বাবাকে দেখার অপেক্ষায় ডাক্তার মঈনের সন্তানেরা

সন্তানদের সঙ্গে ডা. মঈনের এ ছবি শুধুই স্মৃতি
সন্তানদের সঙ্গে ডা. মঈনের এ ছবি শুধুই স্মৃতি  © ফাইল ফটো

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো: মঈন উদ্দিন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তার আজ চারদিন হলো। কিন্তু তার সন্তানরা এখনও জানে না তাদের বাবা করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাচাঁনোর যুদ্ধে এক ‘ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা’ হিসেবে মারা গেছেন। ডা. মঈনের দুই ছেলে যিয়াদ (১১) এবং যায়ান (৭)। তারা এখন তাদের বাবাকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে।

ডা. মঈনের সদ্য বিধবা স্ত্রী ও সিলেটের পার্কভিউ মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. চৌধুরী রিফাত জাহান জানান, তাদের দুই ছেলেকে বলেছেন যে তাদের বাবা ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসা শেষ হলেই তাদের সাথে দেখা হবে।

কীভাবে আমরা তার সন্তানদের বলব যে তাদের বাবা মারা গেছেন- প্রশ্ন ডা. মঈনের ছোট বোন সাবিরা খাতুনের। সিলেটের সুজাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী এ শিক্ষিকা বলেন, ডা. মঈনের দুই ছেলে যিয়াদ (১১) এবং যায়ান (৭) তাদের বাবাকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে। তাদের মা তাদের বাবার মৃত্যুর মতো কঠিন সংবাদের পরেও নিজের মনোবল ধরে রাখার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। একদিন হয়তো তার সন্তানেরা এ কঠিন সত্যটি জেনে যাবে। তখন তাদের ওপর নেমে আসা সে ঝড়ে মানসিকভাবে মনোবল শক্ত রাখতে হবে।

সাবিরা জানান, তার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাদামপুরে তার নিজের গ্রামের লোকদের সেবা এবং তাদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে একটি হাসপাতাল স্থাপন করা।

তিনি বলেন, আমার ভাই সবসময় বলতেন চিকিৎসক হিসেবে তার জীবন সফল হবে যদি তিনি তার নিজের গ্রামে কোনো হাসপাতাল স্থাপন করতে পারেন। সে লক্ষ্যে কাজও করে যাচ্ছিলেন যাতে তিনি নিজের এলাকার লোকদের সেবা করতে পারেন।

সাবিরা জানান, ডা. মঈন প্রতি শুক্রবার তার গ্রামের বাড়িতে যেতেন এবং দরিদ্র গ্রামবাসীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতেন। ‘আমাদের বাড়ির সামনে তার একটি চেম্বার-কাম-মিটিং রুম ছিল যেখানে লোকেরা তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার জন্য আসতেন।’

সাবিরার স্বামী সুনামগঞ্জের প্রাইমারি টিচারস ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষক এম খসরুজ্জামান বলেন, সিলেট শহরে ডা. মঈনের এক খণ্ড জমি আছে এবং যেখানে তিনি বসবাসের বাড়ি ও একটি চেম্বার তৈরির স্বপ্নও দেখতেন। এতেই তার ছোট জীবনকাল অতিবাহিত হয়ে যাবে বলে মনে করতেন ডা. মঈন।

খসরু বলেন, প্রয়াত এ চিকিৎসক ইতোমধ্যে উমরাহ হজ করেছিলেন। তবে, প্রয়াত মায়ের পক্ষে এ বছর হজ করার ইচ্ছা ছিল তার।

তিনি আরও বলেন, ডা. মঈনের ইচ্ছা ছিল তার দুই ছেলের মধ্যে একজন বড় হয়ে যেন ডাক্তার হয় এবং তার এবং তার স্ত্রীর মতো মানুষের সেবা করতে পারে।

সূত্র: ইউএনবি


সর্বশেষ সংবাদ