খুন বলছেন পল্লবীর বাবা, প্রেমিকার বাবা বলছেন— এটা আত্মহত্যাই
‘আমি সিরাজের বেগম’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী পল্লবী দের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে হতবাক গোটা টলিপাড়া। শুটিংয়ের সেটে যে মেয়ে এত প্রাণবন্ত, তিনি কেন আত্মহত্যা করলেন— এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন সহ অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা।
পল্লবীর মৃত্যুরহস্য নিয়ে এমন ধোঁয়াশার মাঝে তার বাবা নীলু দের দাবি, মেয়েকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। গত কয়েক মাসে লিভ-ইন সঙ্গীর সঙ্গে পল্লবীর সম্পর্কের টানাপড়েন এবং রবিবারের ঘটনাক্রম দেখে খুন সম্পর্কে তিনি ৯০ শতাংশ নিশ্চিত বলেই জানালেন। যদিও ‘খুনের তত্ত্ব’ মানতে নারাজ পল্লবীর সঙ্গীর পরিবার।
আজ রবিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে কলকাতার গড়ফার ফ্ল্যাটে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় পল্লবীর মরদেহ। তার গলায় জড়ানো ছিল বিছানার চাদর। মেয়ে যে এই ভাবে আত্মহত্যা করতে পারেন, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না নীলু। ঘুণাক্ষরেও টের পাননি পরিবারের কেউই। বাবা বলছেন, ‘মেয়ের চট করে মাথা গরম হওয়ার প্রবণতা ছিল। কিন্তু... তাই বলে!
বলতে বলতেই থেমে যান নীলু। পরক্ষণেই তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। আমি ৯০ শতাংশ নিশ্চিত, মেয়েকে খুন করা হয়েছে।
তার যুক্তি, ‘ও কেন সুইসাইড করবে? নিজে রোজগার করছে। ভাল ভাল কাজ করছে। পরপর সিরিয়াল আসছে। ওর তো আত্মহত্যা করার কোনও কারণ নেই।
পল্লবীর ঠাকুমার মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ছিল আজ। সেখানে পল্লবীর লিভ-ইন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এই কথা জানিয়ে নীলু বলেন , ওদের আজ বাড়িতে আসার কথা ছিল। কী যে হয়ে গেল...।
মাস কয়েক আগেই লিভ-ইন সঙ্গীর সঙ্গে গড়ফার একটি আবাসনে থাকা শুরু করেছিলেন পল্লবী। ওই সঙ্গীই পুলিশকে জানান, দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পল্লবীর মরদেহ তিনিই প্রথম দেখতে পান। এরপরেই তিনি পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেরায় ওই সঙ্গী স্বীকার করেছেন, মৃত্যুর আগের রাতে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল অভিনেত্রীর।
বাবা নীলুও বারবার মেয়ের প্রেমঘটিত জীবনের টানাপড়েনের প্রসঙ্গ টানলেন। সঙ্গীর সঙ্গে পল্লবীর মনোমানিল্যের কথা বলতে গিয়ে নীলু বলেন, দু’জনের মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হত শুনেছি। শুনেছিলাম, অন্য সম্পর্কে জড়িয়েছিল ছেলেটা। এ নিয়ে ওদের মধ্যে অশান্তিও হত। তবে এ বিষয়ে বেশি কিছু জানি না আমরা।
মাস খানেক আগের একটি ঝামেলার কথা পল্লবীর মুখ থেকেই জেনেছিলেন বন্ধু সায়ক চক্রবর্তী। তিনিও জানান, ‘পল্লবী বলেছিল, ওদের মধ্যে কথা বন্ধ। আমি বলেছিলাম, হয় মিটিয়ে নে, নয়তো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আয়। পরে ওদের দেখে মনে হয়েছিল, সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে ছবিও দিয়েছিল ওরা। আজ কী হল বুঝতে পারছি না...।
রবিবারের ঘটনাক্রম দেখে তার মনে যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তা ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন নীলু। তিনি বলেন, সকালে ও (মেয়ের সঙ্গী) ফোন করে বলেছিল, মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। সকালে কী ঘটেছে ওখানে, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা তা জানতে চাই।
তবে পল্লবীর পরিবারের দাবি মানতেই রাজি নন অভিনেত্রীর সঙ্গীর বাবা সুভাষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে, সুইসাইড করেছে। দু’জনেই ভীষণ মাথা গরম করত। ওদের মধ্যে ঝামেলার কথা আগেও শুনেছি। কিন্তু মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে ছেলের ভাল সম্পর্ক ছিল। এ বিষয় নিয়ে বিশদে কিছু বলতে পারব না।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা