০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৩০

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ছিলেন স্রোতের বিপরীতে চলা শিক্ষক

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী  © সংগৃহীত

এই পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন, যারা সারা জীবন আলো ছড়ান। তাদেরই একজন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি অগণিত অনুরাগীকে কাঁদিয়ে অনেকদিন লড়াই করে কোলন ক্যান্সারের কাছে হার মেনে পরপারে চলে যান তিনি। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি বুয়েটে শিক্ষকতা শুরু করে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতাই করাতেন। ২০০৭ সালে প্রথম তার ক্যান্সার ধরা পরে।

সম্প্রতি ২৯ জানুয়ারি তার চতুর্থ মৃত্যৃবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলো অগণিত ভক্ত এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কানাডীয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও কলামিস্ট এম এল গনি তাকে স্মরণ করে ফেসবুকে লিখেছেন, বুয়েটের স্বনামধন্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মৃত্যুর কিছুদিন আগে বলেছিলেন, “আগে ছাত্রছাত্রীদের দেশে ফিরে আসার জন্য বলতাম, এখন আর বলি না। দেশের অবস্থা ভাল না, আপনারা বিদেশেই থাকেন।”

অধ্যাপক চৌধুরী ক্লাসে কখনোই হাজিরা নিতেন না; তবুও তার ক্লাসে সব সময় থাকত উপচে পড়া ভিড়। অথচ, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক শিক্ষক ক্লাস রুমে ছাত্র ধরে রাখার শত কলাকৌশল করেও ব্যর্থ হন। এই একটি বিষয়ই বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে তার পরিচিতি দেয়।

সাবেক সচিব ও অধ্যাপক এম ফাওজুল কবির খান এক স্থানে বলেছেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি নাগরিক পরামর্শক কমিটি করি, যাতে অন্যান্য সুধীর সঙ্গে প্রফেসর মোহাম্মদ আলীকেও অন্তর্ভুক্ত করি। কমিটির প্রথম সভায় মোহাম্মদ আলী কীভাবে আসবেন ভেবে সচিবের গাড়িটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে পাঠাই। চালক ফিরে এসে জানান, প্রফেসর সাহেব তাকে বলেছেন চলে যেতে। মোহাম্মদ আলী হেঁটে সময়মতো সভায় হাজির হন।’

“অথচ, আজকালকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত ফায়দা লুটতে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিতেই সিংহভাগ সময় কাটান। ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকাকালে প্রাক্তন ছাত্রদের কয়েকজন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘যা চিকিৎসা ঢাকাতেই হবে এবং আমার নিজস্ব সঞ্চয় থেকেই হবে। দেশের বাইরে বা অন্যের টাকায় চিকিৎসা হবে না।’ দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর প্রশ্নাতীত আস্থা ও নিখাঁদ দেশপ্রেমের এমন নজির আজকাল কেবল বক্তৃতা-বিবৃতিতেই শোনা যায়, বাস্তবে দেখা যায় না। ৪ বছর আগে, ২০১৮ সালে, এই মহানুভব আমাদের ছেড়ে চলে যান। এমন মানুষ লাখে একজনও দেখা যায় না। সারাদেশের শিক্ষক সমাজের আদর্শ হতে পারেন এ মহান শিক্ষাবিদ। তিনি জান্নাতবাসী হউন।”

পর তাই এই স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের কর্তৃক পরিচালিত ‘BUETian-বুয়েটিয়ান’ নামে একটি ফেসবুকে পেজে গতকাল শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) তার এই লেখাটি শেয়ার করলে সেখানে এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার বার রিএক্ট হয়।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ২০১৬ সালে পত্রিকার এক কলামে লিখেছিলেন, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী স্রোতের বিপরীতে চলা শক্তিশালী মনোবলের একজন নিবেদিতপ্রাণ, প্রচারবিমুখ শিক্ষাবিদ। তিনি প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রথম ক্লাসের দিন স্পঞ্জ পরা এই ছাত্রকে ক্লাসশিক্ষিকা বলেছিলেন, ‘স্পঞ্জ পরে মেডিকেলে আসা যাবে না।’ উনি স্পঞ্জ ছাড়তে পারলেন না। তাই মেডিকেল ছেড়ে দিয়ে বুয়েটে ভর্তি হলেন স্পঞ্জকে সঙ্গী করে।