পরিবেশ সুন্দর রাখতে মিশুর খেলনা দেয়ালের উদ্যোগ
উন্মাদ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক মোর্শেদ মিশু একজন কার্টুনিস্টও। এর পাশাপাশি করেন অভিনয় ও উপস্থাপনাও। সামাজিক অনেক কাজের জন্য বিভিন্ন সময় এসেছেন আলোচনায়। সাহসী সব কাজ করে তিনি জয় করে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের মন।
সম্প্রতি 'খালে হবে' প্রজেক্টের কাজের অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুরের একটি খাল পরিষ্কার করে মিশু ও তার দল অলোচনায় ছিলেন। এছাড়া তার আরও বিভিন্ন কাজে মুগ্ধ হয়েছে এবং পাশেও থেকেছেন মানুষ। এসব কাজের ধারাবাহিকতায় এবার তার ভিন্নধর্মী এক উদ্যোগ সাড়া ফেলে মানুষের মাঝে।
পরিবেশ সুন্দর রাখতে গত ক্রিসমাসের দিনেই মিরপুর ১৪ এর ইব্রাহিমপুর আদর্শ পল্লীর একটি দেয়াল রাঙিয়েছেন তিনি আর তার দল। রাঙানো হলো দেয়াল। রঙ করার পাশাপাশি দেয়ালে সাজিয়েছেন শিশুদের বিভিন্ন খেলনাসমগ্রী। শিশুরা বেছে নিতে পারে সেসব খেলনা। তবে শর্ত একটাই, একই সময়ে অনেকগুলো খেলনা নেওয়া যাবে না, একজন কেবল একটি খেলনাই নিতে পারবে।
এক দুপুরে তারা কিছু তরুণ সেখানে হাজির হলেন। সাথে তাদের বস্তাবন্দি জিনিসপত্র। গলির একটি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলেন কীভাবে এটি নতুন করে সাজানো যায়। শুরু হলো রঙ দিয়ে রাঙিয়ে তোলার কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই জীর্ণ সে দেয়াল সেজে উঠল টকটকে লাল রঙে। সাথে এঁটে দেওয়া হলো কাঠের তৈরি একটি শেল্ফ। এর প্রতিটি তাকে সাজিয়ে রাখা হলো লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি রঙের হরেক রকম খেলনা। শুধু কি তাই? বড় বড় অক্ষরে লেখা হলো নামও। পুরনো সে দেয়ালের নতুন নাম 'ফেলনা খেলনা টেলনা দেয়াল'। এর নিচের দিকে ছোট অক্ষরে লেখা-
'প্রিয় ছোট্ট বন্ধু,
আপনার পুরনো খেলনা এখানে দিয়ে যান,
ছোট্ট বন্ধুর জন্য পছন্দের খেলনাটি নিয়ে যান প্লিজ।'
দেড় বছর আগে থেকে এসব কাজ শুরু করেন তিনি। তখন একদিন পণ করে বসেন রাজধানী ঢাকার ২০০টি জায়গা ময়লামুক্ত করবেন তিনি। সানন্দেই এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালেই তিনটি প্রজেক্টের কাজ শেষ করেন। 'ফেলনা খেলনা টেলনা দেয়াল' সেগুলোর একটি।
এ বিষয়ে মোর্শেদ মিশু বলছিলেন, কাহিনির শুরু মেহেদি ভাইয়ের মাধ্যমে। দিন কয়েক আগে আমার ফোনে তার কল আসে। ফোন ধরেই ওপাশ থেকে মেহেদি ভাই বলে উঠলেন, 'মিশু, একজন চমৎকার মানুষ কিছু খেলনা পাঠিয়েছে, অমুক জায়গায় দিতে চাই, কী বলিস?'। ব্যস, আমার মাথায় ঢুকে গেল বিষয়টা। ভাবতে ভাবতে একটা আইডিয়াও এলো। ভাবলাম খেলনার একটা দেয়াল হলে কেমন হয়? যেই চিন্তা সেই কাজ। নেমে পড়লাম কাজে। সাথে বন্ধু, বড় ভাই, ছোট ভাই অনেকেই এগিয়ে আসে। শুরুটা হয় ঠিক এভাবেই।'
দেয়াল রঙ করার শুরুটা হয় মিশুর নিজ বাসার সামনে একটি দেয়াল রাঙানোর মাধ্যমে। ময়লা জমে স্তূপ হয়ে ছিল দেয়ালটি। বিষয়টি ছিল বেশ অস্বস্তির। বাসার নিচে চায়ের দোকান। চা খেতে গেলেই প্রায় তার চোখে পড়ত সেটি। দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে চলাই যেন কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর থেকে মুক্তির চেষ্টায় কাজ করতে থাকেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে সাহায্যের আবেদন। এগিয়ে আসে বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই। কেউ রঙ দিয়ে সাহায্য করেন, কেউ আবার অর্থ দিয়ে।