দিলীপ কুমার নামটি ছিল অপছন্দ, তাই বদলে এ আর রহমান
ভারতীয় সঙ্গীতের বাধ ভেঙে দিয়েছেন তিনি। সেই অল্প সংখ্যক মানুষের তালিকায় পড়েন তিনি, যিনি প্রকৃত অর্থে নিজের শিল্পের সম্ভার নিয়ে স্বীকৃতি পান বিশ্বব্যপী। তাঁর জীবন নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন আজও মানুষের মনে ঘোরাফেরা করে। নিজের নাম বদলালেন কেন তিনি? নিজের ধর্ম বদলালেন কেন তিনি?
এ আর রহমানের জীবনী লিপিবদ্ধ করেছেন নসরিন মুন্নি কবীর, তাঁর ‘এ আর রহমান, দ্য স্পিরিট অব মিউজিক’ বইতে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার ৫৪তম জন্মদিন ছিল ভারতের এই বিস্ময়কর প্রতিভার। ১৯৯২ সালে রোজা (Roja) সিনেমায় ডেবিউ করেন। তার পর বম্বে (Bombay), দিল সে (Dil Se), তাল (Taal), সাথিয়া (Saathiya), স্লামডগ মিলিওনিয়ার (Slum Dog Millionaire), গুরু (Guru) থেকে শুরু করে একের পর এক সৃষ্টি।
তবে বলিউড ছাড়াও হলিউডের বেশ কয়েকটি সিনেমায় সুর দিয়েছেন তিনি। চারটি জাতীয় পুরস্কার, দু'টি অস্কার, দু'টি গ্র্যামি, একটি BAFTA, একটি গোল্ডেন গ্লোব সহ অসংখ্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার রয়েছে ঝুলিতে। ২০১০ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানেও সম্মানিত করা হয়। জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক রহমানের তৈরি কিছু অনবদ্য গান।
রহমানের ৫৪ বছরের জন্মদিনে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জন্মের পর রহমানের নাম রাখা হয়েছিল দিলীপ কুমার। কিন্তু নিজের নামটা পছন্দ ছিল না তাঁর। এ কারণে তিনি তার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘কিংবদন্তী অভিনেতা দিলীপ কুমারের প্রতিকোনও ভাবেই কোনও অসম্মান নেই আমার। কেবল আমার মনে হয়েছিল যে আমার সঙ্গে এই নামটা যাচ্ছে না।’’
যে সময়েনাম বদলানোর কথা ভাবছেন, সেই সময়ে তাঁর বাবাআচমকা মারা যান। বাবার অকালমৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় তাঁদের জীবন। করিমা বেগম তাঁর সন্তানের খাওয়া-পড়ার জোগান দিতে হিমশিম খেতে থাকেন। করিমা বেগম চিরকালই আস্তিক মানুষ। আজও রহমানের পুরনো বাড়িতে হিন্দু দেবদেবীর ছবি রয়েছে। পাশাপাশি মা মেরির কোলে যিশুখ্রিষ্টের ছবিও রয়েছে।
খুব কম বয়সে কাজকর্ম শুরু করেন রহমান। ১৯৮৬ সালে রহমানের মা করিমা বেগম দেখা করতে যান কাদরি সাহেব (সুফি পীর করিমুল্লাহ্ শাহ কাদরি)-এর সঙ্গে। পীর তখন অসুস্থ ছিলেন। করিমা বেগম তাঁর শুশ্রূষা করেন। বাবা-মেয়ের মতো সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁদের দু’জনের মধ্যে। তাঁর কিছু বাণী ধীরে ধীরে করিমা ও রহমানের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনে।
সুফির প্রভাব পড়ে তাঁদের উপর। কিন্তু কোনও দিন পীর তাঁদের ধর্মান্তরকরণের কথা বলেননি। রহমান সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘‘সুফি আমাকে শিখিয়েছিল, যে ভাবে সূর্য বা বৃষ্টি কখনও মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করে না তেমনই মানুষেরও একে অপরের মধ্যে ভেদাভেদ করা উচিত না। তা সে যে ধর্ম বাবর্ণ হোক না কেন। কেউ নিজে থেকে না চাইলে কোনও দিন ইসলাম ধর্মগ্রহণ করার জন্য জোর করা হয় না। আমরাও স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছি ইসলামকে।’’
খাতাকলমে সুফি ধর্ম গ্রহণ করার আগেই নিজের নাম পরিবর্তন করেন রহমান। তাঁর বোনের কোষ্ঠীবিচার করাতে করিমা বেগম এক জ্যোতিষীর কাছে যান। নাম পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন রহমান। জ্যোতিষ তাঁকে দু’টি নামের কথা বলেন— আব্দুল রহমান ও আব্দুল রহিম। এক জন হিন্দু জ্যোতিষ হয়েও তিনি মুসলিম নামের পরামর্শ দেন তাঁকে। শেষে তাঁর মা ‘আল্লাহ্ রাখা’ নামটি রাখেন। আর সঙ্গে রহমান। আল্লাহ্ রাখা শব্দের অর্থ, ঈশ্বর যাকে রক্ষা করেন।