গণিতের ছাত্র ছিলেন পারভেজ মোশাররফ, পড়েছেন ক্রিশ্চিয়ান কলেজে

জেনারেল পারভেজ মোশাররফ
জেনারেল পারভেজ মোশাররফ  © ফাইল ছবি

দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা গেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বিতর্কিত সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। এক বিবৃতিতে দেশটির সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, জেনারেল মোশাররফের মৃত্যুতে তারা শোকাহত।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ৭৯ বছর বয়সী জেনারেল মোশাররফ  দীর্ঘ রোগভোগের পর দুবাইয়ের অ্যামেরিকান ন্যাশনাল হাসপাতালে মারা গেছেন। তার অসুস্থতার ব্যাপারে ২০২২ সালে জানানো হয়েছিলো জেনারেল মোশাররফ অ্যামিলোডয়সিস নামে এক জটিল রোগে ভুগছেন। এ রোগে মানব শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যেতে থাকে।

২০২২ সালে তার পরিবার এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, জেনারেল মোশাররফের শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে ‘তার সেরে ওঠার প্রায় কোন সম্ভাবনাই নেই’।

জেনারেল মোশাররফের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট, ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে। ছাত্র জীবনে লাহোরের ফরমান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে মোশাররফ গণিত নিয়ে ভর্তি হলেও পরিবারের অমতে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন ১৯৬১ সালে। ১৯৬৪ সালে তিনি একাডেমী থেকে ২য় লেফটেন্যান্ট হিসেবে বের হয়েছিলেন। এই ২য় লেফটেন্যান্ট পদবীতেই তিনি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন

১৯৪৭ সালে পরিবারের সাথে পাকিস্তানে চলে যায় জেনারেল মোশাররফের পরিবার। তার বাবা সৈয়দ মোশাররফ একজন কূটনীতিক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার আগে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত জেনারেল মোশাররফ তুরস্কে ছিলেন। সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর তিনি কোয়েটার আর্মি কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজে পড়াশোনা করেছেন।

আশির দশকে ব্রিগেডিয়ার পদবীতে তিনি একটি গোলন্দাজ ব্রিগেডের অধিনায়কত্ব করেন। নব্বইয়ের দশকে মেজর-জেনারেল মোশাররফ একটি পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়কত্ব এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো বাহিনী ‘স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ’-এর প্রধান অধিনায়ক হন।

তিনি পরে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি এবং ডাইরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেট ছিলেন। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল মোশাররফ । এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।

জেনারেল মোশাররফ ২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারী করেন, যার মাধ্যমে তিনি নিজের শাসনামল প্রলম্বিত করতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনায় পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়, এবং ইমপিচমেন্ট এড়াতে ২০০৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। এজন্য পরে জেনারেল মোশাররফকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

তিনি পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক যাকে সংবিধান স্থগিত করার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল পাকিস্তানের আদালত, যদিও পরে সেটি বাতিল হয়ে যায়। সর্বশেষ তিনি দুবাইতে অবস্থান করছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ