ঝিনাইদহ-৪ আসন

কৌশলী প্রচারণায় ছাত্রদলের সাবেক নেতা ফিরোজ

নির্বাচনী গণসংযোগে ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।
নির্বাচনী গণসংযোগে ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।  © টিডিসি ফটো

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ ও সদর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৪ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে গণজোয়ার সৃষ্টি হলেও বিরুপ পরিস্থিতিতে এখন কৌশলী পদক্ষেপে এগোচ্ছেন তিনি। প্রার্থী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধানের শীষের প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের টার্গেট করে প্রতিনিয়ত হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ প্রশাসন মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের পক্ষে কাজ করছেন। প্রশাসনের উপর মহলে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার মিলছে না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আজও নির্বাচনী এলাকার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের সাকো বাজার এলাকায় স্থানীয় সরকারদলীয় ‘সন্ত্রাসী’ মজনু ও সাইফুলের নেতৃত্বে ধানের শীষের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, গুরুতর আহত হন তার দুই সমর্থক। ফিরোজের অভিযোগ, আজ বুধবার ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের প্রচারণা, নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা করছে। কোথাও আবার নিজেদের অফিসে হামলার করে ধানের শীষের কর্মীদের উপর দায় চাপাচ্ছে। এ অবস্থায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না। বরং কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইউনুস আলীর প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মামলা ও গ্রেফতার করছেন ধানের শীষের লোকদের। ফিরোজের অভিযোগ, ওসি ইউনুস আলী ‘আওয়ামী লীগ কর্মী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রতিকার পেতে ওসির বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে ফিরোজ জানান। 

এদিকে সব অভিযোগই বানোয়াট দাবি করে ওসি ইউনুস আলী দ্যা ডেইলী ক্যাম্পাসকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা গতকাল আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বচনী অফিসে আগুন দেয়। এ ঘটনায় মামলা হলে ৭ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছেন তিনি। আর জেলা প্রশাসকের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি জানেন না দাবি করে ওসি বলেন, তার বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন’ অসংখ্য অভিযোগ ধানের শীষের প্রার্থীর। এসব বিষয়ে একজন সহকারী জজের নেতৃত্বে জেলার নির্বচনী তদন্ত কমিটি আজ এলাকায় তদন্ত করেছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার অভিযোগের দায় নেবেন কিনা জানতে চাইলে ওসি ইউনুস আলী দাবি করেন, তিনি নির্দোষ।

বর্তমান পরিস্থিতি এলাকায় নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই উল্লেখ করে এমপি প্রার্থী ধানের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, কর্মী, সমর্থকদের হামলা ও গ্রেফতার এড়িয়ে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ভোটের দিন নির্বাচনের ন্যুনতম পরিবেশ পেলেও বিপুল ভোটে ধানের শীষ বিজয়ী হবে বলে তিনি আশাবাদী। বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় ধরনের গণসংযোগ না করে ছোট পরিসরে ভোটারদের দ্বারে ছুটছেন তিনি। প্রচারণার কৌশল হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার ও মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠাচ্ছেন ভোটরদের।

নির্বাচন নিয়ে আসনটির প্রবীণ ভোটার রহমত আলী বলেন, ২০১৪ সালে হয়েছিলো ভোটারবিহীন নির্বাচন, আর এবার হচ্ছে একতরফা। ভোট সুষ্ঠু হলে ধানের শীষ জিতবে, তবে নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে তার।

সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পরে একই বিদ্যাপিঠ থেকে করেছেন মার্কেটিংয়ে এম বি এ। নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। পরবর্তীতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এখন জাতীয়বাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দেশ ও দলের প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়েছেন বারবার। এরমধ্যে ১/১১ পরবর্তী সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। সেসময় ২০০৭ সালের ৮মার্চ তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে জরুরী অবস্থা ভেঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল, নেতৃত্বদান এবং ঐ বছরের আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। ছাত্র রাজনীতির পাঠ চুকিয়ে এখন জাতীয় রাজনীতি ও এলাকার মানুষের সেবায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের কান্ডারি তিনি। সন্ত্রাস ও মাদক নির্মুলের পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসা ও অবকাঠামোসহ নির্বাচনী এলাকার সার্বিক উন্নয়নকেই ব্রত করেছেন। এলাকার মানুষও তাকে গ্রহণ করেছেন স্বতস্ফূর্তভাবে।

কথা হয়, ঝিনাইদহ-৪ আসনের ভোটার নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ধানের শীষের প্রার্থী উচ্চশিক্ষিত, নম্র, ভদ্রলোক। ঢাকায় রাজনীতি করেন, আবার এলাকার মানুষের সঙ্গে রাখেন নিবিড় যোগাযোগ। তিনি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন হবে, প্রয়োজনে কাছে পাওয়া যাবে তাকে।

 


সর্বশেষ সংবাদ