১৪ আগস্ট ২০২৩, ২২:৩৮

মানবতাবিরোধী যত অপরাধে দণ্ডিত সাঈদী

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী  © ফাইল ছবি

জামায়েত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসহ ২০টি অভিযোগ তোলা হয়। এর মধ্যে ৮টি অভিযোগের সততা পায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রথমে মৃত্যদন্ড দেয়া হলেও পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আপিল বিভাগ।

সোমবার (১৪ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএসএমইউ) তিনি মারা যান। বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান সোমবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

আরও পড়ুনঃ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন

এর আগে গতকাল রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিএসএসএমইউতে পাঠানো হয়।

একনজরে ২০ অভিযোগ 

অভিযোগ ১- সাঈদী ২০অজ্ঞাতনামা নিরস্ত্র ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে
অভিযোগ ২- মাছিমপুর হিন্দুপাড়ায় ঘরবাড়ি লুট করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং ভীতসন্ত্রস্ত নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে প্রকাশ্যে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ১৩ জনকে খুন
অভিযোগ ৩- বিভিন্ন গ্রামে রাস্তা পাশের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে বড় ধরণের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো
অভিযোগ ৪- হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংসের জন্য নির্বিচারে অজ্ঞাতনামা হিন্দু বেসামরিক মানুষের উপর গুলি করা
অভিযোগ ৫- তিন বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান, পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত এসডিও আবদুর রাজ্জাককে গুলি করে লাশ বলেশ্বর নদে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ
অভিযোগ ৬- বাড়ি ও দোকানে হানা দিয়ে স্বর্ণ ও রৌপ্যসহ মূল্যবান সম্পদ লুট
অভিযোগ ৭- মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম সেলিমকে নির্যাতন ও তাঁর বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ।
অভিযোগ ৮- একাত্তরের ৮ মে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা এবং পিরোজপুরের পারেরহাট এলাকায় হিন্দুদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ।
অভিযোগ ১০- একাত্তরের ২ জুন বিসাবালিকে হত্যা এবং উমেদপুর হিন্দুপাড়ার ২৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।
অভিযোগ ১১- মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে হামলা ও লুণ্ঠন।
অভিযোগ ১৪- মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় এক নারীকে ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ।
অভিযোগ ১৫- হোগলাবুনিয়া গ্রামের তরণী শিকদার, নির্মল শিকদার, শ্যামকান্ত শিকদার, বাণীকান্ত শিকদার, হরলাল শিকদার, প্রকাশ শিকদারসহ ১০ জন হিন্দু নাগরিককে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে সোপর্দ করা এবং হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
অভিযোগ ১৬- তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণ।
অভিযোগ ১৭- পারেরহাটের বিপ্লব সাহার মেয়েকে বাড়িতে আটকে রেখে নিয়মিত ধর্ষণ
অভিযোগ ১৮- পাকিস্তানি বাহিনী সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ভাগিরথি নামক পাকিস্তানি সেনাক্যাম্প কর্মীকে আটক করে নির্যাতন এবং হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া 
অভিযোগ ১৯- প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ হিন্দুকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা।
অভিযোগ ২০- পরিকল্পিতভাবে ইন্দুরকানি গ্রামের তালুকদার বাড়িতে হামলাসহ ৮৫ জনকে আটক করা। পরবর্তীতে পুরুষদের নির্যাতন এবং খগেন্দ্রনাথ সাহার মেয়ে দীপালি, স্ত্রী নিভারাণী, রাজবল্লভ সাহার মেয়ে মায়ারাণীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়, যারা ক্যাম্পে ধর্ষণের শিকার হন।

ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। প্রমাণিত না হওয়া ১২টি অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হয়।

১ থেকে ৫ এবং ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এর মধ্যে গণহত্যার চারটি (২, ৪, ১২, ১৫), ধর্ষণের দুটি (১৭ ও ২০) ও হত্যার (১, ৫, ১৩ ও ১৮) চারটি অভিযোগ। বাকি দুটি অভিযোগ ছিল লুটপাটের।

১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। একই অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে তাঁকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৭ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ।

গত ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে সাঈদী গ্রেপ্তার হন।পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর প্রথম ব্যক্তি হিসাবে সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০ অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থা ১৫টি খণ্ডে ৪ হাজার ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে সাঈদীর বিরুদ্ধে এসব অপরাধের অভিযোগ আনে।