২৫ জুলাই ২০২২, ১০:২০

স্কুলে বেআইনি নিয়োগ দুর্নীতির কেন্দ্র ছিল অর্পিতার বাড়ি

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়  © আনন্দবাজার

ফ্ল্যাটে খোঁজ মিলেছে টাকার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ সোনার গহনা ও বিদেশি মুদ্রার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে বেআইনি নিয়োগের অন্যতম বলে দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার হওয়া অর্পিতার বাড়ি স্কুলে বেআইনি নিয়োগের কেন্দ্রস্থল (এপিসেন্টার) ছিল বলে রোববার আদালতে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থাটি।

কলকাতা সিএমএম আদালতে অর্পিতাকে তুলে ইডির দাবি, পার্থের ঘনিষ্ঠ মডেল-অভিনেত্রী যথেষ্ট প্রভাবশালী। এসএসসি ও প্রাথমিক টেট-এ নিয়োগ-দুর্নীতির মূল চক্রী তিনি। ডায়মন্ড সিটি সাউথে অর্পিতার ফ্ল্যাট স্কুলে বেআইনি নিয়োগের কেন্দ্রস্থল। সংস্থাটির অভিযোগ, অর্পিতার ফ্ল্যাটে শিক্ষা দফতরের নিয়োগের বিভিন্ন নথি উদ্ধার হয়েছে। এসএসসি, গ্রুপ-ডি ও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের নথি রয়েছে। ইডির প্রশ্ন, এই সব নথি ওই ফ্ল্যাটে এল কী করে?

‘মিনিস্টার ইন-চার্জ এডুকেশন’ লেখা কয়েকটি খালি খামও পাওয়া গেছে। তদন্তকারীদের অনুমান, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে ওই খামে বেআইনি নিয়োগের সুপারিশপত্র পাঠানো হয়েছিল। পরে চলে আসে অর্পিতার ফ্ল্যাটে। ইডি সূত্রের দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের পূর্ণ তালিকা ও পরীক্ষা সংক্রান্ত নথিও অর্পিতা কাছে পাওয়া গেছে।

অর্পিতাকে এক দিনেরইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সোমবার তাঁকে বিশেষ আদালতে তোলার কথা সিবিআই ও ইডির। অর্পিতার কাছ থেকে যে বিদেশি মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে, তা নিয়ে আলাদা মামলার কথা ভাবছে ইডি। কোথা থেকে মুদ্রা পেলেন, তা জানতে চান তদন্তকারীরা। অর্পিতা অবশ্য হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বলেন, আইন আইনের পথে চলবে। আমি কোনও দল করি না। মায়ের খেয়াল রাখবেন।

ইডির কর্মকর্তা মিথিলেশ কুমার মিশ্র আদালতে দাবি করেন, অর্পিতা পার্থের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। অর্পিতার ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মন্ত্রীর। ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার হয়েছে ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। 

পার্থের সঙ্গে অর্পিতার মোবাইল ফোনে প্রায় প্রতিদিনই কথা হতো। মন্ত্রীর বাড়ি থেকে অর্পিতার নামে দলিল ও সংস্থার নথি উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীর দাবি, অর্পিতার কাছ থেকে ছোট কালো ডায়েরি পাওয়া গেছে। ডায়েরির ৩০টি পাতায় বহু তথ্য দুর্নীতি-তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে উঠে এসেছে।

আরো পড়ুন: বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে বজ্রপাত, আহত ১২ শিক্ষক-শিক্ষার্থী

ইডির আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘অর্পিতা অত্যন্ত প্রভাবশালী, মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। বেআইনি নিয়োগে তিনি অন্যতম চক্রী। দুর্নীতি চক্রে আরও প্রভাবশালীরা জড়িত রয়েছেন। তাকে জেরা করে শিকড়ে পৌঁছানো প্রয়োজন। তাই পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হচ্ছে। বৃহত্তর ষড়যন্ত্র খতিয়ে দেখা দরকার।’

১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করেছিল ইডি। তবে অর্পিতার আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য বলেন, অর্পিতা তদন্তে সহযোগিতা করছেন। কোনোভাবেই প্রভাবশালী নন। সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করবেন না, পালিয়েও যাবেন না। বিচারক দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে এক দিনের জন্য ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।