সংবাদ-সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং রাজনীতির আজন্মশিল্পী খুশবন্ত সিং
গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিস তার ‘অ্যান্টিগনি’ সিরিজে যে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন তার উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বিখ্যাত সাইকো-অ্যানালিস্ট ফ্রয়েড বলেছিলেন, ‘তোমার বাসনাকে ছেড়ে দিও না’- এক কথায় খুশবন্ত সিংয়ের জীবনকে ব্যাখ্যা করতে হলে এ কথাটিই যথেষ্ট। তাকে ঘিরে যখন তার ভক্ত-সমর্থকরা জন্মশতবার্ষিকী পালনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে উৎসবের প্রহর গুনছিলেন ঠিক তখনি নিরানব্বই বছরে পরপারে পাড়ি জমান উপমহাদেশের সবচেয়ে পঠিত লেখক খুশবন্ত সিং। ১৯১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের হাদালিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। খুশবন্ত সিংয়ের জন্মের পর তার দাদী তার নাম রেখেছিলেন খুশাল সিং। দিল্লি মডার্ন স্কুলে ভর্তির পর পাঞ্জাবি শিখ হওয়ায় ছেলেপুলেরা কেউ কেউ তার নাম নিয়ে হাসাহাসি করত। এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি তার বড় ভাই ভগবন্ত সিংয়ের সঙ্গে নাম মিলিয়ে খুশাল নাম পাল্টে খুশবন্ত রাখেন।
বর্তমান পাকিস্তানের সারগোদা জেলায় জন্ম হলেও পাক-ভারত বিভাজনে ভারতে চলে যান তিনি। তার ভক্তরা যখন বলছেন, জীবন আসলে খুশবন্ত সিংয়ের মতো হওয়া উচিত। তখন জীবনসায়াহ্নে এসে তিনি বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আরও অনেক কিছু করার ইচ্ছে ছিল জীবনে, সব শেষ হল কই?’ তবুও ৯৯ বছরে এসে থেমেছিল তার জীবনের; হয়তো সেঞ্চুরি পূরণ হয়নি, কিন্তু তার মতো দু’হাত উজাড় করে জীবনকে উপভোগ করতে পারেন খুব কম মানুষই।
ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও রাজনীতিবিদ; তবে আইনে পড়লেও তিনি সফল আইনবিদ হতে পারেননি বলে স্বীকার করেছেন নিজের লেখায়। ‘যতকিছু আসুক সত্যরে লও সহজে’- এমন সরল ব্রত নিয়ে আজীবন সত্য বলেছেন তার আপন সারল্যে। কঠিন বিষয় নিয়ে মজা করার চমৎকার ক্ষমতা খুশবন্ত সিংকে আলাদা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য দিলেও এই হাসি-ঠাট্টা আর আনন্দের মধ্যে তার জীবনেরও এক গভীরতম বিষাদ ছিল, তা হলো নিজ মাতৃভূমি বর্তমান পাকিস্তান ত্যাগ। দেশ ছাড়ার সময় তিনি লাহোর কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। পাকিস্তান ছাড়ার সেই যন্ত্রণা খুশবন্ত সিং আজন্ম তুলে ধরেছেন দেশভাগ নিয়ে তার লেখনীতে।
খুশবন্ত সিং ছাত্রাবস্থায় প্রথম জীবনে তেমন কৃতিত্ব রাখতে না পারলেও ঘুরে দাঁড়ান লন্ডনের কিংস কলেজে আইনে ভর্তি হওয়ার পর। তিনি লাহোর সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছিলেন তৃতীয় বিভাগে। লন্ডনের সময়টাই বদলে দিয়েছিল তার জীবন; লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি পড়তে গিয়ে পেয়েছিলেন সেরা ফলাফলের পুরস্কারও। লন্ডনে পড়ার সময় তিনি সম্পর্কে জড়ান কাওয়াল মালিকের সঙ্গে এবং পরবর্তীতে তার সাথে জীবন-সংসার পার করেন। কাওয়াল মালিক মারা যান ২০০১ সালে। খুশবন্ত সিংয়ের বাবা ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসাবে যখন দিল্লিকে গড়ে তোলা হচ্ছে–সেই কর্মযজ্ঞের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার–নামকরা নির্মাণ ব্যবসায়ী স্যার সোভা সিং।
তার সময়ে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদক তো দূরের কথা, সহযোগী সম্পাদক হওয়ার স্বপ্নও কেউ দেখার সাহস পেতেন না বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্র্যাজুয়েজশন ডিগ্রি ছাড়া। তার বিপরীতে খুশবন্ত সিং এই মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়েও সম্পাদনা করেছেন ‘দ্য ন্যাশনাল হেরাল্ড’ ও ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের’ মতো প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিকও। বিখ্যাত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়া’র সম্পাদক ছিলেন খুশবন্ত সিং। দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে যে সাপ্তাহিক বিক্রি হত হাজার পাঁচেক, কিছুদিনের মধ্যেই সেই সংখ্যা পৌঁছিয়ে যায় প্রায় ৪ লক্ষতে।
অন্য সম্পাদকরা অফিস করতেন স্যুট পরে, সেখানে খুশবন্ত সিং অফিস করতেন টি-শার্টেই। লাহোর কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তার পেশাগত জীবন শুরু করার পর টানা ৮ বছর কাজ করে পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতের ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন সিং। লন্ডন এবং অটোয়ার ভারতীয় দূতাবাসে প্রেস অ্যাটাশে এবং পাবলিক অফিসার হিসেবে কাজের পর অল ইন্ডিয়া রেডিওর মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় খুশবন্ত সিংয়ের। এরপর সেখান থেকে ইউনেস্কোতে ৪ বছর কাজ শেষে সম্পাদনা শুরু করেন যোজন পত্রিকায়।
জীবনকালে ঘড়ির কাটার ধরা-বাধা নিয়মের মধ্যে জীবনপার করেছেন তিনি। আগা-গোড়া পরিশ্রমী এই লেখক লিখতে বসতেন ভোর সাড়ে ৪টায় ঘুম থেকে উঠে, ঘুমাতে যেতেন নিয়ম করে রাত ৯টায়। নিময় করে প্রতিদিন রাত নটার মধ্যেই শেষ করতেন রাতের খাবার; সেজন্য কোথাও কোনো দাওয়াতে গেলে সময়মতো খাবার দিতে দেরি হলে না খেয়েই ফিরে আসতেন তিনি।
চলমান সমাজ-রাজনীতি নিয়ে তার লেখা রম্যগুলো অসামান্য সৃষ্টি হলেও গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ সবই হতো তার হাতে। দেশভাগ নিয়ে খুশবন্ত সিংয়ের লেখা ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’ পড়েননি এমন পাঠক কম। দেশভাগ আর তার পরের কয়েক বছরের রক্তাক্ত ইতিহাস নিয়ে খুশবন্ত সিংয়ের কালজয়ী লেখা ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’। তিনি গল্প, স্মৃতিকথা, ইতিহাস বা সম্পাদকীয়- সব ক্ষেত্রেই তিনি ব্যবহার করতেন স্বভাবজাত হাস্যরস ও কৌতুকপ্রিয় মনোভাব। খুশবন্ত সিং ভারতীয়দের ইংরেজী ভাষায় সাহিত্য রচনার ধারাটাই বদলে দিয়ে প্রায় আশিটির মতো বই লিখেছেন। তার বিখ্যাত বই ‘অ্যা ট্রুথ লাভ এন্ড লিটল ম্যালিস’ এ তিনি অকপটেই বলেছেন তার যাপিত জীবনের গল্প।
হিরন্ময় কার্লেকরকে যখন হিন্দুস্তান টাইমসের সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে খুশবন্ত সিংকে সম্পাদক করেছিল ইন্দিরা গান্ধীর সরকার, তখন সবাই ধারণা করছিল তাঁর ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর চাপে তা করা হয়েছে। যদিও সঞ্জয় গান্ধীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে খুশবন্ত সিংকে অনেক মূল্যও দিতে হয়েছিল, তবুও পুরনো বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করেন নি তিনি, যেটা সঞ্জয় গান্ধীর অনেক কথিত বন্ধুই করেছিলেন – বিবিসিকে বলছিলেন হিরন্ময় কার্লেকর। যদিও খুশবন্ত সিং তার আত্মজীবনী ‘অ্যা ট্রুথ লাভ এন্ড লিটল ম্যালিস’ এ ইন্দিরা গান্ধি এবং তাঁর ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী মানেকা গান্ধীর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু বিষয় বইটিতে উল্লেখ করায় বইটি বেশ কিছুদিন নিষিদ্ধ থাকলেও পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তা পুনরায় প্রকাশিত হয়। ইংরেজী ভাষায় বইটি লিখলেও তাঁর লেখা বাংলাসহ ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
পাঞ্জাবের ইতিহাস ও পাঞ্জাব নিয়ে তার লেখা ৩টি বইয়ে ‘ট্রাজেডি অফ পাঞ্জাব’, ‘দ্য ফল অফ দ্য পাঞ্জাব’, ‘রনজিৎ সিং দ্য মহারাজা অফ দ্য পাঞ্জাব’। এসব বইয়ে খুশবন্ত সিং মোহনীয় গদ্যে তুলে ধরেছেন পাঞ্জাবের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও লোকাচার। কলম দিয়েই লিখতেন বলেই হয়তো প্রচুর কলম চুরি করতেন খুশবন্ত সিং–নিজের মুখেই সেটা স্বীকার করেছিলেন বিবিসিকে কয়েক বছর আগে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে-‘বলপেন চুরি করাটা আমার একটা অভ্যাস – নেশার মতো। কোনও বড় বৈঠকে সবার আগে পৌঁছিয়ে যাই আমি। বৈঠকে নোট নেওয়ার জন্য যে প্যাড আর পেন দেওয়া হয়, সেগুলো চুরি করে পকেটে রাখার জন্য হাত নিশপিশ করে। পেন অনেক আছে, তা সত্ত্বেও পেন চুরি না করে থাকতে পারি না,’ হাসতে হাসতে নিজের সততা নিয়ে বলেছিলেন খুশবন্ত সিং।
ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে শনিবারের সম্পাদকীয় পাতায় বছরের পর বছর ছাপা হয়েছিল খুশবন্ত সিংয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত কলাম ‘উইথ ম্যালিস টুওয়ার্ডস ওয়ান অ্যান্ড অল’। ৩টি ভাগে এ কলামে খুশবন্ত সিং তুলে আনতেন চলমান সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাহিত্য থেকে ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো। আর এটি তার অনন্য রচনাশৈলী এবং সুখপাঠ্য বাচনভঙ্গির কারণে প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা ধরে রাখে দীর্ঘদিন। অবশ্য তাকে নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি; তার লেখায় যৌনতা তুলে আনার জন্য তাকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করে সবসময়ই সাহিত্যবোদ্ধারা তার রুচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার জবাব অবশ্য তিনি আক্ষেপ নিয়েই দিয়েছেন; বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, ‘যেহেতু আমি যৌনতা নিয়ে লিখি, মদ্যপানের পক্ষে লিখি, অনেকেই আমকে হেয় করেন। কিন্তু যে লোকটা ভোর সাড়ে চারটের সময় উঠে লিখতে শুরু করে আর আশিটার ওপরে বই লেখা হয়ে গেছে সেরকম একজনের মহিলাদের নিয়ে মত্ত থাকার সময় কোথায়। হ্যাঁ, এটাও ঠিক যে অনেক সুন্দরী মহিলা আমার কাছে আসেন মদ্যপানের আসরও হয়তো মাঝে সাঝে বসে, কিন্তু খুব বেশী কেউ পনেরো কুড়ি মিনিটের বেশী সময় থাকলেই নিজেই ওই মহিলাদের বলে দিই যে অনেক হয়েছে – এবার আপনি যান…কাজে বসতে হবে।’
ব্যক্তিগত জীবনে তেমন একটা ধর্মপ্রাণ না হলেও খুশবন্ত সিং লিখেছিলেন ২ খণ্ডের গবেষণাভিত্তিক বই ‘অ্যা হিস্টরি অফ দ্য শিখ’। তার এই বইটিকে খোদ শিখ ধর্মগুরুরা শিখ ধর্মের অন্যতম প্রামাণ্য ইতিহাস বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনিই আবার শিখ উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ছিলেন। খুশবন্ত সিং প্রকাশ্যেই বলতেন, ‘ধর্মীয় মৌলবাদীরা ছাড়া আমার কোনো শত্রু নেই।’
১৯৮৪ সালে শিখদের প্রধান তীর্থস্থান অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের নির্দেশে সেনা অভিযানের বিরোধিতা করে খুশবন্ত সিং তার পদ্মভূষণ খেতাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরে অবশ্য তাকে পদ্মবিভূষণ খেতাব দেওয়া হয়েছিল। তাকে ‘ইন্দিরা গান্ধীর চামচা’ বলে গালি দিত কট্টরপন্থীরা। অথচ খুশবন্ত সিংই ইন্দিরা গান্ধীর সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার পর সর্বপ্রথম প্রতিবাদ জানান। তা নিয়ে খুশবন্ত সিং লিখেছিলেন, ‘আমার কাছে যখন মনে হয়েছে জরুরি অবস্থা জারি ঠিক আছে, তখন আমি ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সমর্থন জানিয়েছি। প্রতিবাদ আপনি করতেই পারেন। মিছিল-মিটিংসহ অসংখ্য কায়দা আছে। প্রয়োজনে হরতালও দিতে পারেন। কিন্তু জনমানুষের জীবনযাত্রার উপর সহিংস হতে পারেন না। আপনার কারণে অন্য একজনের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে না। আমি তখন এজন্যই সমর্থন করেছিলাম। আবার এই সরকারই যখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করল, আমি আমার আপত্তি জানালাম এবং সমর্থন প্রত্যাহার করলাম।’
খুশবন্ত সিং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিউইয়র্ক টাইমসে নিয়মিত বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে জনমত গঠন এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার লেখা ‘হোয়াই দে ফ্লেড পাকিস্তান অ্যান্ড ওন্ট গো ব্যাক’ সাড়া ফেলেছিল গোটা যুক্তরাষ্ট্র জুড়েই। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট খুশবন্ত সিংয়ের এ নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন বাংলাদেশী শরণার্থীদের গৃহস্থ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয়ের করুণ গল্প, দুর্দশা এবং নির্মম অভিজ্ঞতা নিয়ে।
সরস সাংবাদিকতা ছিল খুশবন্ত সিংয়ের সাংবাদিকতার মাধ্যম; তার লেখা প্রয়োজনে ব্যঙ্গাত্মক হলেও তা হতো সরস। কিন্তু তাই বলে সাংবাদিকতার নৈতিক দিক দিয়ে তিনি কখনো ছাড় দেননি। তিনি প্রচণ্ড ঘৃণা করতেন পত্রিকার বিষয়ে পত্রিকার মালিকের হস্তক্ষেপের বিষয়ে; কখনোই মেনে নিতে পারতেন না সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ। যা তিনি তার লেখায় বলেছিলেন, ‘আমাদের সময় পত্রিকার বিষয়ে সকল সিদ্ধান্ত নিতেন সম্পাদক আর এখন সিদ্ধান্ত নেন মালিক। অথচ তার সঙ্গে সাংবাদিকতার বিন্দুমাত্র সংযোগ নেই। গোটা পত্রিকায় পড়ার মতো এখন কিছুই নেই। প্রচ্ছদেই দেখা যায় কোনো নায়িকার ছবি। এটি যে সংবাদপত্র, তাই এখন মনে হয় না। আমি কখনোই সংবাদের বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দিইনি।’
খুশবন্ত সিংকে বয়স কখনোই কাবু করতে পারেনি; তিনি তার জীবনের ৯৫ বছর বয়সে এসেও দিব্যি লিখে ফেলেন ‘দ্য সানসেট ক্লাবের’ মতো উপন্যাস। জীবনের শেষ ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর পর যেন তার দেহভস্ম জন্মভূমি পাঞ্জাবের হাদালিতে নিয়ে যাওয়া হয়। শৈশবে তিনি যে গাছটির নিচে খেলতেন, তারই নিচে তার দেহভস্ম সমাহিত করার মাধ্যমে তার শেষ এই ইচ্ছেটি পূরণ হয়েছিল। খুশবন্ত সিংয়ের সমাধির ফলকে লেখা রয়েছে, ‘একজন শিখ, একজন জ্ঞানী ও পাঞ্জাবের হাদালির একজন সন্তান। এখানেই আমার শিকড়। আমি একে লালন করেছি স্মৃতিকাতর অশ্রুতে।’ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৪ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পদক পদ্মভূষণ অর্জন করেন খুশবন্ত সিং। কিন্তু অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রতিবাদে ১৯৮৪ সালে তিনি ‘পদ্মভূষণ’ ফিরিয়ে দেন। এরপর তিনি দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পদক ‘পদ্মবিভূষণ’ এ সম্মানিত হন ২০০৭ সালে।
কালজয়ী এই লেখক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক গল্পকার খুশবন্ত সিংয়ের জন্মদিন আজ। সংবাদ ও সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও রাজনীতির আজন্মশিল্পী খুশবন্ত সিংয়ের অনন্য রচনা শৈলী, সৃষ্টিকর্ম আর গভীর জীবনবোধ আজীবন তাকে স্মরণীয় করে রাখবে বুদ্ধিদীপ্ত পাঠক হৃদয়ে।