এক স্কুলে ছেলে পড়ে, মা-ও পড়ে
নেপালের এক নারী প্রমাণ করেছেন- পড়াশোনার কোনো বয়স নেই, ইচ্ছা থাকলে এমনকি ছেলের সঙ্গে এক স্কুলেও পড়তে পারেন মা। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের কাঞ্চনপুর জেলার পুনর্বাসের জীবন জ্যোতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন ২৭ বছরের পার্বতী সুনার। বড় ছেলে রেশমও এই স্কুলেই পড়ে।
১১ বছরের রেশমের সঙ্গে স্কুল ইউনিফর্ম পরে সকালে স্কুল যান পার্বতী। ছোট ছেলে অর্জুনও থাকে সঙ্গে। পার্বতী বলেন, সন্তানের বয়সিদের সঙ্গে লেখাপড়া করতে বেশ ভালো লাগে, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরে তিনি গর্বিত।
পুনর্বাসের স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি নিউ ওয়ার্ল্ড ভিশন কম্পিউটার স্কুলে ছেলের সঙ্গে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণও নেন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পার্বতী।
মা হিসাবে দায়িত্বশীল পার্বতী। কল থেকে পাম্প করে জল তোলেন মা। তারপর দুই ছেলেকে স্নান করিয়ে, খাইয়েদাইয়ে তৈরি করেন। জানালেন, সন্তানদের সঙ্গে তার সম্পর্ক বন্ধুর মতো।
একসঙ্গে পথ চলা মা-ছেলেদের। স্কুলে যাওয়ার আগে দুই ছেলেকে তৈরি করেন নেন তিনি। তারপর নিজেও ইউনিফর্ম পরে স্কুল যাওয়ার জন্য তৈরি হন। তিনি মনে করেন, অন্তত বাড়ির কাজ ভালোভাবে সামলানোর জন্যও লেখাপড়া শেখা উচিত।
পার্বতীর বড় ছেলে রেশমের একবার জ্বর হয়েছিল। তখন আর পাঁচজন মায়ের মতো তিনিও সারাক্ষণ সন্তানের সেবা করেছেন, যাতে সে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। সুস্থ হয়ে আবারো মায়ের সঙ্গে স্কুলে ফিরেছে রেশম।
পার্বতীর স্বামী যম বাহাদুর সুনার ভারতের চেন্নাইয়ে শ্রমিকের কাজ করেন। স্কুলের বিরতিতে কখনো কখনো তার সঙ্গে ফোন কল সেরে নেন তিনি। কখনো বা বাড়ি ফিরে পড়াশোনা আর সংসারের কাজের মাঝে কথা বলেন স্বামীর সঙ্গে।
আরও পড়ুন: ভারত ও নেপাল সীমান্ত বিরোধের প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ
স্কুলে টিফিনের সময় বন্ধুদের সঙ্গে দিব্যি খেলাধুলায় মাতেন পার্বতী। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসেন তিনি। তাই পড়ার পাশাপাশি হাসিঠাট্টায় যোগ দিতেও ভোলেন না। কাজের জন্য স্বামী দেশের বাইরে। গোটা সংসারের সব দায়িত্ব সামলাতে হয় পার্বতীকেই। ছেলেদের নিয়ে বাজারহাটেও যান তিনি। ছেলেদের আবদার মেনে মাঝেসাঝে বাইরের খাবার কিনে দিতে হয় তাকে।
পুনর্বাসের জীবন জ্যোতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল ভারত বাসনেট বলেন, ছাত্রী হিসাবে পার্বতী আহামরি কিছু না হলেও তার শেখার ইচ্ছা প্রবল। ক্লাসের পড়া বুঝতে কোনো সমস্যা হলে শিক্ষকদের কাছ থেকে জেনে নিতে চান তিনি।
সন্তানের সঙ্গে মন দিয়ে হোমওয়ার্ক সেরে নেন পার্বতী। হোমওয়ার্ক না করলে শিক্ষকরা বকুনি দেবেন, তাই বাড়িুর কাজের সঙ্গে নিজের পড়াশোনায় কোনো খামতি রাখতে চান না তিনি। স্কুল, সংসারের পাশাপাশি কৃষিকাজও সামলাতে হয় পার্বতীকে। গোয়ালঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে মাঠে ফসল তোলা পর্যন্ত সবই করেন পার্বতী।
বিরতির সময় সন্তান ও সন্তানসম বন্ধুদের সঙ্গে সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খেতে ভোলেন না পার্বতী। তিনি মনে করেন, পড়াশোনার, শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দুই সন্তানও তাকে সবসময় সাহায্য করে। [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]