মহাত্মা গান্ধী: অন্যরকম লড়াইয়ের জীবন
ভারতবর্ষে যে ক’জন মহামানবের জন্ম হয়েছে মহাত্মা গান্ধী তার মধ্যে অন্যতম। সত্যি বলতে কী, যুগে যুগে কিছু মানুষ আসেন যাদের নেতৃত্ব, দর্শন পাল্টে দেয় গোটা দুনিয়াকে। মানুষ খুঁজে পায় স্বাধীনতার স্বাদ। এক কথায় তারা অন্যরকম, একটু আলাদা। মহাত্মা গান্ধী তেমনই একজন কিংবদন্তি । আজীবন অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো ভারতবর্ষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন তিনি।
১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিন অর্থ্যাৎ ২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন মহাত্মা গান্ধী।
গুজরাটি প্রথা অনুযায়ী তার পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। মায়ের নাম পুতলীবাঈ। গান্ধী ছেলেবেলা থেকে বাবা মায়ের সাথে পোরবন্দরে ছিলেন। সেখানেই পাঠশালায় তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। যখন বয়স সাত বছর, তখন তাঁর বাবা রাজকোটের বিচারপতি হয়ে গেলেন। মাত্র তের বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন। গান্ধীর কাছে সে সময় জীবনসঙ্গী কন্তুরীবাঈ বা কন্তুরা ছিলেন তার খেলার সাথী। বিবাহের তিন বছরের মাথায় তাঁর বাবা মারা যান। ১৮৮৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়ে স্থানীয় কলেজে ভর্তি হলেন।
এই সময় তাঁর বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ার প্রবল ইচ্ছা হয়। কিন্তু তাঁর পরিবারের সকলে ছিলেন নিরামিষভোজী এবং রক্ষণশীল মনোভাবের। ছেলে বিলাতে গিয়ে বংশের নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাবে- এই আশঙ্কায় তাকে কেউ যাওয়ার অনুমতি দিতে চায় না। শেষ পর্যন্ত গান্ধীর বড় ভাই তাকে ব্যারিস্টারি পড়ার অনুমতি দিলেন। ১৮৮৮ সালে তিনি ইংল্যান্ডের পথে রওনা হলেন। অল্পদিনের মধ্যে তিনি নিজ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেন। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে ব্যারিষ্টার হন এবং জুন মাসে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার জন্য তাঁর জ্ঞাতিগোষ্ঠীর কিছু লোক তাঁকে জাতিচ্যুতের রায় দিয়েছিলেন। এ কারণে জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল।
গান্ধীজীর জন্ম এই বাড়িতেই
দেশে ফিরে প্রথমে তিনি বোম্বাই আদলতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু লাজুক থাকার কারণে এই আদালতে বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেননি। এরপর রাজকোটে ফিরে আসেন। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে তিনি এক বছরের জন্য দাদা আব্দুল্লাহ এ্যান্ড কোং. নামক একটি ভারতীয় কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে যান। এই কোম্পানির অংশীদার আব্দুল করিম জাভেরি তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত অফিসের মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। এরপর প্রায় ২১ বৎসর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতে কাটান। তিনি নাটালের সুপ্রিম কোর্টে সর্বপ্রথম ভারতীয় আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। সেসময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের ভোটাধিকার ছিল না। এই অধিকার আদায়ের বিল উত্থাপিত হলে, তা আদালত বাতিল করে দেয়। এই বিষয়টির সূত্রে তিনি সেদেশের ভারতীয়দেরকে অধিকার সচেতন করে তুলেছিলেন। ১৮৯৪ সালে তাঁর নেতৃত্বেেই নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে প্রথমেই তিনি ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শেতাঙ্গদের বৈষম্য আচরণ লক্ষ্য করেন। ১৮৯৫ সালে কিছু ঘটনায় তাঁকে ক্রমে ক্রমে প্রতিবাদী করে তোলে। এখানে তিনি একদিন ডারবানের আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট তার পাগড়ি সরিয়ে ফেলতে বলেন। গান্ধী তা অগ্রাহ্য করেন এবং এই কারণে আদালত থেকে বেরিয়ে পড়েন। পিটার ম্যারিজবার্গের একটি ট্রেনের ভ্রমণ করার সময় প্রথম শ্রেণীর বৈধ টিকিট থাকা স্বত্ত্বেও, প্রথম শ্রেণীর কামড়া থেকে তৃতীয় শ্রেণীর কামড়ায় যেতে বাধ্য করা হয়। স্টেজকোচে ভ্রমণের সময় এক ইউরোপীয় যাত্রীকে জায়গা না দেওয়ার জন্য করে দেয়ার জন্য তাঁকে ফুট বোর্ডে চড়তে বলা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আফ্রিকায় এক সংক্ষিপ্ত সফর করেন গান্ধী। এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের অধিকার নিয়ে ভারতে আন্দোলন করেন। এই কারণে ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে যখন তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আবার দক্ষিণ আফ্রিকা যান, তখন প্রবাসী ভারতীয়দের দ্বারা নেতা হিসাবে সম্বর্ধনা পান তিনি। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বেয়ার যুদ্ধের সময় তিনি ভারতীয়দের দ্বারা একটি এ্যাম্বুলেন্স বাহিনী গঠন করেন। এই কারণে যুদ্ধ পদক লাভ করেন। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে ফিরে আসেন। এসময় ট্র্যান্সভালে এশীয়দের বিরুদ্ধে আইন প্রবর্তনের বিপক্ষে আন্দোলন করেন। এ কারণে ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রবাসী ভারতীয়দের দ্বারা অনুরুদ্ধ হয়ে, আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যান। এবার তিনি ট্র্যান্সভালে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জোহান্সবার্গে প্লেগ দেখা দিলে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে জুলু বিদ্রোহ শুরু হলে আহতদের সেবার জন্য একটি ভারতীয় বাহিনী তৈরি করে সেবা প্রদান করেন।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে ডেপুটেশনে তিনি ইংল্যান্ড যান। নভেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জাহাজে ফিরবার সময়, তাঁর জীবনাদর্শ ও রাজনৈতিক মতবাদ সম্পর্কিত বই স্বরাজ রচনা করেন। এই গ্রন্থের অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন। তিনি ট্র্যান্সভালে জোহানিসবার্গের নিকট নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মীদের পরিবারের কর্মসসংস্থানের জন্য তলস্তয় নামক একটি খামার স্থাপন করেছিলেন। এই ফার্মের জন্য হেরম্যান কালেনবাক নামক একজন জার্মান স্থপতি এই খামারের জন্য ১১০০ একর জমি দান করেছিলেন।
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইনি ইউরোপীয় পোশাক এবং দুধ পরিত্যাগ করেন। এই সময় থেকে তিনি শুকনো ও তাজা ফল খেয়ে জীবন ধারণের অভ্যাস করা শুরু করেন। এছাড়া সপ্তাহে ১ দিন অভ্যাস করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ভারতীয়দের উপর মাথাপিছু ৩ পাউন্ড কর ধার্য করে। এই করারোপের প্রতিবাদে গান্ধীজী আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ২,০৪৭ জন পুরুষ, ১২৭ জন স্ত্রীলোক এবং ৫৭ জন ছেলেমেয়ে। এঁরা আন্দোলন করার জন্য ট্র্যান্সভালে প্রবেশ করলে, সরকার গান্ধীজীকে গ্রেফতার করে। এই আন্দোলনের কারণে তিনি দুই দফায় ৯ মাস ও ৩ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করেন।
এরপর তিনি ইংল্যান্ডে যান। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেখানে ভারতীয়দের দ্বারা একটি এ্যাম্বুলেন্স বাহিনী তৈরি করেছিলেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। যুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের সহায়তা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কাইসার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক প্রদান করে। এরপর ইনি ভারতে ফিরে আসেন এবং মে মাসে আহমেদাবাদ সবরমতী নদীর তীরে সত্যাগ্রহ আশ্রম স্থাপন করেন। ১৯১৫ -১৬ খ্রিষ্টাব্দে ইনি রেলপথে ভারত এবং বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার) ভ্রমণ করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের বিদেশ প্রেরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সাফল্য লাভ করেন। এই বৎসরেই চরকায় সুতা কেটে সেই সুতা থেকে কাপড় তৈরির ধারণা লাভ করেন। এপ্রিল মাসে বিহারের চম্পাবরণে নীলচাষীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। পরে তাঁকে মুক্তিও দেওয়া হয়। এরপর তিনি বিহার সরকার কর্তৃক রায়তদের অবস্থা অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন।
স্বাধীনতার সূচনা তাঁর হাতে
নিজের দেশ থেকে অপরের কর্তৃত্ব বিলীন করার নামই শুধু স্বাধীনতা নয়, এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় অনেক আগে থেকে। সে কাজটিই করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ১৯১৮ সালের চম্পারন বিক্ষোভ এবং খেদা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে তাঁর প্রথম অর্জন ঘটে। সে সময় মারাত্মক দুর্ভিক্ষের মাঝে ব্রিটিশরা একটি শোষণমূলক কর চালু করে এবং তা বাড়ানোর চেষ্টা চলে। এতে পরিস্থিতি প্রচণ্ড অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তখন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের জড়ো করে গ্রামবাসীর জন্য আশ্রম তৈরি করা হয়। গান্ধী জমিদারদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত বিক্ষোভ এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন। ১৯২২ সালের ১০ মার্চ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শাস্তির দুই বছরের মাথায় তাকে আবার মুক্তিও দেয়। হিন্দু-মুসলিমের অহিংস আন্দোলন চলাকালীন সৌহার্দ্যের ভাঙন ধরে। বিরোধ মেটাতে ১৯২৪ সালের শরৎকালে তিন সপ্তাহের অনশন করেন। স্বরাজ পার্টি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাঝে বাধা দূর করতে চেষ্টা করেন। অস্পৃশ্যতা, মদপান, অবজ্ঞা এবং দরিদ্রতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯২৮ সালে তিনি আবার সামনে এগিয়ে আসেন। এর আগের বছর ব্রিটিশ সরকার স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে একটি নতুন সংবিধান সংশোধনী কমিশন গঠন করে। গান্ধী কলকাতা কংগ্রেসে ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান, অন্যথায় নতুন অহিংস নীতির পাশাপাশি পূর্ণ স্বাধীনতার হুমকি দেন।
অধিকার আদায়ে আন্দোলনে গান্ধী
বিশ্বাস মূলনীতিতে
সত্য : নিজের জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং নিজের ওপর নিরীক্ষা চালিয়ে তা অর্জন করেছিলেন।
অহিংসা : গান্ধী জীবনীতে বলেন, ‘যখন আমি হতাশ হই, আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালোবাসার জয় হয়েছে। দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের অপরাজেয় মনে হলেও শেষ সবসময়ই তাদের পতন ঘটে মনে রাখবেন।
নিরামিষভোজন : নিরামিষভোজনের ওপর ‘দি মোরাল বেসিস অব ভেজিটেরিয়ানিজম বইসহ বেশকিছু নিবন্ধ লেখেন। নিরামিষ খাওয়ার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও মাঝে মাঝে যোগ দেন। গান্ধীর মতে, নিরামিষ শুধু শরীরের চাহিদাই মেটাবে না, এটি মাংসের প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যও পূরণ করবে।
ব্রহ্মচর্য : স্ত্রীর সঙ্গে প্রণয়ের কিছু পর বাবার মৃত্যুর সংবাদ আসে। ঘটনা তাঁর কাছে দ্বিগুণ লজ্জার হয়ে যায়। এই কারণটি গান্ধীকে ৩৬ বছর বয়সে বিবাহিত থাকা অবস্থায় ব্রহ্মচারী হতে বাধ্য করে। গান্ধীর কাছে ব্রহ্মচর্যের অর্থ চিন্তা, বাক্য ও কর্মের নিয়ন্ত্রণ।
বিশ্বাস : একজন সাধারণ হিন্দু হিসেবে তিনি সব ধর্মকে সমানভাবে বিবেচনা করতেন। এই ধারণা থেকে বিচ্যুত করার সব প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন। তিনি ব্রহ্মবাদে আগ্রহী ছিলেন এবং সব বড় ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
সরলতা : মহাত্মা গান্ধী প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি অবশ্যই সরল সাধারণ জীবন-যাপন করবে। তিনি নিজেও দক্ষিণ আফ্রিকায় যাপিত পশ্চিমা জীবনাচরণ ত্যাগ করার মাধ্যমে এর প্রমাণ দেন। এমন জীবনধারণ ব্যবস্থাকে শূন্যে নেমে যাওয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁর জীবনাচরণে ছিল অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলা, সাদামাটা জীবন-যাপন গ্রহণ এবং নিজের কাপড় নিজে ধোয়া।
পরিধানের বস্ত্র
গান্ধী স্বল্প বসনের মানুষ ছিলেন। আন্তর্জাতিক বৈঠকেও তিনি এই পোশাকে উপস্থিত হতেন। গান্ধীর জামাকাপড়ের হ্রস্বতা দেখে অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের মনে হয়েছিল, শীতের দেশে গান্ধী নিজেকে এমনভাবে প্রত্যক্ষ করে না-তুললেও পারতেন। কিন্তু উষ্ণ আবহাওয়া ও দরিদ্র ভারতীয়দের পোশাক ওই রকমেরই মামুলি হওয়া দরকার বলে তিনি ভাবতেন।
বহুমুখী লেখায় পারদর্শী
বহুমুখী লেখায় পারদর্শী মহাত্মা গান্ধী সম্পাদনা করেছেন গুজরাটি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার পত্রিকা ‘হরিজন’। তাঁর সম্পাদনায় গুজরাটি ভাষার মাসিকপত্র নবজীবন প্রকাশিত হতো। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন ও দেশে ফেরার পর ইয়ং ইন্ডিয়ার সম্পাদনা করেছেন। তাঁর লেখা চিঠি প্রতিদিনই কোনো না কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।
গান্ধীর বেশকিছু বইয়ের মধ্যে রয়েছে আত্মজীবনী, সত্যের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতার গল্প। দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রাম নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ স্বাধিকার বিষয়ে মেনিফেস্টো হিন্দি স্বরাজ ও গুজরাটি ভাষায় জন রাসকিন-এর টহঃড় ঞযরং খধংঃ রয়েছে। এ ছাড়া নিরামিষভোজন বিষয়েও প্রচুর লেখা আছে। ১৯৬০ দশকে ভারত সরকার গান্ধীর রচনাবলি দ্য কালেক্টেড ওয়ার্ক অব মহাত্মা গান্ধী প্রকাশ করে। বইটি শতাধিক খণ্ডে প্রকাশিত হয়।
যেভাবে খুন হন
দেশের মানুষের জন্য যারা জীবনের সব অর্জন উৎসর্গ করেন তাদের বলি হতে হয় নষ্টদের হাতে। তার প্রমাণ মহাত্মা গান্ধী নিজে। পশ্চাৎপদ ভারতীয়দের সামনে যিনি আলোর মশাল হাতে ছিলেন তাকেও ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি নয়াদিল্লিতে পথসভা করছিলেন। তাঁর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন একজন হিন্দু মৌলবাদী। নাথুরামের সঙ্গে চরমপন্থি হিন্দু মহাসভার যোগাযোগ ছিল। গডসে এবং সহায়তাকারী নারায়ণ আপতেকে পরবর্তীতে আইনের আওতায় এনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়। নয়াদিল্লির রাজঘাটের স্মৃতিসৌধে লেখা ‘ও ঈশ্বর’ শব্দ দুটিকে গান্ধীর শেষ কথা বলে বিশ্বাস করা হয়। গান্ধীর ইচ্ছানুযায়ী তাঁর দেহভস্ম বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রধান নদী যেমন- নীল নদ, ভোলগা, টেমস প্রভৃতিতে ভাসানো হয়। এরপর তাঁর দেহভস্ম সেলফ রিয়ালাইজেশন ফেলোশিপ লেক স্রাইনের মহাত্মা গান্ধী বিশ্বশান্তি সৌধে একটি হাজার বছরের পুরনো চৈনিক পাথরের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।
সূত্র : বাংলা বিশ্বকোষ, দ্বিতীয় খণ্ড। নওরোজ কিতাবিস্তান। ডিসেম্বর ১৯৭৫।
আমি সুভাষ বলছি। শৈলেশ দে এবং অন্যান্য