তুমি রয়েছো নয়নে নয়নে
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়… বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ভক্তদের মন আজ কাঁদছে। কেননা ২০১২ সালের এইদিনে সবাইকে কাঁদিয়ে অনন্ত মহাকালের উদ্দেশ্য যাত্রা করেছিলেন কথার এই যাদুকর।
আজ রবিবার সাহিত্যের বহু কালজয়ী চরিত্রের শ্রষ্ঠা হুমায়ূন আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে ভুগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর অর্ধযুগ পেরিয়ে গেছে ঠিক, কিন্তু এখনও বাংলাদেশের সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদই। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এখনও বিক্রির শীর্ষে তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তার ভক্তরা। সেই কান্না এখনো থামেনি। এখনো ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ চরিত্রগুলো পড়ে অঝরে কাঁদেন তার ভক্তরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে ধরা হয় কথার এই যাদুকরকে। তার তৈরি করা চরিত্রগুলো তরুণ-তরুণীদের কাছে এখনো অনুকরণীয়। এই চরিত্রগুলো সৃষ্টির মাধ্যমে জনপ্রিয়তার জগতে তিনি হয়ে ওঠেন একক ও অনন্য। বাংলা কথাসাহিত্যে সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনকও তিনি।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোটো ভাই। সবার ছোটো ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদসংকেত, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন। দেশের বাইরেও তাকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। তার প্রমাণ, জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।