বেতনের টাকা জনকল্যাণে ব্যয় করেন ইউএনও
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৪:৪৭ PM , আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৪:৪৭ PM
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিউলী হরি তার বেতনের টাকার সিংহভাগ ব্যয় করেন জনক্যলাণে। এই মানবহিতৈশী ইউএনও’র প্রশাসনিক এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে কথা বলে এসব বিষয় জানা যায়।
গত বছরের নভেম্বরের ১১ তারিখে বরগুনার বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেন শিউলী হরি। সে হিসেবে মাত্র দশ মাসে তিনি এ উপজেলায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও আর্তমানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩১তম ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৩ সালে প্রথমে পিরোজপুরে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করে তিনি। সেখান থেকে ময়মনসিংহ জেলায় একই পদে কিছুদিন চাকরি করার পর একই জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে যোগদান করেন। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বামনায় যোগদানের পর তিনি অনেক দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।
এলাকায় সরেজমিন জানা যায়, স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন দুঃস্থ অসহায় সহায়সম্বলহীন মানুষের খোঁজ-খবর নেন। নিজের ব্যক্তিগত অর্থ থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদের আর্থিক সহায়তা করে থাকেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।
সাম্প্রতিক বড় প্রকৃতিক দুর্যোগ ফণির ভয়াল তাণ্ডবে যখন বামনা উপকূলবাসী আতঙ্কিত তখন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিন রাত বেড়ি বাঁধের বাইরে বসবাস করা লোকজনের কাছে ছুটে গেছেন। নিজ হাতে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন তিনি। তাৎক্ষণিক সকল কেন্দ্রে নিজে গিয়ে আশ্রিত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। চলতি বছর পাবিলিক সার্ভিস ডে অনুষ্ঠানে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরিকে আর্তমানবতার সেবায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত করে সিভিল সার্ভিস কমিশন।
শুধু আর্তমানবতার সেবাই নয় তিনি বামনা উপজেলায় যোগদানের পর প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে সক্ষম হয়েছেন দাবি করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।
গত ৩১ মার্চ পশ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের বামনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার নিরপক্ষ ভূমিকার কারণে বামনার সাধারণ ভোটাররা ভয়ভীতি কাটিয়ে থেকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে।
বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার রামনা ইউনিয়নের দক্ষিন রামনা গ্রাম ও সদর ইউনিয়নের চেঁচান গ্রামে বেরিবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানায়। তিনি স্থানীয় এমপির সহোগিতায় বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার ব্যবস্থা করেন।
নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরির বিষয়ে জাফ্রাখালী গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানজুরা বেগম জানায়, তার অসহায়ত্বের খবর শুনে একদিন দুপুরে তার বাড়িতে আসেন নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি তাকে তার অফিসে আসতে বলেন। এবং অফিসে আসার খরচ টাকাও দিয়ে আসেন। পরের দিন সে অফিসে আসলে তাকে জরুরি ত্রাণ তহবিল থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা প্রদান করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরির সাবেক কর্মস্থল ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়ার সাংবাদিক আবদুল হালিম জানায়, শিউলী হরি এ উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন সময়ে ঘুষ দুর্নীতি ছিলো শূন্যের কোঠায়। ভূমি অফিসে আগত লোকজন তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতো। অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তিনি চলে আসার পরে অনেকেই চোখের জল ফেলেছেন।
বুকাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ জানান, এরকম একজন নির্বাহী কর্মকর্তা বামনার মনুষ আর কখনো পাবে বলে মনে হয় না। যিনি তার বেতনের একটি টাকাও নিজে খরচ করেন না। সব কিছুই গরিব অসহায় মানুষের জন্য নিবেদিত বলে যোগ করেন তিনি।
বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোশাররফ হোসেন জমাদ্দার বলেন, ইউএনও মহোদয় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাদরাসায় তিনি নিজ খরচে আর্থিক অনুদান প্রদান করে আসছেন। বিভিন্ন দিবসে এতিমদের নিজের বেতনের টাকায় নিজে উপস্থিত থেকে তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য (বরগুনা-২) শওকত হাচানুর রহমান রিমন এ বিষয়ে নিজের মূল্যায়ন জানিয়ে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি এক কথায় খুবই ভালো মানুষ। বিভিন্ন সময়ে আমি দুঃস্থদের অনুদান প্রদান করার জন্য তাকে দ্বায়িত্ব দিয়ে দেখেছি তিনি সততার সাথে সঠিক দুঃস্থদের মাঝে তা বণ্টন করেছেন। যেমন তিনি মানবিক তেমনি তিনি সাহসী।