০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:২১

অরাজনৈতিক ‘নিরপেক্ষ মঞ্চ’ গড়বে কোটা অান্দোলনকারীরা

  © ফাইল ফটো

দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অন্যান্য ছোট দলগুলোকে নিয়ে গড়ে তুলেছে জোট। ক্ষমতাসীনরা সব সময় দেন প্রতিশ্রুতি ও আশার ফুলঝুরি। আবার যারা বিরোধী দলে থাকেন তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বললেও ক্ষমতায় গেলে ঠিক একই কাজ করেন। এর বাইরে রাষ্ট্রে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থাকা দরকার যেখান থেকে সমস্ত অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা বা প্রতিবাদ করা যাবে। 

এ কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে গড়ে উঠা শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের নেতারা। 

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্যে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলে “বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ” নামের সংগঠন। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার চাকরিতে সব ধরণের কোটা ব্যবস্থা তোলে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের লক্ষ্যে গড়ে উঠা প্লাটফর্ম ও ফেসবুক গ্রুপ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে অনেকে মনে করলেও এবার সামাজিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সরব কোটা আন্দোলনের নেতারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনকারীরা তরুণদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে পেশ করবে “তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা”। 

কোটা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত “ঘ” ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়াসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও আন্দোলনে সরব ভূমিকা রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। কোটা সংস্কার গ্রুপ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে দেয়া, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার অভাবে ভর্তি হতে না পারা গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজও চলছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেসবুকে সরব নেতারা। কথা বলছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতেও। 

এমন পরিস্থিতিতে কোটা আন্দোলনকারীদের মনে কি কোন রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে। “দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস” এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন আন্দোলনকারীদের একাধিক নেতা। প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা না থাকলেও আগামী দিনে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করা ও অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলে যাওয়ার মত ব্যক্ত করেন তারা। রাজনৈতিক মেরুকরণের বাইরে গড়ে তুলতে চান নিরপেক্ষ শক্তি। 

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এ বিষয়ে “দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস”কে বলেন, এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সামাজিক কাজ করবো। আমরা তরুণদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া, বেকারত্ব ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে কথা বলব। এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে আমরা দুই রাজনৈতিক দলের মেরুকরণের বাইরে গিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনিয়ম, মানবাধিকার, গুম, খুন- এসব নিয়ে কথা বলব।” 

আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলন: ফাইল ছবি

 

কোটা আন্দোলনকারীদের আগামী দিনে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, “সারা দেশে যেসব শিক্ষার্থী আমাদের সাথে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এখন পর্যন্ত তাদের কেউ প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেননি। আর আমার ব্যক্তিগতভাবেও ইচ্ছে নাই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার।”

এ প্লাটফর্ম থেকে আগামী দিনে কি করতে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে নুরুল হক নুর  বলেন, “আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করেন মূলত তারা সবাই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তারা বিরোধী দলে থাকতে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার থাকলেও ক্ষমতায় গেলে নিজেরা ঠিক একই কাজটি করে। আমি মনে করি দেশে একটি নিরপেক্ষ জায়গা থাকা দরকার যেখান থেকে মানুষ সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, সেটা সরকারে পক্ষে থাক বা বিরোধী দলের পক্ষে যাক। সেজন্য আমরা চাচ্ছি আমাদের এ প্লাটফর্মটিকে এমনভাবে গড়ে তুলব যেখানে আমরা বিভিন্ন সামাজিক কাজ করবো, প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় কোন কাজ করার থাকলে আমরা সেটা করবো। তবে আমরা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকব।” 

যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, "এখন আমাদের কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা নেই। তরুণ সমাজ যদি এখানে আমাদের চায় তবে সেটা আগামী দিনে ভেবে দেখা হবে।  আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সামাজিক কাজগুলো করে যাবো। সকল ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এ প্লাটফর্ম থেকে আমাদের অবস্থান থাকবে।"

যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, আমাদের প্লাটফর্মটি কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও আমরা শুধু কোটা আন্দোলন নিয়ে থেমে থাকিনি। আমরা ঢাবি প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে কথা বলে সফল হই।  এখনও আমরা বিভিন্ন সামাজিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনে ছাত্রদের অধিকার সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে আমরা কথা বলা অব্যাহত রাখব। সমাজের সকল শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য আমরা কথা বলব। বিশেষ করে ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন হয়রানি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলব। এখন রাজনীতিতে প্রবেশ করার আমাদের কোন ইচ্ছা নেই। সরকারি বা বিরোধী কোন পক্ষে যাবো না। নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলব।