১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:২৮

শুভ জন্মদিন আনিসুজ্জামান স্যার

অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান  © ফাইল ফটো

আজ সোমবার জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের ৮৩তম জন্মদিন। ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্ম নেন তিনি। শুভ জন্মদিন আনিসুজ্জামান স্যার।

অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের পুরো নাম আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান। তার পিতা হোমিও চিকিৎসক আবু তাহের মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম ও মা গৃহিণী সৈয়দা খাতুন। লেখালেখির অভ্যাস ছিল তার মায়ের। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। আনিসুজ্জামানরা ছিলেন পাঁচ ভাই-বোন। তার বড় বোনও নিয়মিত কবিতা লিখতেন। শিক্ষাদীক্ষা ও  শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্য ছিল তাদের পরিবারের। 

১৯৫১ সালে নবাবপুর গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করে আনিসুজ্জামান বাংলায় ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে স্নাতক সম্মান এবং এমএতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। অনার্সে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্বস্বরূপ 'নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক' বৃত্তি পান তিনি। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে শুরু করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল- 'ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারায় ১৭৫৭-১৯১৮'। ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। গবেষণার বিষয় ছিল 'উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস :ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল'। তিনি ১৯৫৮ সালে বাংলা একাডেমি বৃত্তি পান। তবে এ বৃত্তি ছেড়ে দিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে অ্যাডহক ভিত্তিতে যোগ দেন।

১৯৬৯ সালে আনিসুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। পরে ভারতে গিয়ে প্রথমে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে কমনওয়েলথ একাডেমি স্টাফ ফেলো হিসেবে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে গবেষণা করেন। জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। সেখান থেকে অবসর নেন ২০০৩ সালে।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক পদে সম্মানিত করে। তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ (কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

আনিসুজ্জামান অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও লেখালেখি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে তার নিবিড় সক্রিয়তাও রয়েছে। তার রচিত ও সম্পাদিত বিভিন্ন গ্রন্থ এ দেশের শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বেশকিছু উল্লেখযোগ্য বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদও করেছেন। সম্পাদনা করেছেন বিভিন্ন গ্রন্থ।

শিক্ষা ক্ষেত্রে, শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রে, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আনিসুজ্জামান একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট পুরস্কার (১৯৯০), দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা স্মৃতিপদক (১৯৯৩), অশোককুমার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৪) পেয়েছেন।

এছাড়াও তিনি পেয়েছেন ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা 'পদ্মভূষণ' ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি. লিট সম্মাননা পেয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য স্মারক বক্তৃতার মধ্যে রয়েছে-এশিয়াটিক সোসাইটিতে (কলকাতা) ইন্দিরা গান্ধী স্মারক বক্তৃতা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎচন্দ্র স্মারক বক্তৃতা, নেতাজী ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সে নেতাজী স্মারক বক্তৃতা এবং অনুষ্টুপের উদ্যোগে সমর সেন স্মারক বক্তৃতা।

জন্মদিন উপলক্ষে আজ সারাদিনই তার বাসার দরজা থাকবে উন্মুক্ত। সারাদিনই শুভাকাঙ্ক্ষী ও বিশিষ্টজনের আনাগোনায় মুখর থাকবেন তিনি। শুভ জন্মদিন স্যার।