৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে ৩৫ বাচ্চা ‘নিখোঁজ’, খবরের উৎস কী
নিখোঁজ সংবাদে ছেয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ‘গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৪৮ বাচ্চা নিখোঁজ’ কিংবা ‘গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩৫ বাচ্চা নিখোঁজ’। ফেসবুকের টাইমলাইনে গেল কয়েকদিন থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এমন অসংখ্য পোস্ট। এসব নিখোঁজ সংবাদে একদিকে যেমন ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক অন্যদিকে প্রশ্ন উঠছে এসব নিখোঁজ সংবাদের উৎস নিয়েও।
বিষয়টি এতো বেশি চর্চা হচ্ছে যে বর্তমানে ফেসবুকে ‘নিখোঁজ সংবাদ’ শব্দদয় সামাজিক মাধ্যমটির ট্রেন্ডিংয়ে উঠে এসেছে। ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির জানাচ্ছেন, আলোচ্য শিশু-কিশোর ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’ সংক্রান্ত পোস্ট নিউজফিডে বেশি বেশি দেখার পেছনে ফেসবুকের এলগোরিদমের ভূমিকা রয়েছে। অন্তত আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। আমিও গত কয়েকদিনে নিউজফিডে এমন হারানো বিজ্ঞপ্তি বেশি দেখেছি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই হারানোর ঘটনাগুলো দৈনন্দিনের নিয়মিত ঘটনা নাকি অস্বাভাবিক বা পরিকল্পিত কিছু? অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একের পর এক শিশু নিখোঁজের এমন ঘটনা অনেকাংশেই ভিত্তিহীন ও অসত্য। যারা হারিয়ে গেছে বলে পোস্ট দেয়া হয়েছিল, পরে তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া গেছে। আবার পাওয়া গেলেও সেটি আর জানানো হচ্ছে না। ফলে নিখোঁজের সত্যতা যাচাই না করেই এসব পোস্ট শেয়ার দিচ্ছেন নেটিজেনরা।
চাকরির একটি গ্রুপে নাসির স্যার নামে এক শিক্ষক এমন নিখোঁজ সংবাদের কয়েকটি ছবি ও স্ক্রিনশর্ট যুক্ত করে সতর্কতামূলক একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩৫ বাচ্চা নিখোঁজ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট বাচ্চারা হঠাৎ করেই হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ স্কুলে যাওয়ার পথে, কেউ মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে, কেউ বাজারে যাওয়ার পথে। প্লিজ সবাই সতর্ক হোন, আপনাদের বাচ্চাকে নিজ দায়িত্বে রাখুন।’’
নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ অন্য আরেকজনের সৌজন্যে পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘নিখোঁজ সংবাদ : আমার ছেলে মো. সিয়াম আজ বিকাল ৫টা থেকে খুজে পাওয়া যাইতাছে না। ঠিকানা : ১নং মাইলের মাথা ফ্রী পোট চট্টগ্রাম। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি খোঁজ পান তাহলে এই নম্বরে ০১৬০১২০৪৮৫৪ যোগাযোগ করবেন।’’ পোস্টের সঙ্গে আরিফ একটি মাদ্রাসা ছাত্রের ছবি যুক্ত করেছেন।
এসব পোস্ট নিয়ে কদরুদ্দিন শিশির বলেন, গতকাল থেকে কিছু পোস্টে কিছু পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে যে, গত ৪৮ ঘণ্টায় নাকি চট্টগ্রাম ও ঢাকার ৩৫ জন শিশু/কিশোরকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের বেশিরভাগই নাকি মাদ্রাসাছাত্র। কিন্তু এই ধরনের পরিসংখ্যানের সূত্র কী তা কোথাও বলা নাই। অনেকগুলো পোস্ট ঘেঁটে মনে হয়েছে এই ধরনের পরিসংখ্যান মনগড়া এবং অনুমান বানানো।
তিনি বলেন, পরিসংখ্যান যাইহোক এটা বাস্তব যে, ফেসবুকে ছড়ানো হারানো বিজ্ঞপ্তিগুলো ভুয়া নয়। আমি নিজে এবং কয়েকজন সাংবাদিক ভাই কয়েকটি হারানো বাচ্চার ভাইরাল হওয়া পোস্ট থেকে নম্বর নিয়ে যাচাই করেছেন। ফোন যারা ধরেছেন তাদের কেউ জানিয়েছেন তাদের বাচ্চা হারিয়েছিল তবে এখন পেয়ে গেছেন। আবার কয়েকজন বলেছেন এখনও পাননি। অর্থাৎ, ফেসবুকে যাদের হারিয়ে যাওয়ার খবর ছড়াচ্ছে সেই খবরগুলো অসত্য নয়।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে শিশির বলেন, গত ২ জুলাই আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড ইনবক্সে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। যেখানে অনেকগুলো হারানো বিজ্ঞপ্তির স্ক্রিনশর্ট ছিল। এছাড়া আমি নিজেও এই সংক্রান্ত একটি পেজ খুঁজে বের করে সেটির কিছু পোস্টে রিয়েকশন দিয়ে রাখি। এরপর থেকে ফেসবুকের এলগোরিদম নিজ দায়িত্বে আমার নিউজফিডে ওই টাইপের কন্টেন্ট/পেজ/গ্রুপের লিংক রিকোমেন্ড করতে থাকে।
এমন নিখোঁজের খবরে আতঙ্কিত হয়ে ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করেন নাজমা হক নামের এক নারী। তিনি লিখেন, ‘হঠাৎ ছেলে-মেয়ে হারানোর পরিমাণ বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। বিষয়টি শঙ্কার। সবাইকে সাবধানে থাকার অনুরোধ করছি।’
একের পর এক শিশু নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার অতনু চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ধরনের শিশু নিখোঁজের বহু পোস্ট আমাদের চোখে পড়েছে। তবে বিষয়টি গুজব মনে হচ্ছে। কারণ, এত শিশু নিখোঁজ হলে থানায় নিশ্চয় অভিযোগ আসতো।’ না জেনে কোনো কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।