মানবতার জন্য দেশ-বিদেশ ছুটে চলেন যে তারকা
একজন মার্কিন অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মানবহিতৌষী। তিনবার গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, দুইবার স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার এবং একবার একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। চলচ্চিত্র জগতের বাইরে ২০০১ সালে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হয়েছেন। বলা হচ্ছে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির কথা। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফরে আছেন। বিখ্যাত এ তারকার মানবহিতৌষীতার গল্প নিয়ে লিখেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের- এম টি রহমান
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। বর্তমান সময়ে বিশ্বের নারী মহাতারকাদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রথম সারিতে যার অবস্থান। নিজের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে হলিউডে দীর্ঘদিন ধরেই রাজত্ব করে চলেছেন। অ্যাকশন-কমেডিধর্মী মি. এন্ড মিসেস. স্মিথ (২০০৫), লারা ক্রফ্ট: টুম্ব রেইডার (২০০১), অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র কুং ফু পান্ডা (২০০৮) থেকে শুরু করে অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক-প্রাপ্ত একজন অভিনেত্রী হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জোলি। কয়েকবার গোল্ডেন গ্লোব, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড, একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার নিজের করে নিয়েছেন। সেরা সুন্দরী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে জোলির।
অভিনয় জগতের বাইরে আরও একটি পরিচয় অ্যাঞ্জোলিনা জোলিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। মানবহিতৈষী বলে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে তার। চলচ্চিত্র জগতের বাইরে ২০০১ সালে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হন।
বিশ্বব্যাপী মানবতার পক্ষে কাজ করা, বিশেষ করে শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত হন তিনি। যখনই কোথাও মানবতার সঙ্কট দেখা দিয়েছে তখনই সেখানে ছুটে গেছেন জোলি। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সহায়তা করেছেন, তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলির এ মানবিক কর্মকাণ্ডে এবার জড়িয়ে গেলো বাংলাদেশের নামও। প্রায় দেড় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে নির্যাতন, নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে অবস্থান করছেন। ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের মুখে রয়েছেন তারা। এবার তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশে ছুটে এলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানের ব্যাপারেও নিজের জোরালো আহ্বান জানালেন তিনি।
গত সোমবার বাংলাদেশে পৌঁছে বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছান জাতিসংঘ শরণার্থীর্বষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সেখানে গিয়ে টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্প পরিদশর্ন করেন এবং রোহিঙ্গাদের মুখে বর্মি বাহিনীর নৃশংসতার কথা শোনেন।
এ ছাড়া মঙ্গলবার বিকেলে উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদশর্ন করেন তিনি। এর আগে সকালে উখিয়ার কুতুপালং ডি ব্লকসহ চারটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদশর্ন করেন হলিউড সুপারস্টার। সেখানে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। পরে রাখাইন থেকে প্রাণে বেঁচে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের কথা শোনেন।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে মিয়ানমারকেই আসল পদক্ষেপ নিতে হবে, এমন কথাও বলেছেন হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তিনি বলেন, নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ এখন মিয়ানমারে নেই। তাদের ফেরানোর পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং সে দায়িত্ব মিয়ানমারেরই। তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে পুনবার্সন করতে হবে মিয়ানমার সরকারকেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার এ অভিনেত্রী রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর সময়ই তাদের দেখতে বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন জোলি। যদিও এর আগে অন্তত চারবার তার সফর বাতিল করা হয়। অ্যাঞ্জেলিনা জোলির আগে গত বছর ইউনিসেফ’র শুভেচ্ছা দূত হিসেবে রোহিঙ্গা শিবির পরিদশর্ন করে গেছেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও।
এভাবে মানবতার পক্ষে কাজ করা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জন্য নতুন কিছু নয়। ২০০১ সাল থেকেই পীড়িত ও দুঃস্থ মানুষের পক্ষে কাজ করে আসছেন তিনি। সব সফরের ব্যয়ভারও তিনি নিজেই বহন করেন। ওই বছরই সিয়েরা লিওন ও তাঞ্জানিয়া ভ্রমণ করেন। কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের আফগান শরণার্থী শিবির পরিদশর্ন করে সেখানেও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে থাকা মানুষের সাথে কথা বলেন তাদের খোঁজ খবর নেন। আফগান শরণার্থীদের জন্য ১০ লাখ মাকির্ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন জোলি।
পরবর্তীতে থাইল্যান্ড, ইকুয়েডর, লেবানন, সুদান, কসোভো, শাদ, কেনিয়া, মিসর, শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত শরণার্থীদেরও দেখতে যান তিনি। অধিকাংশ সফরেই শরণার্থী শিশুদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় পার করতে দেখা গেছে জোলিকে। অ্যারিজোনার শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্রও ঘুরে দেখেছেন তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৪০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। এসব শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন জোলি তাদের ‘যথাযথ’ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়া মানুষের খোঁজ-খবর রাখা ও তাদের পাশে দাড়াতে দেখা গেলে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে। তার একর্মকাণ্ড সবসময় মানবতার পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে আরও অনেক তারকা ও ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদেরকে। জোলির মানবতার পক্ষে কাজ করার নেশাটা এখনো কমেনি বরং আরও বেগবান হয়েছে।
বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে সাক্ষাৎ করেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সেসময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তিনি বলেন, জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, বিশ্বব্যাংক সবাই একসঙ্গে কাজ করবে, যাতে বাংলাদেশের জন্য বোঝাটা কমে। এছাড়া অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরিয়ে দেখান বঙ্গবন্ধুর নাতি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। জোলি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর জাদুঘরের পরিদর্শন বইয়েও স্বাক্ষর করেন।