মধুসূদনকে ভাষা শিক্ষার সুযোগ এনে দিয়েছিল বিশপস কলেজ
মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) প্রায় শতবর্ষ পূর্বে বাংলা সাহিত্যে পূর্ব-পশ্চিম মিলনের যে সেতুবন্ধন তিনি স্থাপন করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বিশ্বের একটি অন্যতম সাহিত্যের মর্যাদায় অভিষিক্ত। কবির সাহিত্যসাধনার পরিচয় যেমন সৌন্দর্যোপভোগের অন্দরমহলে প্রবেশের পথ দেখিয়ে দেবে, তাঁর জীবনকথাও তেমনি বিস্ময় ও কৌতূহলের সৃষ্টি করবে।
কাহিনি নির্মাণ, চরিত্র সৃষ্টিসহ সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলা সাহিত্যে এ মহান স্রষ্টার আবির্ভাব এক অভূতপূর্ব ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যাত হয়ে আসছে এবং হবে। ১৮৫৮ থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত মাত্র চার বছরের সাহিত্যসাধনায় তিনি যে অমূল্য সম্পদ বাংলা সাহিত্যভাণ্ডারে যোজনা করেছেন তা অভিনব ও অতুলনীয়।
মধুসূদনের ধ্রুপদী কবিস্বভাব একাধিক ভিন্নমুখী ধারায় বিভাজিত। তাঁর সাহিত্য-দর্শনের মধ্যে যেমন এ ভিন্নতা লক্ষণীয় তেমনি কবির ব্যক্তিজীবনও এর ঊর্ধ্বে নয়। পাশ্চাত্য সাহিত্যরীতির প্রতি যেমন ছিল তাঁর দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা তেমনি প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের প্রতিও ছিল অপরিসীম অনুরাগ। এই বৈপরীত্যের অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য এবং তার ফলে কবিমানসের আত্মিক দ্বন্দ্ব মধুসূদনের সাহিত্যে প্রবলভাবে প্রকটিত। ঘটনাবহুল কিন্তু স্বল্পায়তনিক জীবনটা নিয়ে তিনি যেন নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন বা বলা যায় খেলা করেছেন। ফলে তাঁর সাহিত্যে এবং যাপিত জীবনে যে তরঙ্গসঙ্কুল উত্থান-পতন এবং বৈপরীত্য ও বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়, পৃথিবীর অধিকাংশ মহত্ কবির জীবনে তা দৃষ্ট হয় না।
সমকালীন সামাজিক গঠন কাঠামো, এর বিষয় ও আঙ্গিক শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাস থেকে বিমুক্ত নয়। মধুসূদনও এর ব্যতিক্রম নন। তাই তাঁর সাহিত্যে তত্কালীন সমাজের অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গের চিরকালীন দ্বন্দ্ব মূর্ত হয়ে উঠেছে। এ দ্বন্দ্বে জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে প্রায় অনিবার্যভাবে প্রবেশ করেছে কবির ব্যক্তিজীবন। তাঁর নাটক-প্রহসনে, গীতিকবিতা বা সনেটে এবং মহাকাব্যের চরিত্রে, ঘটনার ঘনঘটায়, নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর বিষয়ের অভিঘাতে প্রত্যক্ষে কিংবা পরোক্ষে ঘুরে ফিরেই এসেছে কবি-জীবনের অপিরসীম দ্বন্দ্ব-সংঘাত।
বিরলপ্রজ এ কবি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবর্তক ও পথিকৃত্ ছিলেন— একথা সর্বজনবিদিত। বিষয় নির্বাচন, আঙ্গিক, প্রকরণ, দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন সর্বক্ষেত্রেই পরিদৃশ্যমান কবির নবতর জীবনচেতনা ও উপলব্ধি। স্রোতের প্রতিকূলে থেকে ক্ষীণতোয়া বাংলা সাহিত্যকে তিনি ক্ষরস্রোতা উত্তাল পদ্মার মতো স্রোতস্বিনী করে তুলেছেন। কিন্তু এ পথচলা মোটেও সুখকর ছিল না। তাঁর জীবন কেটেছে আপনজনের প্রত্যাখ্যান, অবিশ্বাস, নিদারুণ দারিদ্র্য আর চরম মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে। ৪৯ বছরের নাতিদীর্ঘ সেই জীবন একদিকে ছিল সৃষ্টিতে ভরপুর অন্যদিকে দুঃখ-কষ্ট আর যন্ত্রণায় আকীর্ণ।
সমাজ সচেতনতা, মানবপ্রেম ও আঙ্গিকে নতুনত্ব আনয়ন করে মধুসূদন বাংলা সাহিত্যকে মধ্যযুগীয় পরিমণ্ডল থেকে মুক্ত করে আধুনিক শিল্পধারার সঙ্গে যুক্ত করেন। আশৈশব যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং একধরনের উেকন্দ্রিকতা কবিমনে ক্রিয়াশীল ছিল, যার পরিতৃপ্তি লাভে তিনি উন্মূল-উচ্ছৃঙ্খলতার পরিচয় দিয়েছিলেন— তা-ই যেন কবিজীবনকে গ্রিক ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য অনুসারে অলঙ্ঘনীয় দৈব নির্দেশে বেদনাতুর করে তুলেছিল। বলা সঙ্গত যে কবিজীবনের এই বৈশিষ্ট্য বাংলা সাহিত্যে নবতর অধ্যায় সূচিত করেছিল।
জীবনের উচ্চাভিলাষ সাধনে তিনি ঘটনা পরম্পরায় পাশ্চাত্য সাহিত্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচত হন এবং তার অভিঘাত বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের বহমান ধারার সঙ্গে যুক্ত করে। বাংলা কাব্যে মানবতাবোধ সৃষ্টি তাঁর প্রধান অবদান। বিষয় নির্বাচন ও প্রকাশভঙ্গিতে, ভাবে ও ভাষায় অভ্যন্তরীণ গঠন ও বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে তাঁর সাহিত্যকর্মে এমন একটি আশ্চর্য শিল্পকুশলতা ফুটিয়ে তুলেছেন যা বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন ও অভিনব।
কবির বয়স যখন মাত্র সাত, তখন দত্ত পরিবার কলকাতায় চলে আসে। ১৮৩৩ সালে কবি কলকাতা হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। মধুসূদনের জীবনে হিন্দু কলেজের অবদান ও প্রভাব ব্যাপক ও অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে ড. ক্ষেত্রগুপ্ত বলেন, ‘ইংরেজি তথা য়ুরোপীয় সাহিত্যরস ও বিচিত্র মানববিদ্যা যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নব্য বাংলার অন্তরে প্রবেশ করেছিল, হিন্দু কলেজের স্থান তাদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নূতন মানবমন্ত্রে বিশ্বাস, পাশ্চাত্য জীবনতন্ত্রে আসক্তি, গভীর ইংরেজি সাহিত্যপ্রীতি, দেশীয় আচার ও ভাবনার প্রতি অশ্রদ্ধা— সব বিষয়ে বিদ্রোহী মনোভাব হিন্দু কলেজের শিক্ষার সাধারণ ফল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। মধুসূদনের ব্যক্তিচরিত্র এবং শিল্পীপ্রাণের গঠনে হিন্দু কলেজে অধ্যয়নের পর্ব অনেকখানি প্রভাব বিস্তার করেছিল।’
কিন্তু এ কলেজে অধ্যয়নের পর্বটি সম্পন্ন হওয়ার আগেই তিনি জীবনের ভিন্ন অধ্যায়ে প্রবেশ করেন। ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন। খ্রিস্টধর্মের প্রতি তাঁর বিশেষ কোনো আকর্ষণ ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে বিলাত গমনের ইচ্ছার পরিতৃপ্তির জন্য খ্রিস্টধর্ম অবলম্বন সহায়তা করবে—এমন আশা ও প্রলোভন হয়তো তাঁর মনে ছিল। এছাড়া, মধুসূদনের মন-মানসিকতার বিকাশে ‘হিন্দু’ ধর্ম সহায়তা করবে না—এমন ধারণাও কবিমনে ক্রিয়াশীল ছিল বলে অনুমান করা যায়। আবার এমনও একটি তথ্য পাওয়া যায় যে, একটি গ্রাম্য বালিকাকে বিয়ে করার দুর্গতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন।
অন্যদিকে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদূষী কন্যা দেবকীকে বিয়ে করার আকাঙ্ক্ষা থেকেও খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে থাকতে পারেন মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের নগদ প্রাপ্তি হিসেবে কবিকে হিন্দু কলেজ ছাড়তে হয়েছিল অবিলম্বে। কারণ খ্রিস্টান ছাত্রদের হিন্দু কলেজে পড়ার অধিকার ছিল না। দু বছর বাদে তিনি ভর্তি হন বিশপস কলেজে। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ মধুসূদনের আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি হয়তো ঘটায়নি, কিন্তু এ কলেজ তাঁকে ভাষা শিক্ষার অবারিত সুযোগ এনে দিয়েছিল। তাঁর ক্ল্যাসিক রুচি, আধুনিক জীবনবীক্ষা ও শিল্পচেতনার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল এ কলেজে অধ্যয়ন কালেই। তবে এ কলেজ থেকেও পাঠ অসমাপ্ত রেখে আকস্মিকভাবে মাদ্রাজ চলে যান।
১৮৪৮ সালের প্রারম্ভে পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কাউকে কিছু না জানিয়ে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় সম্পূর্ণ অপরিচিত মাদ্রাজ শহরে কেন চলে গেলেন তার সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। তবে পিতার অর্থ সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক টানাপোড়েন কবির কলকাতা অবস্থানকে অস্বস্তিকর করে তুলেছিল বলে মনে করা হয়। মাদ্রাজ অবস্থানকালে কবি জীবনে প্রথম প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এখানে তিনি ‘মাদ্রাজ মেল অরফ্যান এসাইলাম’ নামক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক পদে যোগ দেন। বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত বিদ্যালয় বিভাগে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এ সময় সাংবাদিক ও কবি হিসেবে ইংরেজি জানা সমাজে মধুসূদনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। মাদ্রাজের নামি-দামি সব পত্রিকায় তিনি তখন নিয়মিত প্রবন্ধ ও কবিতা লিখতেন। বিশেষ করে, ‘Madras Circulator and General Chronicle’ নামক পত্রিকায় Timothy Penpoem ছদ্মনামে অনেকগুলো গীতিকবিতা, সনেট, খণ্ডকাব্য প্রকাশিত হয়েছিল।
১৮৪৯ সালে ‘The Captive-Ladie’ এবং ‘Visions of the Past’ এই দুটি দীর্ঘকবিতা একসঙ্গে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়, এটিই কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। তবে এসব রচনা মাদ্রাজে প্রশংসিত হলেও কলকাতায় সেভাবে সমাদৃত হয়নি। এতে কবি নিরুত্সাহিত হয়ে পড়েন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গের তত্কালীন শিক্ষা সচিব বেথুন সাহেবের একটি পত্র বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। মধুসূদনের ঘনিষ্ট বন্ধু গৌরদাসের মাধ্যমে ‘ক্যাপটিভ লেডি’ গ্রন্থটি পাঠ করে বেথুন সাহেব লিখেছিলেন, ‘As an occasional exercise and proof of his proficiency in the language, such specimens may be allowed. But he could rendar far greater service to his country and have a better chance of achieving a lasting reputation for himself, if he will employ the taste and talents, which he has cultivated by the study of English, in improving the standard and adding to the stock of the poems of his own language.’
এই পত্রের ভাষ্য মধুসূদনের মনে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল বলেই অনুমিত।
মাদ্রাজ জীবন ছিল ঘটনার ঘনঘটায় ভরপুর। এখানে আগমনের অল্পদিনের মধ্যেই তিনি অরফ্যান-এসাইলামের ছাত্রী রেবেকা ম্যাক্টাভিসকে বিয়ে করেন। কিন্তু সুখের দাম্পত্যজীবন কবিকে ধরা দেয়নি। নিজের অজ্ঞাতসারেই তিনি কোথাও শান্তির আশ্রয় খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আর তৃপ্তি-অতৃপ্তির নিরন্তর দ্বন্দ্বমুখর জীবনে নতুন করে যুক্ত করেন হেনরিয়েটা নাম্নী মহিলাকে। রেবেকার সাথে আনুষ্ঠানিক ছাড়াছাড়ি কিংবা হেনরিয়েটার সাথে বিধিসম্মত বিবাহ হয়েছিল কি না তা খুব স্পষ্ট নয়। তবে আমৃত্যু হেনরিয়েটা কবির জীবনে ছায়ায়-মায়ায় জড়িয়ে ছিলেন। সব মিলিয়ে মাদ্রাজ জীবন কবির জন্য খুব সুখকর ছিল না।
ইংরেজি সাহিত্যে সুনাম অর্জনের প্রয়াস সফল না হওয়ার পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব কর্তৃক কলকাতায় ফেরত আসার আহ্বান, পিতার মৃত্যু, আত্মীয়-স্বজনদের চক্রান্তে পৈতৃক সম্পত্তি হারানোর আশঙ্কা, স্ত্রী রেবেকার অন্তর্ধান এবং তদস্থলে হেনরিয়েটার অন্তর্ভুক্তি— এসব নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর প্রতিকূলতা থেকে মুক্তি পেতে তিনি সাত বছরের মাদ্রাজ জীবনের অবসান ঘটিয়ে কলকাতা ফিরে আসেন। তবে সর্ববিবেচনায় এটি বলা যেতেই পারে যে, মাদ্রাজ জীবন ছিল এ মহাকবির আশু কর্মযজ্ঞের প্রস্তুতিকাল। কলকাতা প্রত্যাবর্তনের স্বল্পকালের মধ্যেই কবিজীবন অপূর্ব সৃষ্টিশীলতায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল। বলা যায়, এ পর্বে সূচিত হয় কবিকীর্তির শ্রেষ্ঠ অধ্যায়। ১৮৫৮ সালে রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘রত্নাবলী’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে মধুসূদন বাংলা নাটকের দৈন্যদশা বুঝতে পারেন এবং সখেদে মন্তব্য করেন,
‘অলীক কুনাট্যরঙ্গে মজে লোকে রাঢ় বঙ্গে,
নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়।’
হূদয় উত্সারিত এ বাণীর পরপরই তিনি বাংলা নাটক রচনায় মনোনিবেশ করেন এবং অচিরেই ‘শর্মিষ্ঠা’ রচনা করে বাংলা নাটকের পথিকৃত্ হিসেবে আবির্ভূত হন এবং বাংলা সাহিত্যে নবতর অধ্যায়ের সূচনা করেন। পাশ্চাত্যের রোমান্টিক নাট্যকলার আদর্শে রচিত নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম সার্থক নাটকের স্বীকৃতি লাভ করে। কলকাতা অবস্থানের এ পর্বে সাহিত্যসৃষ্টির মহোত্সবে ক্রমে ক্রমে যোজিত হলো : ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০) ও ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১) নাটক। ধারাবাহিকভাবে রচনা করে গেলেন, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ‘বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নামের অসাধারণ প্রহসন। তাঁর রচিত নাটকগুলোতে, বিশেষ করে প্রহসনগুলোতে নিজ শ্রেণি ও অনুসৃত জীবনযাপনকেই ব্যঙ্গ করেছেন। নিজের বিরুদ্ধেই এই যে অবস্থান—এমন দ্বন্দ্ব মধুকবির যেন আত্মার অনুষঙ্গ হয়েই থেকেছে সারাটা জীবন।
বাংলা কাব্যধারায় মধ্যযুগ পর্যন্ত পয়ার ছন্দের প্রাধান্য ছিল, কিছু ক্ষেত্রে ছিল ত্রিপদী ছন্দ। বৈচিত্র্যহীন ও গতানুগতিক এ ছন্দের চরণবিন্যাস ও অন্ত্যমিল রক্ষার জন্য কবির পক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যে বক্তব্য প্রকাশ সম্ভব ছিল না। এতে কবিকল্পনা যথেচ্ছ ডানা মেলার অবকাশ পেত না। এ বন্ধন থেকে মুক্তিদানের অভিপ্রায়ে মধুসূদন পাশ্চাত্য কাব্যের ব্লাঙ্কভার্সের (Blank Verse) অনুসরণে বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রয়োগ ঘটান।