ঢাকার ফ্ল্যাটের চেয়েও কম দামে কিনতে পারবেন স্কটল্যান্ডের দ্বীপ
অনেকেরই স্বপ্ন থাকে, শহরের যানজট, কোলাহল থেকে দূরে কোনও দ্বীপে মনের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর। তবে, কখনও এই ধরনের জায়গায় সারা জীবন থাকার সুযোগ পেলে কী করতেন! শুনতে স্বপ্নের মতো মনে হলেও বাস্তবে তা অসম্ভব নয়। থাকার জায়গা থেকে শুরু করে লাইটহাউস, জেটি সব কিছুই মিলবে খুবই আকর্ষণীয় মূল্যে।
ব্রিটেনের ফ্যাশন ডিজাইনার দম্পতি ডেরেক মর্টন ও তার স্ত্রী স্যালি মর্টন স্কটল্যান্ডে তাদের মালিকানাধীন প্লাড্ডা দ্বীপটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২৮ একর আয়তনের এ দ্বীপটির দামও তারা হেঁকেছেন বেশ কম, মাত্র সাড়ে ৩ লাখ পাউন্ড (৪ কোটি ২ লাখ টাকা)।
ঢাকাতেও এমন শত শত উচ্চচিবত্ত আছে যারা অনায়াসে এই দ্বীপটি কিনতে পারবেন। ঢাকার গুলশানে এই দামে এবং এর চেয়ে কয়েকগুন বেশি দামেও ফ্ল্যাট বিক্রি হয়। অথাৎ ঢাকা শহরের ফ্ল্যাটের চেয়েও কম দামে কিনা যাবে এই দ্বীপ। এমনকি ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত মুম্বাইয়ের একটি দু’কামরার ফ্ল্যাটের যে মূল্য, তার থেকেও কম দাম প্লাড্ডা নামের এ দ্বীপটির।
এত অল্প দামে এই দ্বীপ বিক্রির কারণ হিসেবে স্কটিশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ভূমি সংস্কার বিলের জন্য জুলাইয়ের শুরুতে যে প্রস্তাবগুলি পেশ করা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী প্লাডাকে তালিকা-বহির্ভুত রাখা হয়েছে।
সংস্কার বিল অনুযায়ী, সরকারি আধিকারিকেরা বড় জমি কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এই জমির পরিমাণও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যে এলাকাগুলি ৩,০০০ হেক্টর (প্রায় ৭,৪০০ একর) পরিমাণ জমির উপর রয়েছে সেখানকার কেনাবেচা করতে পারবেন তারা। প্লাডা দ্বীপটি ২৮ একর জমির উপর তৈরি হওয়ায় তার মূল্য সরকার নির্ধারণ করতে পারবে না।
এ ছাড়াও কোনও ন্যূনতম জনবসতিপূর্ণ একটি দ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে একটি হোল্ডিং হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এই বিলের মাধ্যমে।
স্কটল্যান্ডের বাকি দু’টি দ্বীপ— এইগ এবং গিঘা বিক্রির পরে নতুন রূপ পেয়েছে। এই দ্বীপগুলি আয়তনে অনেক বড়।
টম স্টুয়ার্ট-মুর নামের সম্পত্তি পরিচালনাকারী সংস্থার আধিকারিক জানিয়েছেন, এই দ্বীপ বিক্রির জন্য যখন বাজারে আনা হয়েছিল, তখন মানুষ কেনার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ দেখিয়েছেন। এই দ্বীপে যে লাইটহাউসটি রয়েছে তা ১৭৯০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে নর্দার্ন লাইটহাউস বোর্ড, যার প্রধান দফতর এডিনবরাতে।
লাইটহাউস ছাড়াও এখানে একটি বাড়িও রয়েছে। পাঁচটি বেডরুমের পাশাপাশি এই বাড়িতে আলাদা বসার জায়গা, রান্নাঘর এবং স্নানের জন্যও আলাদা ঘরের ব্যবস্থা আছে। বাড়ির পাশে রয়েছে দুই বেডরুমের একটি উন্মুক্ত পান্থশালাও। পাথরের তৈরি জেটি-সহ হেলিকপ্টার নামার আলাদা জায়গা রয়েছে এই দ্বীপে।
তবে, মূল শহর থেকে যোগাযোগের মাধ্যম প্রায় নেই বললেই চলে। গ্লাসগো থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপে নৌকা এবং হেলিকপ্টার ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। ২৮ একরের এই জমির ২.৫ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে দেওয়ালঘেরা বাগান। এই বাগানে ফল থেকে শাক-সব্জি— সব কিছুই চাষ করা যায়।
এ ছাড়াও পরিযায়ী পাখিদের জন্য এই দ্বীপটি সোনার খনির মতো। চারপাশের পরিবেশ এত মনোরম যে প্রায় ১০০ প্রজাতিরও বেশি পরিযায়ী পাখি বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে এই দ্বীপে আসে।
তবে, এই প্রথম যে ‘আইল্যান্ড অব প্লাডা’ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে তা নয়। তিন দশক আগে আররান এস্টেট সংস্থা এই দ্বীপটি ফ্যাশন ডিজাইনার ডেরেক ও স্যালি মর্টেনের কাছে বিক্রি করে। বর্তমানে এই আস্ত দ্বীপের মালিক এই মর্টেন দম্পতি।