জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা, আছেন বর্তমানরাও
- মাহমুদ বায়েজীদ
- প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৬ PM , আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৩৩ PM
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নিলেও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশের প্রধান দুই দলের একটি বিএনপি। দীর্ঘ দশ বছর পর নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণায় উজ্জীবিত দলটির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সী দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা সরবে উঠে আসছেন জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে। এবারের নির্বাচনে আগের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে বেশি সাবেক ছাত্রদল নেতা মনোয়ন পাবেন বলেও আভাস দিয়েছেন বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা।
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, গত ১২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করে দলটি। শুক্রবার শেষ হয় বিতরণ ও জমা দেয়ার সময়। ৫ দিনে সাড়ে চার হাজারের বেশি দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে দলটির। এর মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান মিলে আট শতাধিক নেতা মনোনয়নপত্র তুলেছেন বলে জানা গেছে। পূর্বে বিভিন্ন ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা, নিজ এলাকায় জনপ্রিয় এবং কর্মীবান্ধব সাবেক ছাত্রনেতারা মনোনয়ন প্রাপ্তিতে এগিয়ে থাকবেন।
দলটির নেতারা বলছেন, এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের আন্দোলনেও উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। এলাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, ব্যানার, ফেস্টুন এবং উঠান বৈঠক করে ভোটারদের এবং শীর্ষ নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন তারা।
শুধু সাবেক নন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির নেতাদেরও অনেকে এমপি প্রার্থীতার মনোনয়ন প্রত্যাশী। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান বরিশাল-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়। আন্দোলনের অংশ। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে নির্বাচনে অংশ নেবো। জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী আমি।
নরসিংদী-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে চান বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু। এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো অভিভাবক নেই। নেতাকর্মীরা একজন অভিভাবক চায়। আশা করি দল আমার কথা বিবেচনা করবে। আমি মনোনয়ন পেলে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই আসনটি উপহার দিতে পারবো। আকরামুল হাসান আরো বলেন, দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এই নির্বাচন আন্দোলনের অংশ। আমরাও সে হিসেবে প্রস্তুতি নিয়েছি।
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন নোয়াখালী-১ (চাটখিল) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। এ লক্ষ্যে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন। তবে এ আসনে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে মামুনুর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি। বিভিন্ন কর্মসূচীতে এলাকার নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেছি। এলাকার মানুষের কাছে আমার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। যার কারণে পুলিশ আমার বাড়িতে বারবার হামলা চালিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মারধর করেছে। আর এই নির্বাচনকে একটি আন্দোলন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তরুন নেতৃত্ব দরকার। আমি আশাবাদী মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে।
বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি এজমাল হোসেন পাইলট নেত্রকোণা-১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে চান। আর সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার মনোনয়ন চান ঢাকা থেকে ।
সাবেক যারা এগিয়ে তাঁরা:
খুলনা-৩ আসনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. রকিবুল ইসলাম বকুল। এলাকায় তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। টাঙ্গাইল-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। নরসিংদী-৪ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল। নোয়াখালী-৫ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। তিনি বেশ কয়েকবছর ধরে এলাকায় কাজ করছেন। পঞ্চগড়-২ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক চান।
নেত্রকোনা-৫ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ ইমরান মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তিনি এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইমরান বলেন, আমার এলাকার জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন শিক্ষিত-সৎ প্রার্থী জয়ী হোক। আমার এলাকা অনেকটাই অনুন্নত। বিগত ১০ বছরে ভোটারবিহীন সরকার এলাকায় কোনো উন্নয়ন করেনি। তাই এলাকার মানুষের দাবি যাতে আমি নির্বাচন করি। দল যদি চায় তাহলে আমি নির্বাচন করতে প্রস্তুত রয়েছি। আশা করি আমাকে মনোনয়ন দিলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এই আসনটি উপহার দিতে পারবো।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম। এজন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পাশাপাশি নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে ডাকসুর হল সংসদের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক, স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সরোয়ার নির্বাচন করতে চান। রাজশাহী-৫ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান।
নাটোর-১ আসনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। নওগাঁ-৪ আসনে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। ঝিনাইদহ-৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তিনি ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক।
ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবীব উন নবী খান সোহেল। লক্ষীপুর-৪ আসন থেকে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু নির্বাচন করতে আগ্রহী। তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। খুলনা-৪ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজীজুল বারী হেলাল নির্বাচন করতে আগ্রহী। তিনি এলাকায় বেশ কয়েকবছর ধরে কাজ করছেন।
লক্ষীপুর-৩ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি নির্বাচন করবেন। এই আসন থেকে আগে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গাজীপুর-৫ আসন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়তে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন। পটুয়াখালী-৩ আসনে নির্বাচন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাসান মামুন কাজ করছেন। ফরিদপুর-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান শহিদুল ইসলাম বাবুল। তিনি ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির। মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি শেখ মো. শামিম ধানের শীষ প্রতীক পেতে কাজ করছেন। গাইবান্ধা-৪ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। পিরোজপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন চান সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সোহাগ। বরিশাল-২ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি দুলাল হোসেন।
ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ মুন্না চট্টগ্রাম-৪ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি দল থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। ভোলা সদর আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি হায়দার আলী লেনিন। ঝিনাইদহ–৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান আমিরুজ্জামান খান শিমুল। ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ঢাকা–৯ থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।