পূর্ণতা পায়নি স্বাধীনতা: আজও নারীর পোশাক পরেন জমশেদ
নাম জমশেদ আলী। যদিও পরিচিতাটা জঙ্গু পাগলা হিসেবেই বেশি। দীর্ঘদিন ধরেই পরে আছেন নারীর পোশাক। সেই সঙ্গে কাঁধে রেখেছেন কাঠের বন্দুক। জঙ্গু মনে করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে বীর হিসেবে নয়, নারী হিসেবে মনে করি। যেদিন সব যুদ্ধাপরাধীর বিচারকার্য শেষ হবে, সেদিন তিনি তার গায়ে জড়ানো নারীর সব পোশাক খুলবেন, নয়তো নয়। যতদূর জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চট্টগ্রামে ব্যাটেলিয়নে থাকা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সংবাদ শুনে জ্ঞান হারান। এরপর আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
জঙ্গু মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা প্রমাণ করে দেশ এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে স্বাধীন হয়নি। যতদিন পর্যন্ত এসবের বিচার না হবে, ততদিন পর্যন্ত তিনি কাঁধে কাঠের বানানো বন্দুক রাখবেন। রক্তের চিহ্নস্বরূপ সেলাইহীন লালসালু পরে থাকবেন। গায়ে সাবান দেবেন না এবং নদীর স্রোতে গোসল করবেন। আজও তাই করে আসছেন তিনি।
জানা যায়, শেরপুরের নকলা উপজেলার বাছুরআলগা গ্রামের মৃত শমসের আলীর তিন ছেলে-এক মেয়ের মধ্যে জমশেদ আলী (জঙ্গু পাগলা) ছোট। ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করে ৫ বছর বয়সে বাবাহারা হন তিনি। তৎকালীন আইনে বাবার আগে ছেলে মারা গেলে নাতি-নাতনিরা বেওয়ারিশ হয়ে যেত। ওই আইনের ফাঁকে জমশেদ আলী ভূমিহীন হন। জীবন বাঁচাতে কিচ্ছা গানের বয়াতি হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন নিজেকে। এতে সফলও হন। বয়াতি হিসেবে খুব দ্রুত সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তার।
এ অবস্থায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে ১১নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের ও কোম্পানি কমান্ডার আবুল মনছুরের অধীনে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ৯ ডিসেম্বর নকলাকে শত্রুমুক্ত করেন তারা। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত রক্ষী বাহিনীতে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম ১নং ব্যাটালিয়নে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সংবাদ শুনে তিনি কোমায় চলে যান। জ্ঞান ফিরলেও স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেননি তিনি। ওই দিন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার চেয়ে আসছিলেন। বিচার চাওয়ার অপরাধে তাকে দীর্ঘদিন ডিপার্টমেন্ট অব আর্মি কোয়ার্টার গার্ডে রাখা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে যায়। প্রথমে জন্মদাতা বাবা, তারপর ভূমিহীন, অতঃপর আত্মিক বাবা বঙ্গবন্ধুকে এবং পর্যায়ক্রমে স্ত্রী ও মাসহ একে একে সব হারিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা জমশেদ আলী স্থায়ীভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।