নতুন শিক্ষামন্ত্রীর রাজনৈতিক-শিক্ষাগত পরিচয়
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। গতবারের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ছিলেন নওফেল। এবার তিনি একই মন্ত্রণালয়ের পূূর্ণমন্ত্রী হলেন। আর গতবারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে এবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গভবনে শপথের মধ্যদিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অভিষেক হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়ান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্ব পাওয়া নওফেলের রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। তিনি প্রয়াত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর বড় ছেলে। নওফেল এবার চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩য় মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী ও মাতা শাহেদা মহিউদ্দিন। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক পাস করে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি সম্পূর্ণ করেন। নওফেল ঢাকা বারের আইনজীবীও। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় টিভির তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সম্ভ্রান্ত ও প্রথিতযশা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা মরহুম আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন।
তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং চট্টগ্রামের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে তিন-তিনবার বিজয়ী হয়ে জনকল্যাণে কাজ করে সারা দেশব্যাপী প্রশংসিত হন।
এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে শেখ ফজলুল হক মনির সহকর্মী ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে দীর্ঘদিন এই নৃশংস হত্যার রাজনৈতিক প্রতিবাদে অংশ নেন। এরপর শেখ হাসিনার সাথে নিবিড়ভাবে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন।
পারিবারিক ধারাবাহিকতায় মহিবুল হাসান চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমে শৈশবই সম্পৃক্ত হন। "আমরা রাসেল" নামক একটি শিশু-কিশোর সংগঠনে তিনি তার পিতার উৎসাহে সম্পৃক্ত হয়ে শেখ রাসেল হত্যার বিচারে শিশু-কিশোরদের সমাবেশ ও সৃষ্টিশীল কাজের সাথে যুক্ত হন।
তিনি তার পিতার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমসমূহ দেখার এবং সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পান। পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন এবং এক-এগারোকালীন সময়ে শেখ হাসিনার মুক্তির বিষয়ে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এরপর ২০১২ সালে আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনকালে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্পৃক্ত করার জন্য যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী উদ্যোগী হন। এরপর ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিতে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়।
২০১৬ সালের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ষোড়শ কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। নওফেল ঢাকা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের বিজয়ী হওয়ার পেছনে নিরলসভাবে কাজ করেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, শরীয়তপুর এবং ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।