আড়ম্বরপূর্ণ বিদায় বাবা চাননি— অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছেলে
সদ্য প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের শেষ বিদায়টা যেমনটা হওয়ার কথা ছিল, করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটকালে তেমনটা হয়নি; তবে তার ছেলে জানালেন, তার বাবা আড়ম্বরপূর্ণ বিদায় চাইতেন না।
তার ছেলে আনন্দ জামান এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, অনেকেই আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, আড়ম্বরপূর্ণ বিদায় দিতে না পেরে। সত্যি কথা বলতে, আব্বা আমাদেরকে নানাভাবে গত চার বছরে বুঝিয়েছিলেন তিনি এত আড়ম্বরপূর্ণ প্রস্থান চান না। এমনকি অস্থায়ী কবরে তাকে দাফনের অনুরোধ করেছিলেন। আবেগের কারণে আমরা সেই অনুরোধ রাখতে পারিনি, তবে প্রকৃতির খেয়ালে তার বিদায় হলো খুবই অনাড়ম্বরভাবে।
সুষ্ঠুভাবে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে ঋণ স্বীকার করেন আনন্দ জামান।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, একটা পর্যায়ে গার্ড অফ অনার প্রদান করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে আমরা আশাহত হই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় অবশেষে গার্ড অফ অনার প্রদান করা সম্ভব হয়। তার প্রতি আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, যে মানুষটা এদেশের ভাষার সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, দেশটা স্বাধীন করায় ভূমিকা রেখেছিলেন - সেই মানুষটা পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানের সাথে বিদায় না পেলে একটা কষ্ট থেকে যেত। যে হাত দিয়ে দেশের সংবিধানের অক্ষর গুলো লেখা হয়েছিল সেই হাত জাতীয় পতাকার স্পর্শ না পেলে সারা জীবন একটা দুঃখ থেকে যেত আমাদের। আমরা ভাগ্যবান সেই দুর্ভাগ্য আমাদের স্পর্শ করেনি। আব্বাকে শেষ বিদায় দিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে যখন ফিরে আসছি তখন মনে হল তাকে সাথে নিয়েই যেন বাড়ি যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর পরিচিত -অপরিচিত যারা অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আনন্দ জামান।লিখেছেন, সব ধর্মের মানুষ একযোগে যেভাবে দোয়া-প্রার্থনা করেছেন তা আমাদের জন্য অনেক পাওয়া। এত মানুষের ভালোবাসা-সাহায্য-সহযোগিতা-সহমর্মিতা পেয়ে আমরা অভিভূত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাদের পোস্ট, কমেন্ট, গদ্য-কবিতা-আঁকা দেখে আমরা মুগ্ধ। জাতীয় দৈনিকে আব্বাকে নিয়ে লেখাগুলো পড়ে আমরা আপ্লুত। কিছু শিরোনাম আমাদের কাঁদিয়েছে, কিছু সম্পাদকীয় আমাদের সামনে আব্বাকে নতুন করে চিনিয়েছে। আমরা কৃতার্থ।
সংবাদকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ জামান লিখেছেন, সাধারণ মিডিয়ার সাংবাদিকদের কথা আগেই বলেছি। কবরস্থানে ক্যামেরা মাটিতে নামিয়ে, হাতে মাটি নিয়ে যখন তারা কবরে দিয়েছেন, তখন তাদেরকে আর সাংবাদিক বলে মনে হয়নি; মনে হয়েছে অতি আপনজন।
গত ১৪ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ৮৩ বছর বয়সী এই অধ্যাপক হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুসে জটিলতা, পারকিনসন্স ডিজিজ এবং প্রোস্টেটের সমস্যা ভুগছিলেন। শেষ দিকে তার রক্তে ইনফেকশন দেখা দিয়েছিল। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাসও ‘পজিটিভ’ আসে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জানাজায় অংশ নিতে পারেন কেবল নিকটজনরা। ১৫ মে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তার বাবার কবরে দাফন করা হয় তাকে।