২৮ জুন ২০২৪, ২০:৩৪

‘বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির কথা না শোনায়’ পদত্যাগ করেছিলেন অধ্যাপক সালেহ

অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ  © সংগৃহীত

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তীব্র আন্দোলনের মুখে কেউ কেউ তাদের গদি ছাড়তে না চাইলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় তারা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। এছাড়া ক্যাম্পাসগুলোতে হরহামেশাই যেকোনো আন্দোলনে পদত্যাগের দাবি উঠে উপাচার্যের।

তবে কোনো বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কিংবা চাপে নয়, স্বেচ্ছায় উপাচার্যের এ চেয়ার থেকে সরে গিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ। এমন পদত্যাগের কারণও অবশ্য জানিয়ে গিয়েছিলেন মৃত্যুর আগে। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি উপাচার্যকে রেখে অন্যের কথা মতো চলে, তাহলে উপাচার্য থেকে কোনো লাভ নেই।

অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) মারা গেছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যাপক সালেহ ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন।

মানবিক শিক্ষক হিসেবে পরিচিত কাজী সালেহ আহমেদ নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি ছিলেন একনিষ্ঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান এবং এ পদের যে একটি নিজস্বতা ও স্বকীয়তা আছে—তা তিনি প্রমাণ করে গেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করতে সর্বদা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

তিনি উপাচার্য পদের যথাযোগ্য মর্যাদা নিশ্চিত করতে না পারায় পদত্যাগ করেছিলেন। স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তই যেন তার অনেক বড় প্রাপ্তি। তিনি সেটিই দেখিয়ে গেছেন। মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘শুধুই জাহাঙ্গীরনগর’ নামে একটি স্যোশাল প্ল্যাটফর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যদের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণের একটি অনলাইন প্রোগ্রামে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সেসময় উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত। আমি যখন পদত্যাগ করি, তখন অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি কেন পদত্যাগ করেছেন? তখন আমি বলেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয় যদি ভাইস চ্যান্সেলরের কথা মতো না চলে অন্য কারোর কথায় চলে, তাহলে আমার এই পদে থেকে লাভ নেই। 

উপাচার্য পদে থেকেও শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। অধ্যাপক সালেহ আহমেদ বলেন, সেসময় একবার শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছিল। তখন এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে থেকেও শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার নিশ্চিত করতে না পারা তার কাছে ছিল ‘খারাপ দৃষ্টান্ত’। তিনি বলেন, যদিও অনেকেই তখন আমাকে বলেছিলেন আপনার বিরুদ্ধে তো শিক্ষকরা পদত্যাগ পত্র চায়নি। তবুও পদত্যাগ কেন করেছেন? তখন আমি বলেছিলাম আমি উপাচার্য থাকা অবস্থায় শিক্ষকরা ছাত্রদের হাতে মার খেয়েছে। আমি যদি এর সুষ্ঠু বিচার না করতে পারি তাহলে উপাচার্য হিসেবে এটা একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম যদি সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস পাই, তবে আমি এই পদে থাকবো। কিন্তু আমি সেরকম কোনো আশ্বাস পাইনি। তখন আমি পদত্যাগ করি। এটা আমার এখনো মনে হয় যে উপাচার্য হিসেবে তখন আমি একটি বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।