শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি পেলেন মধুর ক্যান্টিনের ‘মধুদা’

মধুর ক্যান্টিন ও মধুদা
মধুর ক্যান্টিন ও মধুদা  © সংগৃহীত

শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি পেলেন মধুসূদন দে। যাকে সবাই ডাকতো ‘মধুদা’ নামে। যিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকার সাধারণ ‘চা দোকানি’। কিন্তু স্বাধিকার আন্দোলনে ঢাবি ছাত্রদের ভূমিকায় তার ছিল প্রভাব। তাই তো পেশাগত পরিচয়ের বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রমীভাবে তাকে দেওয়া হলো বুদ্ধিজীবীর মর্যাদা।

রবিবার (২৪ মার্চ) প্রকাশ করা হয়েছে আরও ১১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা। এ নিয়ে চার দফায় ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করলো সরকার। এ পর্বের তালিকায় মধুদাকে আন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ ধাপে ১১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

এ তালিকার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, (শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করার ক্ষেত্রে) আমরা দু’এক জায়গায় ব্যতিক্রম করেছি। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুদা, ইনি শিক্ষক, লেখক কিংবা গবেষকও না, শিল্পীও না। উনি এমন একজন ব্যক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই ওনাকে চেনেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক দেশ স্বাধীন সংক্রান্ত যত আন্দোলন হয়েছে, সেখানে ওনার একটা অনন্য ভূমিকা ছিল।

তিনি বলেন, এ রকম কিছু ব্যক্তি বিশেষ বিবেচনায় গেছে (তালিকায় অন্তর্ভুক্ত)। উনি (মধুদা) সাধারণ একজন চায়ের দোকানদার। তিনি আবার বৃদ্ধিজীবী হয় কী করে! কিন্তু ওনার যে অবদান ২৩ বছরে যত নেতাকর্মী দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন, উনি তাদের সহযোগিতা করেছেন। বিনা পয়সায় চা খাইয়েছেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, তালিকা করার ক্ষেত্রে আমরা আর ব্যতিক্রম করিনি। একটাই করেছি, মধুদারটা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত তার একটা সনদও আছে, যেখানে বঙ্গবন্ধু তাকে (মধুদা) বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

তালিকায় মধুসূধন দে বা মধুদার বাবার নাম লেখা হয়েছে আদিত্ত্ব চন্দ্র দে, মায়ের নাম লেখা হয়েছে যোগমায়া দে। গ্রাম বা মহল্লা-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, থানা-রমনা, জেলা-ঢাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কলাভবনের উত্তর-পূর্বদিকে যে রেস্তোরাঁ, মধুদার নামেই এর নাম হয়েছে। মধুদার সেই রেস্তোরাঁ এখন সবার কাছে ‘মধুর ক্যান্টিন’ নামে পরিচিত।

মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী নানা আন্দোলনে তার ছিল পদচারণা। সব ছাত্রনেতাই মধুর ক্যান্টিনে বসে রাজনৈতিক কাজকর্ম চালাতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান-পর্বে তার রেস্তোরায়ঁ অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পরিকল্পনা হয়েছে। এ কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শত্রুতে পরিণত হন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী তাকে জগন্নাথ হল থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং সেই রাত্রেই হত্যা করে।


সর্বশেষ সংবাদ