শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন অধ্যক্ষ নুরুল আমিন
ভোলা জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরফ্যাশন কারামাতিয়া কামিল (এমএ) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল আমিন। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চরফ্যাশন তথা পুরো জেলায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ চার যুগ ধরে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারই পিতা মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। পিতার পথ ধরেই তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করেছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে। সম্পৃক্ত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে। মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল আমিন অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শিক্ষার মান বাড়ছে প্রতিষ্ঠানটিতে। একাডেমিক সংস্কার থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়নও হচ্ছে তার নেতৃত্বে।
জানা গেছে, মাওলানা মুহাম্মদ নূরুল আমিন ১৯৯১ সালে দাখিল প্রথম বিভাগ, ১৯৯৩ সালে আলিমে প্রথম বিভাগ, ১৯৯৫ সালে ফাযিলে ২য় শ্রেণি ও ১৯৯৭ সালে কামিলে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পর ১৯৯৬ সালে ভোলা সরকারি কলেজ থেকে বি.এ (প্রাইভেট) পরীক্ষা ও ১৯৯৮ সালে সরকারি কবি নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এম.এ (প্রাইভেট) পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
কামিল শ্রেণিতে লেখাপড়া শেষ করে মুহাম্মদ নূরুল আমিন চরফ্যাশনের ঐতিহ্যবাহী চরফ্যাশন কারামাতিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসায় ১৫ এপ্রিল ১৯৯৮ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে।
এরপর ১৬ অক্টোবর ২০১০ সালে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন তিনি। পরবর্তীতে ২১ নভেম্বর ২০২১ সাল একই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেন। তার প্রচেষ্টায় মাদ্রাসার একাডেমিক কার্যক্রমের উন্নয়নের পাশাপাশি মাদ্রাসার মার্কেটের নতুন ভবনের কাজ এগিয়ে চলছে।
বর্তমানে তিনি চরফ্যাশনের ঐতিহ্যবাহী হাজারীগঞ্জ হামিদিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ও কুচিয়ামোড়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সদস্য এবং উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্য হিসেবেও নিয়োজিত রয়েছেন।
চরফ্যাশন পৌর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আহাদ আলী মাঝি বাড়ির দরজার বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নূরুল আমিন মাদ্রাসা শিক্ষকদের বৃহত্তর সংগঠন স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের (স্বামাশিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতায়ও রয়েছে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ার।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নূরুল আমিন ইতিপূর্বে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বহুল প্রচারিত শীর্ষবাণী ডট কম ও চট্টলানিউজ ডট কম নামে দু'টি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়াও তিনি চরফ্যাশনে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গেও সম্পৃক্ত।
প্রসঙ্গত, চরফ্যাশন কারামাতিয়া কামিল (এমএ) মাদ্রাসাটি বর্তমানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত একটি আলিয়া মাদ্রাসা। ২০১৯ সালে মাদ্রাসাটিতে অনার্স কোর্স চালু হয় এবং এটি বাংলাদেশের অনার্স কোর্স চালু থাকা ৩১টি মাদ্রাসার মধ্যে অন্যতম। ১৯৪৫ সালে চরফ্যাশন উপজেলার স্থানীয় ইসলামি শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের উদ্যোগে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথম দিকে মাদ্রাসার কার্যক্রম স্থানীয়রা সহযোগিতা করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে মাদ্রাসাটি সরকারি এমপিও ভুক্তি লাভ করে।
১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে মাদ্রাসার ব্যাপক উন্নতি লাভ হয় এবং ধীরে ধীরে এটিকে কামিল মাদ্রাসায় উন্নীত করা হয়। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের সকল আলিয়া মাদ্রাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধিভুক্ত হয়। এরপরে ২০১৬ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও আধুনিকীরণ করার জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং আলিয়া মাদ্রাসাগুলোকে প্রতিষ্ঠানটির আওতায় স্থানান্তরিত করা হয়।
মাদ্রাসাটিতে ইবতেদায়ী থেকে শুরু করে আলিয়া মাদ্রাসার সর্বোচ্চ পর্যায় কামিল শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। এই মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম পর্যায়ে বিজ্ঞান ও মানবিক উভয় শাখা রয়েছে এবং ফাজিল পর্যায়ে আল কুরআন ও ইসলামি অধ্যয়ন, আল হাদিস ও ইসলামি অধ্যয়ন, দাওয়াহ প্রভৃতি বিভাগ চালু আছে। এছাড়াও কামিল পর্যায়ে আল কুরআন ও আল হাদিস নিয়ে উচ্চ পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
২০১১ সালে মাদ্রাসায় আল হাদিস বিভাগে অনার্স কোর্স চালু করেছে। এই মাদ্রাসা আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন একটি মাদ্রাসা। ছাত্রদের খেলার মা , পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরি, মেয়েদের অবসর কাটানোর জন্য কমন রুমসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। মাদ্রাসার চারিদিকে দেয়ালের মাঝখানে শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য সুবিশাল মাঠ রয়েছে। এখানে অবসর সময়ে ও পাঠদান শেষে মাদ্রাসার ছাত্ররা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখানে খেলাধুলা করে থাকে। এই মাদ্রাসার ছাত্ররা খেলাধুলায় অগ্রগণ্য।
মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত লাইব্রেরি রয়েছে। দাখিল থেকে শুরু করে কামিল পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীরা এখান থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। ফাজিল ও কামিল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর গবেষণাধর্মী বই রয়েছে। মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের গবেষণা ও ল্যাব ক্লাস করার জন্য মাদ্রাসায় বিজ্ঞানামা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে ছাত্ররা পাঠদান সময় ছাড়াও অবসর সময়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে।