ঢাবির সমাবর্তন বক্তা কে এই জঁ তিরোল?

অধ্যাপক ড. জঁ তিরোল
অধ্যাপক ড. জঁ তিরোল  © সংগৃহীত

আগামীকাল শনিবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জঁ তিরোল। সমাবর্তনে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করা হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মোট ৫২ জনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এবার ৫৩তম সমাবর্তনে অধ্যাপক ড. জঁ তিরোলকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদানের মাধ্যমে এ সংখ্যা ৫৩ জনে দাঁড়াবে।

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সর্বপ্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫২ বার সমাবর্তন হয়েছে। এদিকে, ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছর (২০২০ ও ২০২১ সাল) সমার্বতনের আয়োজন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে কারণে শনিবারের ৫৩তম সমার্বতনে রেকর্ডসংখ্যক ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কে এই জঁ তিরোল?

অধ্যাপক ড. জঁ তিরোল একজন ফরাসি অর্থনীতিবিদ। তিনি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া তত্ত্ব, ব্যাংকিং ও অর্থনীতি এবং মনোবিদ্যাগত অর্থনীতি এর উপর কাজ করেছেন। বাজার শক্তি এবং বড় বড় কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিশ্লেষণমূলক কাজের জন্য তিনি ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

তিরোল প্যারিসের একোল পোলিতেকনিক এবং একল নাসিওনাল দে পোঁ এ শোসে থেকে ১৯৭৮ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং উপাধি এবং একই সালে পারি দোফিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিদ্ধান্তমূলক গণিতের উপর "ডক্টরেট" লাভ করেন। এরিক মাসকিন এর তত্ত্বাবধানে অর্থনৈতিক তত্ত্বের উপর প্রবন্ধ (Essays in economic theory) শিরোনামে ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে থিসিস করেন।

অধ্যাপক জঁ তিরোল তুলুজ স্কুল অফ ইকোনমিকস-এ জঁ-জাক লাফোঁ ফাউন্ডেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি একল পোলিতেকনিক থেকে স্নাতক উপাধি এবং ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ১৯৮১ সালে পিএইচডি লাভের পর ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত একল নাসিওনাল দে পোঁ এ শোসে-এ গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪-১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি এমআইটির অধ্যাপক হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। ১৯৯৪-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি একোল পোলিতেকনিক-এ অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ইকোনমেট্রিক সোসাইটি ("অর্থমিতিক সমাজ") এবং ২০০১ সালে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশান (European Economic Association, "ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সংগঠন")-এর সভাপতি ছিলেন। তিনি এখনো এমআইটির সাথে সংযুক্ত এবং ২০১৩ সাল থেকে "কনসিল স্ট্র্যাটেজিকা ডে লা রিসার্চেস" এর সদস্য।

বাজার শক্তি এবং বড় বড় কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিশ্লেষণমূলক কাজের জন্য তিনি ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি লিব্রে ডি ব্রুজেলেস থেকে ১৯৮৯ সালে, লন্ডন বিজনেজ স্কুল এবং মনট্রিঅল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে, অ্যাথেনস ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স অ্যান্ড বিজনেজ এবং ইউনিভার্সিটি অফ রোম টর ভেগাটা থেকে ২০১২ সালে, লউসান্না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে সম্মানসূচক ডক্টর উপাধি লাভ করেন।

তিরোল ২০০৮ সালে অর্থনীতি এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়শ্রেণীতে বিবিভিএ ফাউন্ডেসন ফ্রন্টিয়ারস অফ নলেজ পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে পাবলিক ইউটিলিটি রিসার্চ সেন্টার ডিস্টিঙ্গুইস্টড সার্ভিস পুরস্কার (ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়), ১৯৯৩ সালে ইয়রজ জেনশন ফাউন্ডেশন এবং ইউরোপিয়ান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশান থেকে ইয়রজ জেনশন পুরস্কার লাভ করেন।

সমাবর্তন ও সমাবর্তন বক্তার ইতিহাস

স্বাধীন বংলাদেশে প্রথম সমাবর্তন (৪০তম) অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর যা ছিল দীর্ঘ ২৯ বছর বিরতির পর। এরপর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে। 

৪০তম সমাবর্তনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে সম্মাসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। এরপর ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে যথাক্রমে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তুন ড. মাহাথীর বিন মোহাম্মদ, শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস, ভাষাসৈনিক আ ন ম গাজীউল হক ও ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইউয়ান টি লি, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক আবুল হুসসাম এবং প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রণজিৎ গুহকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

২০১২ সালের মার্চ মাসে ৪৭তম সমাবর্তনে প্রধান বক্তা ছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-এর মহাসচিব প্যাসকেল ল্যামি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। এটিও সমাবর্তন ইতিহাসের এক অনবদ্য সংযোজন, সমাবর্তনের প্রধান বক্তা ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রথমবারের মত প্রথম সম্পূর্ণ বাংলায় সমাবর্তন ভাষণ দিয়েছিলেন। 

২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সার্ন)-এর মহাপরিচালক অধ্যাপক রোল্ফ হুয়ের। তাকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ৪৯তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তা ছিলেন জেনেভাভিত্তিক মেধাস্বত্ব সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক ফ্রান্সিস গ্যারি। ২০১৭ সালের ৪ মার্চ ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও’র প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক অমিত চাকমা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫২তম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাকাকি কাজিতা। তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেওয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ