যেসব কারণে চীনে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষায় নতুন এক গন্তব্য চীন। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহজে ভর্তি, আকর্ষণীয় বৃত্তি এবং শিক্ষা শেষে চাকরির সুযোগ - এসব কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন চীন যেতে উৎসুক।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগ পর্যন্ত চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যাওয়া বেড়েছে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, দেশটির ১৩তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০১৬ -২০২০) উচ্চ শিক্ষা প্রসারের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী চীনে বিদেশি শিক্ষার্থী এখন প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখের মতো। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও সুযোগ পাচ্ছে।
জার্মানি-ভিত্তিক অনলাইন পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিসটা বলছে, চীনে যত সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশুনা করছে। বিদেশিদের মধ্যে চীনে সবচেয়ে বেশি পড়াশুনা করছে দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা, যার সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের বেশি। এছাড়া থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, আমেরিকা এবং রাশিয়ার শিক্ষার্থীরাও চীনে পড়াশুনা করছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের পাশে যেসব দেশ রয়েছে সেখান থেকে প্রায় ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী চীনে পড়াশুনা করতে আসছে।
আরও পড়ুন- এইচএসসির পর বিদেশে পড়তে হলে...
স্ট্যাটিসটার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশুনা করছে।
আমেরিকার উইলসন সেন্টারের কিসিঞ্জার ইনিস্টিটিউট অব চায়না এবং দ্য ইউনাইটেড স্টেটস-এ এক বক্তব্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং তার দেশের উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। চীনের প্রেসিডেন্ট ২০১৬ সালে দেয়া সে ভাষণে বলেন, চীনের স্বকীয়তা বজায় রেখে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চায় তারা। তিনি বলেন, পশ্চিমা ধারায় নয়, নিজেদের ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চায় চীন।
চীনে কোন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে গেলে সে রেস্টুরেন্ট, বার কিংবা অন্য কোথায় কাজ করতে পারতো না। এতদিন সে নিয়ম ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাহমান সেজাদ বলেন, এখন থেকে শর্তসাপেক্ষে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। এতে করে অর্থ উপার্জনের নতুন একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
"কেউ যদি রেস্টুরেন্টে কাজ করে তাহলে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশি মুদ্রায় পাঁচ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবে। অর্থাৎ মাসে বিশ হাজার টাকা। এটা দিয়ে ভালো একটা লাইফ লিড করতে পারবে," বলেন মি. সেজাদ।
আরও পড়ুন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা— দমে যাননি ইমরান
চীনের অনেক ইউনিভার্সিটিতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু তারপরেও সেখানে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক চীনা ভাষার কোর্স করতে হয়। তাতে চীনা ভাষায় যোগাযোগ চালিয়ে যাবার দক্ষতা তৈরি হয়। ফলে চীনের কোম্পানিগুলোতে চাকরি পেতে তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। "পৃথিবীর আর কোন দেশ চীনের মতো এতো বিনিয়োগ করছে না। চীন থেকে পড়াশুনা করলে চাইনিজ কোম্পানিগুলোতে কাজের সুবিধা অনেক বেড়ে যায়।" "অনেকে চীনে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করার পর তাদের বাংলাদেশে ট্রান্সফার করা হয়। কারণ, চীনের অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে," বলেন তাহেরা তমা।
শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে চীনের শতশত কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। চীন এবং বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কর্মরত চাইনিজ কোম্পানিগুলোতেও কাজের সুযোগ আছে।
যেভাবে ভর্তির আবেদন করা যায়
বাংলাদেশে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় শতকরা ৬০ শতাংশ নম্বর পেলে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করা যায়। স্কলারশিপের জন্য আরো বেশি নম্বর পেতে হবে। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা এক রকম নয়। চীনের বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা গেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে চীনে পড়াশুনার সুযোগ বেশি।
আরও পড়ুন- রাবিতে বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক ওয়েবিনার
এর মধ্যে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভালো স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন এবং মেডিকেলে পড়ার সুযোগও বেশ ভালো। চীনের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশুনা এবং স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন- বিনামূল্যে বিদেশে শিক্ষার জন্য সেরা ৮ শিক্ষাবৃত্তি
রাহমান সেজাদ বলেন, ইউরোপ এবং আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে আবেদন করতে হয়, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আবেদনের প্রক্রিয়া একই রকম। চীনা ভাষা মোটামুটি জানা থাকলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় খুব একটা বেগ পেতে হয় না বলে উল্লেখ করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। যারা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের তাদের কাজের সুযোগ বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর চাকরি পেতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। তবে পাশ্চাত্যের মতো চীনে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নেই। পড়াশুনা শেষে হলে কিংবা চাকরি না থাকলে দেশে ফিরে আসতে হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা