বাস্তব জগতের একজন সুপারহিরো
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৩০ PM , আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৬ PM
ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে হয়রানির বেড়েছে। নোংরা চ্যাট, অশালীন ছবি বানানোসহ এমন কোন কাজ নেই, যা এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হচ্ছে না। এমনই একটা ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলায়। তবে স্থানীয় র্যাব কমান্ডার এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের সহয়তায় ঘটনাটি থেকে পরিত্রান পেয়েছেন ভুক্তভোগী।
বিষয়টি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। ‘বাস্তব জগতের একজন সুপারহিরো’ শিরোনামে লিখেছেন, আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে নানান জনের সাথে আমি সেজে নোংরা চ্যাট, আমার অশালীন ছবি বানিয়ে সেগুলো ফেইসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা, ইনবক্সে বাজেবাজে ছবি ও ভিডিও পাঠানো...আরো কত কি বলে শেষ করা যাবে না। কে যে এসব করছিল, কেন করছিল, তাও বুঝতে পারতেছিলাম না। সারাক্ষণ ভীষণ রকম ডিপ্রেশনে ভুগতাম। বেচে থাকার ইচ্ছেটা দিনদিন মরে যেতে শুরু করেছিল। তখনই স্যার দেবদূতের মতো এসে আমার জীবনে আবির্ভূত হন।
সমস্যা সমাধানে অনেকের দ্বারস্থ হয়ে ব্যর্থ হয়ে যখন সব আশা এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছিলাম, তখন এক বন্ধুর কাছে র্যাব-৯ এর কোম্পানি কমান্ডার এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম স্যারের ব্যাপারে শুনি যে, স্যার নাকি সাইবার ক্রাইম নিয়ে অনেক কাজ করেছেন, অনেক মানুষকে হেল্পও নাকি করেন। আমি শেষ চেষ্টা হিসেবে স্যারের সরকারি নম্বরে কল করে সমস্যার কথা জানালাম। উনি লিখিত অভিযোগ দিতে বললেন এবং চেষ্টা করবেন বলে কথা দিলেন। অবশ্য এমন কথা তো অনেকেই আমাকে দিয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। কিন্তু স্যার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই প্রমাণ দিলেন যে, এই তিনি অন্য সবার মতো নন। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে আমার জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া ফেইক একাউন্ট পরিচালনাকারী দুই সাইবার ক্রিমিনালের পরিচয় বের করলেন। সর্বশেষ জুয়েল এবং পলাশ নামের সেই দুই অপরাধী গ্রেপ্তার হয়ে এখন জেলের ভাত খাচ্ছে। এক ঘোর অমানিশার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি আমি। গ্রেপ্তারের আগে স্যারের পরামর্শে অপরাধীদের নামে থানায় মামলাও করেছি যেন অন্য কোন মেয়ের দিকে তারা আর কখনো হাত বাড়াতে না পারে।
স্যারের ব্যাপারে আমার বিস্ময়ের পালা এখানেই শেষ নয়। অভিযোগের বিষয়ে আমার সাথে কথা বলার জন্য একবার আমাদের বাসায় এসেছিলেন তিনি। কথার মাঝে আমি বাবার জন্য এক কাপ এবং স্যারের জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসলাম। বাবা তার জন্য আনা কাপের চা খেলেও স্যার চায়ের কাপটা ছুয়েও দেখলেন না। আমাদের বাবা-মেয়ের শত অনুরোধ শর্তেও না। আমাদের খাবার ফিরিয়ে দিলে আমরা মনে কষ্ট পাব ভেবে ঘুরিয়ে বললেন যে- তিনি নাকি রাতে কিছু খান না! যে র্যাবের অফিসার এভাবে সততা বজায় রাখতে জানেন। অথৈ সাগরে ডুবন্ত একজন মানুষকে বাঁচিয়ে তুলতে পারেন, অজানা অচেনা একটা মেয়ের নিরাপত্তা ও বিপদের কথা এতটা সিরিয়াসলি নিতে পারেন, তিনিই হয়ত ভুল করে বাস্তব জগতে চলে আসা কল্পনার রাজ্যের সেই সুপার হিরো। ধন্যবাদ এএসপি শামীম আনোয়ার স্যার। স্যারকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। শুধু বলব, হাজার বছর সুস্থভাবে বেঁচে থাকেন আপনি। আর এভাবেই একেকজন বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান সুপার হিরোর ভূমিকায়।’
অবশ্যই স্ট্যাটাসে বিষটির পতিক্রিয়া জানিয়েছেন এসপি শামীম আনোয়ার। বলেছেন, ‘আপনি বাড়িয়ে বলছেন। আমার কাছে অন্য অনেক কাজের মধ্যে এটাও একটা কাজ মাত্র। বিশেষ কোন কিছুই নয়। আর সুপারহিরো! এই প্রসঙ্গে শুধু এটুকুই বলব, ‘সুপার’ শব্দ দিয়ে পৃথিবীতে যা কিছু আছে সুপারস্টার, সুপারম্যান, সুপারহিরো) আমার মতে সবই কাল্পনিক জগতের বিষয় আশয়, বাস্তবে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। কাউকে যদি আপনি সুপার অভিধাসম্পন্ন কিছু মনে করেন, শেষমেশ আপনাকে হতাশই হতে হবে। (এখন হেটার্সরা বলবে, 'সহকারি পুলিশ সুপার' এই পদটিও কি তবে অবসস্তব কাল্পনিক।