‘হিজাব বা বোরকা এখন নিপীড়নের প্রতীক’
বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এবার ভারতের হিজাব বিতর্কেও যোগ দিলেন তিনি।
হিজাব, বোরকা ও নেকাবকে নিপীড়নের প্রতীক বলে দাবি করেছেন তসলিমা নাসরিন। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি হিজাবের এই সমালোচনা করেন। এমন সময়ে তলসিমা এই মন্তব্য করলেন যখন ভারত জুড়ে হিজাব নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনা গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত।
এই ইস্যুতে তসলিমাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার অধিকার মানে ধর্মের অধিকার। তবে হিজাব অপরিহার্য কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিতর্কিত এই লেখিকা। বলেন, কিছু মুসলিম মনে করেন যে হিজাব অপরিহার্য এবং কিছু মনে করেন যে হিজাব অপরিহার্য নয়।
কিন্তু হিজাব মূলত সপ্তম শতকে পুরুষতান্ত্রিক মানুষদের দ্বারা প্রবর্তিত একটি পোশাক। সেসময় নারীদের যৌন বস্তু হিসাবে বিবেচনা করা হত। তারা বিশ্বাস করত যে, পুরুষেরা নারীদের দিকে তাকালে পুরুষদের যৌন আকাঙ্ক্ষা হবে। তাই নারীদের হিজাব বা বোরকা পরতে হবে। তাদের পুরুষদের থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমাদের আধুনিক সমাজে, একবিংশ শতাব্দীতে, আমরা শিখেছি যে নারীরা সমান মানুষ। তাই হিজাব বা বোরকা এখন নিপীড়নের প্রতীক। আমি মনে করি, বোরকা নারীদের শুধু যৌন বস্তুতে পরিণত করে।
তসলিমা নাসরিন দাবি করেন, হিজাব বা নিকাব বা বোরখা নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের জন্যও অপমানজনক। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ধর্মের থেকেও শিক্ষা একজন মানুষের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে একটি ধর্মনিরপেক্ষ পোশাক বিধি থাকা উচিত। তসলিমার ভাষায়, একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে স্কুল এবং কলেজগুলিতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ পোশাক বিধি থাকা উচিত। কারণ ধর্মের চেয়ে শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস থাকতে পারে। তারা বাড়িতে বা অন্য কোথাও তা পালন করতে পারে, তবে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন থাকা। সভ্য বিশ্বের সর্বত্র ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা করতে হবে। সেখানে আইন করা হয় সমতার ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। সাক্ষাৎকারে তসলিমা আরও দাবি করেন যে, কারও ধর্ম কখনো তার পরিচয় হওয়া উচিৎ নয়।