মরমী কবি হাছন রাজার জন্মদিন আজ
মরমী কবি হাছন রাজার ১৬৭তম জন্মদিন আজ। ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহরের কাছে সুরমা নদীর তীরে লক্ষ্মণশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পরাক্রমশীল জমিদার। জমিদার থাকা অবস্থায় তিনি তার সম্পদ জনকল্যাণে দান করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনী নিয়ে ভ্রমণে বের হন। গুণী এই মরমী কবি বাংলা ভাষাভাষি মানুষ ছাড়াও উপমহাদেশেও তার সুনাম ছড়িয়ে আছে।
আরও পড়ুন: নির্যাতনে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর মৃত্যু, স্বামী কারাগারে
হাছন রাজার বাবা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের তৃতীয় পুত্র। মায়ের নাম ছিল হুরমত বিবি। বাবা-মায়ের থেকে পাওয়া সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন মরমী গীতিকবি হাসন রাজা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি জমিদারিতে অভিষিক্ত হন।
হাছন রাজার গানে ছিল বিচিত্রতা লক্ষ্যণীয়। তিনি লিখেছেন প্রেমের গান (জাগতিক প্রেম, আধ্যাত্মিক প্রেম, জগৎ সংসারের প্রেম)। তারপরও তার গানের প্রধান বিষয়বস্তু অনেকটা এরকম এই পৃথিবীতে মানুষের আগমন একটা স্বল্প সময়ের জন্য। এখানে কেউই চিরস্থায়ী নয়। মানবিকবোধকে তিনি উচ্চ স্তরে স্থান দিয়েছেন যেখানে মমত্ব, ভ্রাতৃত্ব, সংহতি এবং সহনশীলতাবোধের গভীর দিকদর্শন রয়েছে, রয়েছে অসাম্প্রদায়িকতার কথাও।
আরও পড়ুন: সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে হিজাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
হাছন রাজার গবেষণা-সাধনা ও শিল্পকর্ম ছিল গণকল্যাণমুখী। তিনি বিখ্যাত জমিদার ছিলেন, আবার সুরের সাধকও ছিলেন। কবির নিজের সৃষ্টিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দাঁড় করিয়ে গেছেন। লক্ষণশ্রীর ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্ম নেওয়া হাছন রাজা তার জীবনের বিভিন্ন সময়ের গানে সহজ-সরল স্বাভাবিক ভাষায় মানবতার চিরন্তন বাণী উচ্চারিত হয়েছিল। তেমনি আধ্যাত্মিক কবিও ছিলেন তিনি। সব ধর্মের বিভেদ অতিক্রম করে তিনি গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান।
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তার রচিত ২০৬টি নিয়ে গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনটির নাম ছিল ‘হাসন উদাস’। এর বাইরে আর কিছু গান ‘হাসন রাজার তিন পুরুষ’ এবং ‘আল ইসলাহ্’ সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ধারণা করা হয়, তার অনেক গান এখনও সিলেট-সুনামগঞ্জের লোকের মুখে মুখে আছে এবং বহু গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন: খুবির দুই শিক্ষার্থী পেলেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড
সুনামগঞ্জ জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাছন রাজার অসাম্প্রদায়িক চেতনার গান কম গাওয়া হয়। ভাববাদ ও আধ্যাত্মিক গান বেশি চর্চা হয়। সবকিছুই গাইতে হবে, না হয় হাছন রাজাকে জানা হবে কম।
হাছন রাজার প্রপৌত্র, হাছন রাজা মিউজিয়ামের পরিচালক সামারিন দেওয়ান বলেন, হাছন রাজাকে স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমিতে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তিনি হাছন রাজাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সরকারি সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানান।
জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী বলেন, জানুয়ারিতে হাছন রাজাকে নিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে উৎসব হবে। হাছন রাজার গান সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নিয়েছে শিল্পকলা কর্তৃপক্ষ।