হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ, এবার নেই তেমন কোনো আয়োজন
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর)। ১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে একজন জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। প্রতিবছর তার জন্মদিন ঘিরে আয়োজিত হতো নানা অনুষ্ঠান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়োজন করতো আনন্দ-উৎসব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার নেই তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য আয়োজন।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে মৃত্যু অবধি তিনি লিখেছেন মনোমুগ্ধকর সব গল্প-উপন্যাস। তার লেখা বইগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার তৈরি করা চরিত্র হিমু, মিসির আলি ও শুভ্র পাঠকদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান হুমায়ূন আহমেদ । বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। খ্যাতিমান কম্পিউটার বিজ্ঞানী, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
ব্যক্তিজীবনে আপাতদৃষ্টিতে গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তবে কিছুক্ষণ মেশার পর, কথা বলার পরই বোঝা যেত, এই গাম্ভীর্যের আড়ালেই সতত বয়ে চলেছে স্নেহ-ভালোবাসা আর রসবোধের ফল্গুধারা। ব্যক্তিজীবনে তিনি খুবই রসিক ছিলেন। আর এই হাস্যরসের মধ্য দিয়ে তিনি তার সৃষ্টিতে তুলে এনেছেন মধ্যবিত্তের হাসি-কান্না আর যাপিত জীবন। কথাসাহিত্যে প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটলেও তিনি শুরু করেছিলেন কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, ছোটদের জন্য লেখা সায়েন্স ফিকশন, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন সেখানেই ফলেছে সোনা, মণি-মুক্তা।
পলিমার কেমেস্ট্রিতে আমেরিকার নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করে হুমায়ূন আহমেদ নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যাপনা করেন। এরপর সাহিত্য রচনাকেই তিনি তার প্রধান কাজ হিসেবে গ্রহণ করেন। একাধারে তিনি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা, টেলিভিশন নাটক রচনা ও পরিচালনা করেন।
বাংলা সাহিত্যের এই জনপ্রিয় লেখক নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আকাশচুম্বী জনপ্রিয় এই লেখকের প্রয়াণে পুরো নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। তার মরদেহ দেশে আনা হয় ২৩ জুলাই। বিমানবন্দর থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশে কফিন সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে। লাখো মানুষের অশ্রু-পুষ্প ও ভালোবাসায় সিক্ত হন জননন্দিত এই লেখক-নির্মাতা। পরদিন তার মরদেহ সমাহিত করা হয় তারই গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।