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ মে রাতে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে এক সালিশি বৈঠকে নারীর প্রতি অবমাননাকর আচরণ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় দেলোয়ার হোসেন দেলুকে বিএনপির সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, "কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় দল নেবে না। এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।"

ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে মধ্যম মাথিয়ারা এলাকায় খালুর দোকান সংলগ্ন স্থানে। পরবর্তীতে রোববার (৪ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক লোকের সামনে দাঁড়িয়ে দুই নারী—সাজেদা বেগম ও জোহরা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একপর্যায়ে দেলোয়ার হোসেন দেলু হাতে লাঠি হাতে নিয়ে তাঁদের ওপর অশ্রাব্য ভাষায় চিৎকার করেন এবং ‘ছেলে চুরি করেছে’ অভিযোগ তুলে মায়েরাই দায় নিতে হবে বলে তাঁদের নাকেঃ খত দিতে বাধ্য করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মধ্যম মাথিয়ারা গ্রামের জাহাঙ্গীর সরকারের বাড়ি থেকে সম্প্রতি হাঁস ও কবুতর চুরির ঘটনা ঘটে। সন্দেহভাজন হিসেবে স্থানীয় দুই যুবক রাকিব ও বিজয়ের নাম উঠে আসে। এর জের ধরেই সালিশ বৈঠকের আয়োজন হয়। সেখানে রাকিবের গলায় ‘আমি চোর’ লেখা প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তাঁর মাকে নাকেঃ খত দিতে বাধ্য করা হয়। অভিযুক্ত বিজয় উপস্থিত না থাকায় তাকেও একইভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।

এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, “এ ঘটনায় কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা যেন ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমাদের আচরণ বা সিদ্ধান্তে ভুল থাকতে পারে। তাছাড়া ওই দুই মা নিজেরাই বলেছিলেন, ছেলেরা দোষ করলে তার দায় তাঁরা নেবেন।”

তিনি আরও দাবি করেন, সামনে নির্বাচন থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী মহল বিষয়টিকে ভিন্নভাবে প্রচার করছে। সালিশে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে ভাড়াটিয়াদের পরিচয় নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে ঘর ভাড়া দেওয়ার নির্দেশ দেন স্থানীয়দের।