সোমবার জাতীয় কবির ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ৭৭ বছর বয়সে বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত এ মনীষা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সোমবার সকাল থেকেই তার কবরে ফুলে ফুলে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দেশের অগণিত ভক্ত।
১৮৯৯ সালের ১৪ মে (১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২
সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে সপরিবারে কবি নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ‘জাতীয় কবি’র মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
কবির ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাবি কর্তৃপক্ষ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সোমবার বাদ ফজর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআনখানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জমায়েত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল সোয়া ৭টায় শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির মৃত্যুদিবস পালন করবে নজরুল ইনস্টিটিউট। সোমবার সকাল ৭টায় কবির সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের কর্মসূচি শুরু হবে। বিকাল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘নজরুল পুরস্কার ২০১৭’ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর নজরুল সংগীতে অবদানের জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন খায়রুল আনাম শাকিল ও নজরুল সংগীত গবেষণায় প্রফেসর ড. রশিদুন নবী। পুরস্কার হিসেবে ১ লাখ টাকা, ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।
নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ ও ঢাবির প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ইয়াকুব আলী খান, ড. লীনা তাপসী খান, ছন্দা চক্রবর্তী, নার্গিস পারভিন বনি, লুৎফুন্নাহার পাখি, গোলজার হোসেন উজ্জ্বল, সুদাম কুমার বিশ্বাস। আবৃত্তি করবেন লায়লা তারান্নুম কাকলী, পত্রপাঠে অংশ নিবেন স্নিগ্ধা বাউল। এছাড়া দলীয় সংগীত পরিবেশন করবেন নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণার্থী ও আজনবী সংগীত একাডেমির শিল্পীরা।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সোমবার সকাল ৭টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নজরুলকাব্যে মিথিক-ঐতিহ্যিক প্রতিমা : ফিরে দেখা শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
কবির ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে সোমবার সকাল ৮টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কবির মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।