৩৮ বছরের কর্মজীবন, ৬২ বছর বয়সে মাস্টার্স পাস
স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি জীবনের ৩৮ বছর পার করেছেন। স্বামী সংসার সামলিয়ে ৬২ বছর বয়সে মার্স্টাস পরীক্ষা দিয়েছেন। ২০১৭ সালে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে শিক্ষাগত সনদ অর্জনে যেন উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন ঠাকুরগাঁও শহরের ইসলামবাগ মহল্লার আরেফা হোসেন।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ৩৮ বছরের চাকরি জীবন শেষ করে এখন ঠাকুরগাঁও নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজে অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ১৯৮১ সালে রাজশাহীর খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি থেকে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৮২ সালের ৬ জুন ঠাকুরগাঁও মহকুমা হাসপাতালে (বর্তমানে আধুনিক সদর হাসপাতালে) জুনিয়র নার্স হিসেবে যোগদান করেন আরেফা।
আরেফা হোসেন বলেন, আমার জন্ম নাটোর জেলায়। সেখানেই আমাদের বাড়ি ছিল। আমরা পাঁচ বোন ছিলাম। ছোট বেলায় মা-বাবা মারা যায়। বড় বোন আমাদের দেখাশুনা করতেন। কিছুদিন পরে বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। তখন আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না। আমিসহ আমরা তিনবোন সেখানে একটি আশ্রমে বড়ই হয়েছি। তবে এখন আমরা সবাই মাথা উঁচু করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি।
আরও পড়ুন: সহকারী শিক্ষক থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী, করেছেন সরকারি চাকরিও।
তিনি আরও বলেন, আমার ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার। কিন্তু চাকরির পরে বিয়ে তারপর সন্তান হয়ে যায়। মনে হয়েছিল হয়তো আর উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারব না। তবে আমার স্বামী আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, তবে সে এখন নেই। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন।
মাধ্যমিকে পড়ার সময়ই তার মনে ইচ্ছা জাগে তিনি একদিন নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। ১৯৮৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতা হামিম হোসেনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আরেফা। বছর ঘুরেই তার কোলজুড়ে আসে সন্তান। সংসারের ব্যস্ততা আর কর্মময় জীবন বাদ দিয়ে আলাদা কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ হওয়ার সুযোগ ছিল না তার।
তবুও তার উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আবারো পড়াশোনা শুরু করেন। বিএসসি করার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মহাখালী সেবা মহাবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে প্রস্তুতি নেন মাস্টার্সের।
বয়সের ভার, পরিবার ও কর্মস্থলের ব্যস্ত সময়, সব বাধা ডিঙ্গিয়ে উচ্চশিক্ষার সনদ পেয়ে আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন আরেফা হোসেন। তার কর্মজীবনে নিরলস প্রচেষ্টা ও পদোন্নতি তাকে জুগিয়েছে প্রেরণা।
আরেফার বড় ছেলে আসিক হোসেন ঢাকার একটি নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। ছোট ছেলে আদিব হোসেন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রয়েছেন। মায়ের সাফল্যে দুই ছেলেই অনেক খুশি।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, আরেফা নারী জাগরণে অগ্রদূত।