করোনার পর ১ কোটিরও বেশি মেয়ে স্কুলে নাও ফিরতে পারে: ইউনিসেফ
জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, নারী-পুরুষের সমতার লড়াই এখনও শেষ হয়নি। কোভিড-১৯ এর আগেও আমাদের সময়ের সবচেয়ে ব্যাপক ও উল্লেখযোগ্য অবিচার হিসেবে লিঙ্গ বৈষম্য ছিল। মহামারির প্রভাবে এই অবিচার আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।
তার মতে, নারী দিবসে আমরা বিশ্বের নারী ও মেয়েদের জন্য আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে স্বীকার করি। আমরা আমাদের সমাজে নারী ও মেয়েদের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো উদযাপন করি।
“ওই অর্জনগুলো যাতে সর্বত্র সব মেয়ের কাছে পৌঁছায় সে জন্য আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি দ্বিগুণ করি। কিন্তু সমতার জন্য লড়াই এখনও শেষ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, করোনার আগেও সবচেয়ে ব্যাপক ও উল্লেখযোগ্য অবিচার হিসেবে লিঙ্গ বৈষম্য টিকে ছিল। মহামারির প্রভাবে এই অবিচার কয়েকগুণ বেড়েছে।”
আরও পড়ুন: দক্ষতা-যোগ্যতা দিয়েই সব সেক্টরে বিচরণ নারীদের
তিনি বলেন, আমরা যখন করোনার প্রাদুর্ভাবের তৃতীয় বছরে প্রবেশ করছি এবং মহামারি পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করছি, সেক্ষেত্রে সত্যিকারের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় অবশ্যই লৈঙ্গিক সমতা থাকতে হবে।
ক্যাথরিন রাসেল বলেন, করোনা মেয়েদের জীবন ধ্বংস করছে। স্কুল বন্ধ, অর্থনৈতিক চাপ এবং পরিষেবার ব্যাঘাত সবচেয়ে অরক্ষিত মেয়েদের স্বাস্থ্য, সামগ্রিক কল্যাণ ও ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মেয়ে মহামারির পরে স্কুলে নাও ফিরতে পারে। আগামী এক দশকে আরও এক কোটি মেয়ে শিশু বিয়ের ঝুঁকিতে আছে। ইউএনএফপিএর মতে, আরও ২০ লাখ নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতির শিকার হতে পারে।
ইউনিসেফের এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, যেহেতু লকডাউন শিশুদের আরও বেশি সময় তাদের বাড়িতে কাটাতে বাধ্য করে, এক্ষেত্রে গৃহস্থালি কাজের বেশিরভাগই মেয়েদের কাঁধে পড়ে। অনেকে তাদের নির্যাতনকারীর সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এবং তাদের সুরক্ষার জন্য সহায়ক এমন সেবা ও কমিউনিটি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকছেন।
যৌন সহিংসতাসহ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মেয়েদের একটি প্রজন্মকে তাদের বাকি জীবনের জন্য এই মহামারির পরিণাম ভোগ করতে দিতে পারি না। আমরা যখন মহামারি পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করছি, তখন মেয়েদের অবশ্যই বৈশ্বিক, জাতীয় এবং স্থানীয় মহামারি মোকাবিলা ও পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: সংগ্রামী নারীদের অনুপ্রেরণা ঢাবির সাবেক শিক্ষিকা রুমানা
এর মানে হলো, মেয়েদের তাদের শিক্ষা পুনরায় শুরু করার সুযোগ দিতে স্কুলগুলো খোলা রাখা। যারা পিছিয়ে পড়েছে তাদের ঘাটতি পূরণে সহায়তা দিতে প্রয়োজনীয় সম্পদের পেছনে বিনিয়োগ করা। অথ্যাৎ মেয়েদের যৌন, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকারসহ শিক্ষায় পুনরায় বিনিয়োগ করা এবং মানসম্মত ঋতুকালীন স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা সেবাগুলো প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুযোগ বাড়ানো।
তিনি আরও বলেন, মেয়েদের ক্ষমতায়ন অগ্রশক্তির চালিকাশক্তি। সারা বিশ্বের মেয়েরা তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার হচ্ছে এবং ঠিক এই ধরনের পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের কথা আমাদের শুনতে হবে। এর ওপর বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে।
আরও পড়ুন: ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ঢাবি ছাত্র জাহিদ, বাঁচাতে আকুতি পরিবারের
সবশেষে তিনি বলেন, আসুন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে করোনা সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় মেয়েদের গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিশ্রুতি দেই। যা মেয়েদের জন্য মহামারি পরবর্তী আরও ন্যায়সঙ্গত ও সমতার একটি বিশ্ব গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। যা আমাদের সবার জন্য আরও উজ্জ্বল, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়তে সহায়তা করবে।