০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫৯

স্কুলবিদ্যা ১৮ মাস; বই পড়ে আইনজীবী, স্বশিক্ষায় প্রেসিডেন্ট

আব্রাহাম লিংকন

জন্মেছিলেন অতি দরিদ্র একটি পরিবারে। ফলে সুযোগ হয়নি আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের। দারিদ্রের বোঝা হালকা করতে হাতে তুলে নিয়েছিলেন কুঠার। বাবার সাথে বন-বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে করেছেন কাঠুরিয়ার কাজ। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় নিয়ছিলেন পোস্ট মাস্টারের চাকরিও। তবে দারিদ্রের কষাঘাতে দমে যাননি তিনি। কারণ তিনি জানতেন, দমে গেলে যে ইতিহাস রচিত হবে না। ইতি টানা যাবে না আমেরিকায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা দাসপ্রথার রূঢ় ও নির্মমতার কলঙ্ক। বলা হচ্ছে আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের কথা। তিনি যে শুধু ১৬ তম প্রেসিডেন্ট তা নন, আমেরিকার ইতিহাসের সেরা একজন শাসক লিংকন।  

লিংকন সর্বসাকুল্যে মাত্র ১৮ মাস প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি। জ্ঞান অন্বেষণের জন্য তিনি মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে বই সংগ্রহ করেছেন। নিজ প্রচেষ্টায় হয়েছেন আইনজীবী। রাষ্ট্রীয় শাসন-ব্যবস্থায় তার হাত ধরেই এসেছে আধুনিক গণতন্ত্রের ধারণা। চলুন জেনে নেয়া যাক প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন জীবন যুদ্ধে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া এক যুবকের আব্রাহাম লিংকন হয়ে ওঠার গল্প। 

হলিউড সিনেমা ‘লিংকন’-এ আব্রাহাম লিংকন চরিত্রে ডেনিয়েল ডি লুইস

 

আব্রাহাম লিংকনের পরিচয়

আমেরিকার কেনটাকি রাজ্যের হার্ডিন কাউন্টিতে ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে অতি সাধারণ একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্রাহাম লিংকন।  লিংকনের বাবা থমাস লিংকন এবং মা ন্যান্সি হ্যাঙ্কস পেশায় কৃষক ছিলেন। ১৮১৮ সালে লিংকন এর বয়স যখন মাত্র ৯ বছর তখন তাঁর মা এক অদ্ভুত দুগ্ধজাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর সৎ মায়ের আগমন ঘটে তাঁর জীবনে। 

মায়ের মৃত্যুর পর আব্রাহাম ভীষণ ভেঙ্গে পড়েন। মায়ের মৃত্যু শোক ভুুলে থাকতে তিনি কাঠ কাটা, ছুতোরের কাজের মধ্যে নিজেকে সব সময় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতেন। এসময় তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সৎ মা সারাহ। গতানুগতিক পরিবারের মত সৎ মায়ের সাথে খারাপ সম্পর্ক ছিল না লিংকনের বরং সম্পর্কটা বেশ ভালই ছিল। সারাহ তার নির্ভেজাল সরলতা আর স্বার্থহীন ভালোবাসায় আব্রাহামকে নিজের আপন করে নিলেন। তার উৎসাহেই আব্রাহাম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেওয়া শুরু করেন। তিনি ১৮ মাস প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন।  তবে জ্ঞান অন্বেষণে লিংকন ছিলেন একজন মনযোগী পাঠক। বই পড়ার জন্য তিনি মাইলের পর মাইল পথ হেটে বই সংগ্রহ করেছেন। তিনি পারিবারিক বাইবেল এবং তখনকার বিখ্যাত বইসমূহ যেমন- রবিনসন ক্রুসো, তীর্থযাত্রীদের অগ্রগতি ও ইশপের গল্প পড়তে খুবই পছন্দ করতেন।

রাজনীতিক জীবনের সূচনা

১৭ বছর বয়সে তার এক বন্ধুকে নিয়ে লিংকন একটি দোকান কিনে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসাটি ভাল চলছিল না বলে তিনি তার নিজের অংশের শেয়ারটুকু বিক্রি করে দেন। এরপর কিছুদিন পোস্টমাস্টার হিসেবে কাজ করেছিলেন। তবে ১৮৩২ সালে ইউনাইটেড স্টেটস আর নেটিভ আমেরিকানদের মধ্যে যখন ব্ল্যাক হক যুদ্ধ শুরু হলে এতে ক্যাপ্টেন পদে অংশগ্রহণ করে তিনি রাজনীতিবিদদের নজরে আসেন। স্থানীয় জনগনের নিকটও বেশ পরিচিতি লাভ করেন। এরপর জনগণের সমর্থনে ইলিয়ন প্রদেশে প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু এতে তিনি জয় লাভ করতে পারেননি। তবে ১৮৩৪ সালে আবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। 

আইনজীবী হয়ে ওঠার গল্প

প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ইলিনয়ে পাড়ি দিলেন। এ সময় তার ইচ্ছে হলো আইনজীবী হবেন। সেই লক্ষ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। উইলিয়াম ব্ল্যাকস্টোনের কমেন্ট্রিস অন দ্যা ল’স অব ইংল্যান্ড বই নিজে নিজে পড়া শুরু করেন। ১৮৩৬ সালে আইনের চর্চা করতে থাকেন তিনি। সততা, নির্লোভ মনের কারণে অচিরেই আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। 

প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠার গল্প

১৮৩৮-৪০ দু-দুবার ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন লিংকন। ১৮৪২ সালের ৪ নভেম্বর মেরি নামের একজনকে বিয়ে করলেন তিনি। বিয়ের পর বড় পরিসরে আইনের ব্যবসা শুরু করতে চাইলেন; কিন্তু মেরির ইচ্ছে ছিল আব্রাহাম কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য হোক। ফলে পুরোদমে রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে দিলেন এবং ১৮৪৭ সালে ওয়াশিংটন পার্লামেন্টের সদস্যও হলেন। ১৮৪৭-১৮৪৯ সাল পর্যন্ত মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৮৫৮ সালে তিনি মার্কিন সিনেট নির্বাচনে মার্কিন রিপাবলিকান দলে যোগ দিয়ে স্টিফেন ডগ্লাসের বিপক্ষে প্রার্থী হন কিন্তু নির্বাচন হেরে যান। এই সময় ‘লিংকন ডগ্লাস বিতর্ক’ এবং ক্রীতদাস প্রথা সম্পর্কে ক্যানসাস-নেব্রাস্কা আইনের উপর বিতর্ক অল্পদিনের মধ্যেই লিংকনকে জাতীয় খ্যাতি এনে দেয়। 

তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা ব্যাপক অর্থ-প্রতিপত্তি না থাকা সত্ত্বেও ১৮৬০ সালে রিপাবলিকানের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নমিনেশন পান লিংকন; যেখানে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিল অনেক বেশি প্রভাবশালী। ডেমোক্রেটিক দলকে হারিয়ে ১৮৬০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন লিংকন।

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে আব্রাহাম লিংকন

১৮৬১ সালের ১ জানুয়ারি স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে সই করার মধ্য দিয়ে লিংকন যুক্তরাষ্ট্রে দাস প্রথা বিলুপ্ত করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রায় ৩৫ লাখ ক্রীতদাসকে মুক্ত করতে সক্ষম হন। লিংকনের দাসবিরোধী মনোভাবের জন্য দক্ষিণের দাসপ্রথা সমর্থক প্রদেশ অ্যালবাম, টেক্সাস, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা এবং জর্জিয়া স্বতন্ত্র বলে দাবি করে জেফারসন ডেভিসকে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করল। আব্রাহাম চেয়েছিলেন দাসপ্রথা নির্মূল হোক; কিন্তু দেশ বিভক্ত হলে তা কোনোদিনই সম্ভব হবে না। প্রতিপক্ষদেরকে নিজের আয়ত্তে রাখতে তিনি আব্রাহাম উইলিয়াম সেয়ার্ড, সেলমন চেস, অ্যাডওয়ার্ড ব্যেটসর মতো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিয়েই তার কেবিনেট গড়ে তোলেন এবং দক্ষিণ প্রদেশগুলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এবং এই ক্যাবিনেটের সদস্যরাই গৃহযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দক্ষিণের ধনী সম্প্রদায়, তাদের অস্ত্রের বিপুলতা এবং সেনাপতি লিয়ের চতুরতায় প্রথমে কোণঠাসা হয়ে পড়লেন লিংকন। জনশক্তিকে কাজে লাগাতেই মাঠে নামলেম তিনি। ১৮৬৩-এর ১৯ নভেম্বর গেটিসবার্গ যুদ্ধ-ময়দানের অদূরে জনসম্মুখেই দিলেন ২৭২ শব্দের আড়াই মিনিটের সেই বিখ্যাত ভাষণ, যা গেটিসবার্গ এড্রেস নামেই বিখ্যাত। তার সেই ভাষণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এই ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক যুদ্ধে যোগ দিল, যুদ্ধে যোগ দিলেন সাবেক ক্যাপ্টেন গ্রান্ট। গ্রান্টের প্রচণ্ড আক্রমণে পরাজয় হতে থাকল লিয়ে, দক্ষিণের একের পর এক শহর জয় হতে থাকল। শেষমেশ রিচমন্ড শহরে আত্মসমর্পণ করলেন লী, শেষ হলো পাঁচ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ।

আব্রহাম লিংকনের বিখ্যাত ভাষণ

১৮৬৩ সালে গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নভেম্বর মাসে পেনসিলভানিয়ার গেটিসবার্গ অঙ্গরাজ্যে তিনি একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণই ইতিহাসে বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণ নামে পরিচিত।  মাত্র ২ মিনিটের এই ভাষণে তিনি বলেন,

“সাতাশি বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই উপমহাদেশে নতুন একটি জাতি সৃষ্টি করেছিলেন, মুক্তির মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এবং এই প্রতিজ্ঞায় উৎসর্গ হয়ে যে, সব মানুষ সমান। এখন আমরা এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি, এত সমৃদ্ধ ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই জাতি কিংবা অন্য যেকোনো জাতি এটি দীর্ঘকাল সহ্য করতে পারে কি-না সেই পরীক্ষায় ফেলে। আমাদেরকে এই যুদ্ধের একটি বিশাল ময়দানে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। আমরা এই ময়দানের একটি অংশ তাদের শয়নের জন্য উৎসর্গ করেছি যারা এজন্য জীবন দিয়েছিলেন; যেন এই জাতি বাঁচতে পারে। এটি খুবই যুক্তিসঙ্গত ও সঠিক যে, আমরা তা করব। তবে বৃহৎ দৃষ্টিতে এই ভূমিকে আমরা উৎসর্গ করতে পারি না; নিবেদন করতে পারি না এমনকি পবিত্র করতে পারি না। সাহসী মানুষগুলো, জীবিত কিংবা মৃত, যারা এখানে যুদ্ধ করেছেন, এই ভূমিকে পবিত্র করেছেন, আমাদের ক্ষীণ ক্ষমতা খুব সামান্যই তাতে যোগ কিংবা বিয়োগ করতে পারে। আমরা এখানে কী বলছি তার সামান্যই কিংবা কোন কিছুই হয়ত পৃথিবী মনে রাখবে না; তবে তারা যা করেছিলেন এই ভূমি কখনোই তা ভুলে যাবে না।  আমরা যারা এখন আছি তাদের বরং সেই অসমাপ্ত কাজে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হবে; যেগুলো এখানে যারা লড়াই করেছেন সেসব লোকেরা এমন মহানভাবে অর্পণ করেছেন। আমাদেরকে সামনে থাকা মহান কাজে উৎসর্গ হতে হবে– যেন যে উদ্দেশ্যে তারা তাদের আত্মত্যাগের শেষ বিন্দু পর্যন্ত দিয়েছেন ওই কাজে ওইসব মহিমান্বিত শহিদদের কাছ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত উৎসাহ নিই। আমরা যেন এই ভেবে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে পারি যে, এসব শহিদদের মৃত্যু বৃথা যাবে না। এই জাতি সৃষ্টিকর্তার অধীনে নতুন স্বাধীনতা লাভ করে এবং যেন জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার এবং জনগণের জন্য সরকার পৃথিবী থেকে হারিয়ে না যায়”। 

২৭২ শব্দের গেটিসবার্গ এড্রেস ভাষণ

 

পুত্রের শিক্ষককে লিখা বিখ্যাত চিঠি

১৮৬১ হতে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আব্রাহাম লিংকন তাঁর পুত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। যা পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক মর্যাদা লাভ করে। আজ থেকে প্রায় দেড়’শ বছর আগে তিনি তাঁর আট বছর বয়সী পুত্র জর্জ প্যাটেনের স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লেখেন ওই চিঠি। সেই চিঠির অংশ বিশেষ নিচে তুলে ধরা হল-

মাননীয় শিক্ষক,

দয়া করে যদি পারেন তবে আমার পুত্রকে আপনি নিজ হাতে ধরে যত্নের সাথে শেখাবেন তার যা যা শিখার দরকার জানার দরকার। তাকে শেখাবেন প্রত্যেক শত্রুর মাঝেই একজন বন্ধু থাকে। তাকে জানতে হবে যে সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, আর সবাই সৎও নয়। তবুও তাকে শেখাবেন যে প্রত্যেক খারাপ লোকের মাঝেই একজন নায়ক থাকে, প্রত্যেক অসৎ রাজনীতিবিদের মধ্যেই একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা থাকে। যদি পারেন তবে তাকে শেখাবেন ১ টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে ১০ পয়সা উপার্জন করা উত্তম। বিদ্যালয়ে নকল করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া উত্তম, তাকে শেখাবেন কিভাবে মর্যাদার সাথে হারতে হয় এবং হেরে যাওয়ার পর জয়ী হলে উপভোগ করতে হয়। তাকে শেখাবেন কড়া মূল্যে নিজের মেধা এবং গু কে বিক্রি করতে; কিন্তু সে যেন নিজের অন্তর ও আত্মার উপর কখনও মূল্য না বসায়। তাকে সাহস দিবেন অধৈর্য হওয়ার, ধৈর্য ধরতে বলবেন সাহসী হওয়ার জন্য। তাকে শেখাবেন নিজের উপর মহিমান্বিত আস্থা রাখতে, তাহলে সে ভবিষ্যতে মানুষ এবং ঈশ্বরের প্রতি আস্থাবান হবে। সবই আপনার জন্য নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সব কিছুর পরও দয়া করে এটা মনে রাখবেন যে, আপনি যতটুকু পারেন ততটুকুই করবেন, কারণ আর যাই হোক সে তো আমার ছোট্ট, সুন্দর পুত্র।  

আব্রাহাম লিংকন কি ধার্মিক ছিলেন?

প্রচণ্ডভাবে ধার্মিক একটি ব্যাপটিস্ট পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও আব্রাহাম লিংকন কোনো নির্দিষ্ট চার্চের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। বরং তিনি নিজেকে খ্রিস্টান বলে দাবি করতেন। তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ প্রটেস্টান্ট চার্চে যেতেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর তিনি স্ত্রীসহ নিউ ইয়র্ক এভিনিউয়ের প্রেসবিটারিয়ান চার্চে যেতেন বলে জানা যায়। তিনি একজন আধ্যাত্মিক জ্ঞানসম্পন্ন লোক ছিলেন বলে অনেকের বিশ্বাস। তবে লিংকন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন এবং তিনি এটাও বিশ্বাস করতেন যে যা কপালে লিখা আছে তা হবেই।

আব্রাহাম লিংকনের নাটকীয় মৃত্যু

 শিল্পীর তুলিতে লিংকনের গুপ্তহত্যা

 

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর লিংকন বেশিদিন ক্ষমতায় ছিলেন না।  নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরই তিনি আততায়ীর হাতে খুন হন।  ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল ফোর্ড থিয়েটারে একটি অনুষ্ঠানে নাটক দেখতে যান তিনি।  নাটক চলাকালীন শহরের বিখ্যাত অভিনেতা জন উইলকেস বোথ ঢুকলেন প্রেসিডেন্ট বক্সে এবং তার .৪৪-ক্যালিবার দিয়ে গুলি করলেন প্রেসিডেন্টের মাথার পেছন বরাবর। তারপর প্রেসিডেন্টের সাথে থাকা সিনেট কন্যা ক্লারা হ্যারিস এবং তার বাগদত্তা আর্মি অফিসার হেনরি রাথবোনকে ছুরিঘাত করে লাফিয়ে পড়লেন স্টেজে।  এরপর ভাঙা পা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঘোড়ায় চড়ে পলায়ন করলেন। দর্শকগণ পুরোটাই নাটকের অংশ ভেবে অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু একসময় তাদের ভুল ভাঙল ফার্স্ট লেডির চিৎকারে। ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হলো পাশের বাড়িতে। আব্রাহামের বলিষ্ঠ দেহ যুদ্ধ করল ৯ ঘণ্টা ধরে। সকাল ৭টায় অজ্ঞান অবস্থায়ই আব্রাহাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।