২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৭

চবির আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠরা নির্বাচনী দায়িত্বে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অন্তত দশজন কর্মকর্তা-কর্মচারী  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁদের সবাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বা আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এদের অনেকে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় ভোটের প্রচারণাও করছেন। 

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আইনি বাধা রয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধির ১৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাঁদের দলীয় দায়িত্ব বা পরিচয় সরকারি দায়িত্ব পালনে প্রভাব ফেলবে না। 

গত ২০ ডিসেম্বর রাতে চবির সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, তিনি চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের মহাজোটের প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বক্তব্য রাখছেন। এর একদিন পর একই আসনের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ছবি  ফেসবুকে শেয়ার করেন।

এভাবে চট্টগ্রাম-৫ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া অন্তত দশজন সরাসরি দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যারা চবির বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সরাসরি দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত আছে অথচ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পেয়েছেন এমনদের আরো রয়েছেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবুল মনসুর সিকদার, সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রনি পাল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহসানুল হক, আওয়ামী লীগের কর্মী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য সরোয়ার হোসেন ওরফে খোকন, শুক্কুর মিয়া, আবদুল মান্নান ও গিয়াস উদ্দিন। এছাড়া ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পেয়েছেন হাটহাজারী উপজেলার  আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত মো. ইসমাইলের ছেলে মো. মুশফিক-উর-রহমান।

হাটহাজারী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, চবির সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হোসেন পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। এ বিষয়ে হোসেন বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি। আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেলে তা দলের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে পালন করব।’

চবির রেজিস্ট্রার অফিসের ব্যবস্থাপক ছাত্রলীগ নেতা আবুল মনসুর সিকদার চট্টগ্রাম-৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ভোটের দায়িত্বের বিষয়ে কেউ এখনো ফোন দেননি। তবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেলে সেখানে দলকে দেখার কোনো সুযোগ থাকবে না।’

কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রনি পাল দলের রাজনীতির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। রনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নাম কাটানোর চেষ্টা করছি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি, আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগের জন্য নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেটা এখনো চূড়ান্ত নয়। যদি কারও বিরুদ্ধে দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আসে, তাহলে বাদ দেওয়া হবে।