০১ জুন ২০২৫, ১১:০০

জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৬৮ পথশিশু: গবেষণা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন  © সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১৬৮ জন পথশিশু। অথচ আহতদের সরকারি তালিকায় থাকা ১৩,৫২৯ জনের মধ্যে শিশুদের তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। শনিবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

‘রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: জুলাই-আগস্ট ২০২৪ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা করেছে একমাত্রা সোসাইটি, গ্লোবাল ফান্ড ফর চিলড্রেনের অর্থায়নে ও লিডো-এর সহায়তায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলি ও ছররা গুলির কারণে গুরুতর চোখের আঘাত পাওয়া ৫০৬ জনের মধ্যে অন্তত ৬০ জন শিশু ছিল। এদের মধ্যে ৯ বছর বয়সী এক পথশিশু চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। এছাড়া কাওরান বাজার থেকে আটক ৪৩ জন পথশিশুকে কোনো আইনি সহায়তা ছাড়াই নির্যাতন করে আটক রাখা হয়।

অস্থিরতার সময় ৬২ শতাংশ পথশিশু তাদের আশ্রয়স্থল হারায় বলে ব্র্যাক জানায়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত এলাকায় অভিভাবকহীন শিশুর সংখ্যা ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের স্যাটেলাইট ছবি অনুযায়ী, পুলিশের অভিযানের পর বহু পথশিশুর আশ্রয়স্থল ফাঁকা অবস্থায় দেখা গেছে।

গবেষণায় বলা হয়, সহিংসতা-আক্রান্ত এলাকায় থাকা ৭০ জন শিশুর কেস স্টাডির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের ৭২ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে আক্রমণের শিকার হয়—৪৮ শতাংশ সরাসরি আহত, ১৩ শতাংশ গুলিবিদ্ধ এবং বাকিরা নির্মম দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে।

অধিকাংশ শিশু আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানত না—৪১ শতাংশের কোনো ধারণাই ছিল না, আর ৩৬ শতাংশ সচেতন ছিল। প্রায় ৫৬ শতাংশ শিশু সক্রিয়ভাবে সহিংসতায় জড়ায়, কেউ রাজনৈতিক দলের প্রভাবে, কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে।

সহিংসতা চলাকালীন ৫৪ শতাংশ শিশু খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের সংকটে পড়ে, আর ৬০ শতাংশ শিশু তাদের আয়ের উৎস হারায়। কেউ কেউ বন্ধুবান্ধব বা কমিউনিটির সহায়তায় ঘুরে দাঁড়ালেও ৬১ শতাংশ শিশু মানসিকভাবে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭৫ শতাংশের বেশি এখনও উদ্বেগ, আতঙ্ক ও ট্রমার মধ্যে আছে।

পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। ৬১ শতাংশ শিশু এখন তুলনামূলক নিরাপদ বোধ করলেও, অধিকাংশই দুঃসহ বাস্তবতায় টিকে আছে—৩৩ শতাংশ ভিক্ষা, ২৩ শতাংশ আবর্জনা কুড়িয়ে জীবন চালায়, অনেকে রাস্তায় বা স্টেশনে ঘুমায়।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “গত তিন দশক ধরেই রাজনৈতিক সহিংসতায় পথশিশুরা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০২৪ সালের আন্দোলনেও শিশুদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই শিশুদের গল্প আমাদের জাতীয় আলোচনায় জায়গা পায় না, বরং ধীরে ধীরে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়।”

গবেষণায় সরকার, রাজনৈতিক দল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও শিশুস্বার্থে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নিরাপত্তা, পুনর্বাসন ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য সুপারিশ জানানো হয়।