শুভ জন্মদিন ‘জীবন থেকে নেয়া’র কিংবদন্তী
- ফরহাদ কাদের
- প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:১৩ AM , আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪০ AM
নতুন ডুডল প্রকাশ করেছে গুগল। প্রতিপাদ্য- অভিনেত্রী রোজি আফসারীর জন্মদিন। দেশের প্রখ্যাত এই অভিনেত্রীর ৭৩তম জন্মদিন আজ। রোজি আফসারী যিনি রোজী সামাদ নামেও পরিচিত। তিনি ১৯৬৪ সালে অভিনয় শুরু করেন এবং ২০০৫ সালে তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।
রোজি আফসারী অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে সূর্য গ্রহণ, সূর্য সংগ্রাম, জীবন থেকে নেওয়া এবং তিতাস একটি নদীর নাম।
১৯৬২ সালে আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত জোয়ার এলো দিয়ে শুরু তার সিনেমায় কাজ করা। তবে প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। প্রায় ৪ দশক ধরে তিনি প্রায় ৩৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে পাকিস্তানের ‘জাগে হুয়া সাবেরা’, ‘পুনম কি রাত’সহ প্রায় ২৫টি উর্দু ছবি রয়েছে।
রোজি আফসারীর স্বামী মালেক আফসারী। তিনিও দেশের নামকরা চলচ্চিত্র পরিচালক। বর্তমানে তিনি পাসওয়ার্ড নামের একটি সিনেমা নির্মাণে ব্যস্ত রয়েছেন। শামীমা আক্তার রোজী ১৯৪৯ সালের ২৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
প্রথম সার্থক নারী পরিচালক
বাংলা চলচিত্রের পদচারণা ১৯৫৬ সালে হলেও একজন নারী পরিচালক পেতে ইন্ডাস্ট্রিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বহু বছর। ১৯৮৬ সালে আমরা পেলাম প্রথম নারী পরিচালক রোজী আফসারী। সে বছর রোজীর পরিচালনায় মুক্তি পায় আশা নিরাশা। চলচ্চিত্রটির কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচনা করেন মালেক আফসারী। সম্পূর্ণ রঙিন এই চলচ্চিত্রটির পোস্টারে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা ছিল- বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পরিচালকের সাহসী ছবি। সাথে ক্যামেরায় চোখ লাগানো রোজীর একটি ছবিও ব্যবহার করা হয়।
সে অবশ্য এক বিচ্ছিন্ন প্রয়াস। কারণ এরপরে রোজী আর কোনো চলচ্চিত্র পরিচালনা করেননি। সেই শতকেই সম্ভবত আর কোনো নারী পরিচালিত চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। দ্বিতীয় নারী পরিচালকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে নতুন শতাব্দী আসা পর্যন্ত। তবে এই নতুন শতাব্দীতে এসে দৃশ্যটায় বেশ পরিবর্তনের দেখা মিলেছে। আগের শতকের চার দশকেরও বেশি সময়ে যেখানে নারী পরিচালক পাওয়া গেছে মাত্র একজন, সেখানে নতুন শতকের দুই দশক পেরুনোর আগেই বেশ কয়েকজন নারী পরিচালক সক্রিয় হয়েছেন ঢাকার চলচ্চিত্রে। নিয়মিত তাদের চলচ্চিত্রও মুক্তি পাচ্ছে।
শিল্পী জীবনের সম্মাননা
চলচ্চিত্রে অনবদ্য ভূমিকার জন্য পাঁচবার জহির রায়হান পদক, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘নিগার’সহ দেশি-বিদেশি প্রায় ৫০টি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন রোজী আফসারী। এছাড়া তিনি কয়েকটি ছবিতে নৃত্য পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। লন্ডন, সুইডেন, মিসর, সিরিয়া, কানাডা, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন রোজী আফসারী।
সংসার ও সন্তান
১৯৮১ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক মালেক আফসারীকে বিয়ে করেন রোজী।ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি ‘এ’ লেভেল শেষ করে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেছিলেন।তার দুই সন্তান। ছেলে রবি আফসারী ও মেয়ে কবিতা সামাদ। শেষ জীবনে মেয়ে কবিতা সামাদের সাথে আবাসিক প্রকল্পের এক বিজ্ঞাপন চিত্রে ও অভিনয় করেন গুণী এই অভিনেত্রী।
একটি নক্ষত্রের পতন
রোজী আফসারী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যায়। চার বছর আগে থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া কিডনি নিয়ে তিনি বেঁচে থাকার জন্য লড়ছিলেন। ২০০৭ সালের ৯ মার্চ ৫৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে প্রখ্যাত অভিনেত্রী রোজী আফসারী স্বামী মালেক আফসারী এবং এক মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
যে রাঁধে সে চুল ও বাধে তার অনন্য দৃষ্টান্ত অসময়ে হারিয়ে যাওয়া অভিনেত্রী রোজী আফসারী। সে একজন নারী, একজন ঘরণী, একজন শিল্পোদ্রষ্টা, একজন নারী পরিচালক, প্রযোজক আর সর্বোপরি একজন সার্থক অভিনেত্রী। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে একজন রোজী আফসারী নাম চিরকাল থাকবে। কেউ ভুলবে না তার কথা।