ঢাবির গ্র্যাজুয়েট আজমত হারলেন স্বশিক্ষিত জায়েদার কাছে
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইতিহাস তৈরি করে জয়লাভ করেছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘড়ি প্রতীকে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে ভোট পেয়ে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে প্রায় ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি।
দেশের ইতিহাসে জায়েদা খাতুন দ্বিতীয় নারী সিটি করপোরেশন মেয়র। এর আগে নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনে আইভি রহমান প্রথম নারী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জায়েদা খাতুনের গৃহিণী থেকে নগরমাতা হয়ে ওঠার গল্প যেনো হার মানিয়েছে সিনেমার কাহিনীকেও। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের কয়েক দশকের রাজনীতির অভিজ্ঞতাও হার মেনেছে রাজনীতিতে পদচারণাহীন এই গৃহিণী ও স্বশিক্ষিতের কাছে।
হলফনামা সূত্রে জানা যায়, জায়েদা খাতুন গৃহিণী ও স্বশিক্ষিত। তার জন্ম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কানাইয়া এলাকায় ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। জাহাঙ্গীর আলমসহ তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।
জায়েদার স্বামী মো. মিজানুর রহমান পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য নেই। গৃহিণী থেকে একটি নগরীর দায়িত্বে যাওয়ার আগে নির্বাচন তো দূরের কথা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি তিনি। এমনকি রাজনীতি বা সামাজিক কোন ক্ষেত্রে তার নাম শোনা যায়নি।
হলফনামায় জায়েদার পেশা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ‘ব্যবসা’, যা থেকে বছরে আয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ অর্থ দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা। ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে শেয়ারমূল্য দেখিয়েছেন দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।
স্বর্ণালংকার দেখানো হয়েছে ৩০ তোলা। ইলেকট্রনিকসামগ্রী এক লাখ ৫০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র এক লাখ ২০ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পদ কিংবা কোনো ঋণের কথা উল্লেখ নেই হলফনামায়।
অপরদিকে জায়েদা খাতুনের নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের আজমত মোল্লার রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘদিনের। এর আগে ছিলেন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র। হলফনামা থেকে জানা যায়, আজমত উল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এলএলবি এবং এলএলএম সম্পন্ন করেছেন। পেশা উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট ও গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী।
হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইন পেশা থেকে তিনি ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা ও সম্মানী ভাতা হিসেবে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। এ ছাড়া তাঁর ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৭০২ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নগদ নিজ নামে ৫১ হাজার ৮৬১ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৪১ টাকা রয়েছে। তবে তাঁর সম্পদের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেশি। তাঁর স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৩ টাকা ও নগদ এক লাখ ২২ হাজার ৪৪৭ টাকা আছে। স্ত্রীর নামে একটি কার, ৩০ তোলা স্বর্ণ দেখিয়েছেন তিনি।
স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে আজমত উল্লা নিজ নামে ১২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ অকৃষি জমি, ৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণাধীন বাড়ি ও স্ত্রীর নামে ২১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ অকৃষি জমি এবং টিনসেড মার্কেট দেখিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৮ থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪টায়। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছেন। ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ভোটার এবং প্রার্থীরা।
নির্বাচনে বেসরকারিভাবে ফলাফলে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।