ক্ষমতায় এলে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করবে জাতীয় পার্টি

  © টিডিসি ফটো

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠন করতে পারলে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং মাধ্যমিক স্তরে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বাতিল করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। আসন্ন  নির্বাচনের ইশতেহারে দলটি এই প্রতিশ্রুতি দেয়।  অসুস্থ প্রতিযোগিতা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে শিশুদের মানসিক বিকাশ বান্ধব শিক্ষার প্রচলন করতে ইশতেহারে এ বিষয়টি অন্তুর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে। ইশতেহারে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিক্ষা খাতকে সংস্কারের মাধ্যমে বিশ্বমানের করে তুলতে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। 

গত শুক্রবার জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্রের বিকাশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার’ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৮ দফা অঙ্গিকার সম্বলিত ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।  অসুস্থতার কারণে বিদেশ থাকায় এরশাদের বিশেষ সহকারী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ইশতেহার ঘোষণা করেন।  এতে শিক্ষা পদ্ধতির সংশোধনের জন্য বেশ কয়েকটি অঙ্গিকার তুলে ধরা হয়।  যার প্রথমেই পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে পঞ্চম শ্রেণীর পিইসি এবং অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি পরীক্ষা বাদ দেয়ার কথা বলা হয়।  মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট তথা এসএসসি পরীক্ষাকে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয় এই ইশতেহারে। 

২০০৯ এবং ২০১০ সালে যথাক্রমে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা চালু হয়।  এরপর থেকেই বিভিন্ন মহলে এটি ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরীক্ষাগুলো জ্ঞানভিত্তিক প্রজন্ম গড়ার বদলে একটি পরীক্ষা নির্ভর প্রজন্ম গড়ে তুলছে।  এসব পরীক্ষা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়া পরীক্ষার অতিরিক্ত চাপের কারণে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

জানা যায়, গাইড কোচিং নির্ভর এই শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে  ২০১৬ সালে বিভিন্ন বাম সংগঠন আন্দোলন এবং সচেতন মহল আন্দোলন এবং প্রতিবাদ জানায়।  এই বছরই গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার পিইসি পরীক্ষা বাতিল করার জানালেও তা বাতিল করা হয়নি।  সরকারের বিভিন্ন মহলও এইসব পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে মত দেন।  চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষার কারণে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা দূর করতেই জাতীয় পার্টির ইশতেহারে এই পরীক্ষাগুলো বাতিলের অঙ্গিকার করা হয়েছে।

এছাড়াও ইশতেহারে শিক্ষা পদ্ধতি সংশােধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন নির্ভরতা কমানাে এবং কোচিং ব্যবসা বন্ধ করার আশ্বাস দেয়া হয়।  বলা হয় সুলভ মূল্যে শিক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করার কথা।   

ইশতেহারে আরো বলা হয়, নিবন্ধনকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন সরকারি শিক্ষকদের সমতুল্য করা হবে। এই কর্মসূচিও এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। স্নাতক শ্রেণী পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে। যতই নারী অধিকারের কথা বলা হােক না কেনাে- দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক এই নারী সমাজ এখনাে অধিকার। বঞ্চিত রয়েছে। তাদের সচেতন করে তুলতে এবং নারীদের জাতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে নারী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সেই লক্ষ্যে এক বছরের মধ্যে স্নাতক শ্রেণী পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। দেশে সুষমভাবে শিক্ষা বিস্তারের সুযােগ সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুরে একটি প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় এবং রংপুরে শিক্ষাবাের্ড স্থাপন করা হবে।

প্রসঙ্গত, আগামীকাল সোমবার অন্যতম প্রধান রাজনীতিক জোট ঐক্যফ্রন্ট তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে।  অন্যদিকে আগামী মঙ্গলবার দেশের প্রধান দুটি রাজনীতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।  এবারের নির্বাচনে রাজনীতিক দলগুলো তরুণদের ভোটকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।  তাদের কথা মাথায় রেখেই ইশতেহার প্রণয়ন করছে দলগুলো।  ফলে রাজনীতিক দলগুলোর ইশতেহারের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কারের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে।  


সর্বশেষ সংবাদ