না, রুহুল আমিন মগবাজারের বিস্ফোরণে নিহত হননি
রাজধানীর মগবাজারে গতকাল রোববার সন্ধ্যার বিস্ফোরণে সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত সাতজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহতের কথা জানা গেছে। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক বছর আগে নিহত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী যুবককে মগবাজারের এই ঘটনায় নিহত বলে প্রচার করা হচ্ছে। এমন দাবি করা একটি পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস ফ্যাক্টচেক একই দাবি সংবলিত ৩৪টি ফেসবুক পোস্ট দেখেছে। পেজ, ব্যক্তিগত একাউন্ট ও গ্রুপে এসব পোস্টের প্রায় সবগুলোর লেখা একই। পোস্টগুলোতে শত শত রিয়্যাক্ট, কমেন্ট ও শেয়ার দেখা গেছে। কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। ৩৪টির মধ্যে সবচেয়ে পুরনো পোস্টটি ‘ইনসাফ’ নামক গ্রুপে ‘আহমেদ ইফতেখার’ নামক একাউন্ট থেকে করা হয়। মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনা রোববার সন্ধ্যার পর সাড়ে ৭টার কিছুক্ষণ পরের। আর ওই পোস্টটি করা হয় রাত ১২টার দিকে।
ওই পোস্টে বলা হয়, ‘২৪ বছর পরও মাকে দেখা হলো না আমেরিকা ফেরত রুহুল আমিনের !
দীর্ঘ ২৪ বছর পরে বাড়িফেরা। সেই কিশোর বয়সে সংসারের হাল ধরতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন রুহুল আমিন। এরপর কেবল সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা। বিয়েও করেননি। বাড়ি ফেরার খবরে মেয়ে দেখা চলছিল। বিমানবন্দরে নেমে ফোন করে মাকে বলেছিলেন, দেশে পৌঁছেছি। বাড়ি আসছি। দেখা হবে মা। তবে মাকে আর দেখা হয়নি রুহুল আমিনের। বাড়ি ফিরেছেন, কিন্তু বাক্সবন্দী লাশ হয়ে। ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারালেন রুহুল আমিন। আহা জীবন...!!’
পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রফেরত যুবক রুহুল আমিন মগবাজারের বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন দাবি করা হয়। পোস্টে বলা আছে রুহুল আমিন ২৪ বছর পর দেশে ফিরেছেন এবং তিনি কিশোর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমিয়েছিলেন। অথচ গত বছরের ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ফেরত রুহুল আমিন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়। ‘দুই যুগ পর দেশে ফিরেও বাড়ি ফেরা হলো না’ শিরোনামের প্রতিবেদনটির শুরুতে বলা হয়, ‘২৪ বছর পর মাকে দেখতে দেশে ফিরে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আমেরিকা প্রবাসী রুহুল আমিন।’ এর শেষের দিকে বলা হয়, ‘কিশোর বয়সে আমেরিকা যান রুহুল আমিন।’
এ ছাড়া গত বছরের ১৫ জানুয়ারি দেশে ফেরার পথে নিজের ফেসবুক একাউন্টে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩ নম্বর টার্মিনালে চেক ইন দিয়ে একটি সেলফি পোস্ট করেন রুহুল আমিন।
এটিই তাঁর সর্বশেষ পোস্ট এবং তাঁর একাউন্টটি বর্তমানে রিমেম্বারিং দেখাচ্ছে। প্রয়াতদের ফেসবুক একাউন্টে রিমেম্বারিং শব্দটি যুক্ত করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া এক বছর আগেই অনেকে তাঁর ফেসবুক পোস্টের নিচে তাঁর জন্য দোয়া করে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ১১ জানুয়ারির পোস্টে রুহুল আমিন জানান, ২৪ বছর পর তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেখতে দেশে যাচ্ছেন। সেই পোস্টের মন্তব্যের ঘরেও অন্তত তিনজন তাঁর মৃত্যুপরবর্তী অবস্থার জন্য দোয়া করেন। ওই মন্তব্যগুলোও এক বছরের পুরনো।