২৪ মার্চ ২০১৯, ২৩:২৭

বেতনের ৮০ শতাংশ গরিব ছাত্রদের দিয়ে পুরস্কার মিলিয়ন ডলার

  © সংগৃহীত

কেনিয়ার পল্লী এলাকার বিজ্ঞানের শিক্ষক পিটার তাবিচি। তার বেতনের ৮০ শতাংশই দিয়ে দিতেন গরিব ছাত্রদের। এজন্য পুরস্কার হিসেবে বিশ্বের সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পিটার তাবিচি ২০১৯ সালের ‘গ্লোবাল টিচার প্রাইজ’ পেয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সুবিধাবঞ্চিত একটি স্কুলে শুধু গুটিকয় বই নিয়েই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে প্রশংসিত হয়েছেন পিটার। শিক্ষার্থীরা যাতে বিজ্ঞানকে ভবিষ্যতের পাথেয় হিসেবে নেয় সেই মনোভাব তৈরিতে কাজ করেন পিটার।

দুবাইয়ে এক অনুষ্ঠানে বিশ্বের সেরা শিক্ষক হিসেবে তার নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে কেনিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় একজন শিক্ষকের শিক্ষার্থীদের প্রতি ‘অসাধারণ’ অঙ্গীকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে বিবিসি।

কেনিয়ার নাকুরু কাউন্টির ফুয়ানি গ্রামের কেরিকো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পিটার বেতনের ৮০ শতাংশ গরিব শিক্ষার্থীদের দেন। তার এই সহায়তা না পেলে ওই শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্কুল ড্রেস ও বই কেনা সম্ভব হত না। এই শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই খুবই দরিদ্র পরিবারের। তাদের অনেকে এতিম, আবার কেউ কেউ বাবা-মা হারিয়েছেন। পিটার বলছেন, ‘টাকাই সব কিছু নয়’।

তিনি শুধু শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত এবং বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করতে চান। শুধু কেনিয়া নয়, পুরো আফ্রিকায়ই এটা হোক তা চান তিনি।

বিশ্বের সেরা শিক্ষকের এই পুরস্কার দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভারকি ফাউন্ডেশন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করা এই প্রতিষ্ঠান বলছে, ১৭৯টি দেশের ১০ হাজার শিক্ষককে পেছনে ফেলে পুরস্কার জিতেছেন পিটার।

ব্রাদার পিটার বলেন, তার স্কুলে অনেক সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে, এমনকি পর্যাপ্ত বই ও শিক্ষকও নেই। ভালো ইন্টারনেট সংযোগ নেই, যাতে বিজ্ঞানের ক্লাসের রসদ যোগাড়ে তাকে যেতে হয় সাইবার ক্যাফেতে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীই ছয় কিলোমিটারের বেশি হেঁটে স্কুলে আসে। এরপরেও দরিদ্র এসব ছেলে-মেয়েকে বিজ্ঞান শেখার একটি সুযোগ দেওয়া এবং তাদের অবস্থার পরিবর্তনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ব্রাদার পিটার। তার শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালোও করছে। যুক্তরাজ্যের রয়েল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি থেকেও পুরস্কার এসেছে তাদের ঘরে।

পিটার জানান, তাকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে হয়। যেসব ছাত্ররা ঝরে যাওয়ার মতো অবস্থায় থাকে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাবা-মাকে বোঝান তিনি। যেসব পরিবার মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে তাদের বুঝিয়ে মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে উৎসাহ যোগান তিনি।

এই পুরস্কারের প্রবর্তক সানি ভারকে বলছেন, ব্রাদার পিটারের এই গল্প শিক্ষকতায় আসতে আগ্রহীদের অনুপ্রাণিত করবে এবং কেনিয়াসহ বিশ্বজুড়ে শিক্ষকরা যে অবিশ্বাস্য কাজ করছে তাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।